‘বেসরকারি একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জাল কিনছি। প্রতি সপ্তাহে চার হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। এ জাল আর নৌকাই মোগো সম্বল। মাছ ধরেই সংসার চালাই। আগে ১৬০ কেজি চাল আসত। এ্যাহন হুনি আইতে দেরি হবে। পেট তো দেরি মানে না।’ কথাগুলো বলেন বাউফল উপজেলার ধুলিয়া এলাকার জেলে আবুল রাঢ়ী ও সহিদ খাঁ। তারা আরও বলেন, সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়; কিন্তু কাজ বা খাওনের ব্যবস্থা করে না। বাধ্য হয়ে নদীতে জাল পাতি। আর তখনই জেল-জরিমানা করে। বউ, পোলা, মাইয়া নিয়া কি খামু।’
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের জেলে রুহুল আমিন বলেন, নদীতে এমনিতেই মাছের আকাল। তার পরে যা পাওয়া যেত তা দিয়ে ধারদেনা করে সংসার মোটামুটি চলে যেত। ভাবছিলাম, সরকারি খাদ্য সহায়তা পেলে পরিবার নিয়ে কোনোভাবে কাটিয়ে দেব। কিন্তু কোনো আশাই পূরণ হয় না। 
দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে পাঁচটি অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। বাউফলের চররুস্তম থেকে ভোলা জেলার চরভেদুরিয়া পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকা এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এ উপজেলায় মৎস্য অফিসের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬ হাজার ৫২১। বেসরকারিভাবে এ সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এসব জেলে প্রতিবছর এ সময়ে চার কিস্তিতে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল পেয়ে থাকেন। কিন্তু এবার নিষেধাজ্ঞা জারির ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা আসেনি। নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর প্রথমে জেলেরা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু ১৫ দিনেও খাদ্য সহায়তা না পেয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে জাটকা নিধন করছেন তারা। এসব জাটকা বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, গলাচিপা, দশমিনা, রাঙ্গাবালীর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কাশিপুর, বগা ফেরিঘাট, যাত্রীবাহী বাসে করে জাটকা পরিবহন করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছেন। সম্প্রতি ডলফিন নামে একটি বাস থেকে বেশ কিছু জাটকা জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কেশবপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শাহজাহান জানান, অধিকাংশ জেলে ধারদেনা ও ঋণের কিস্তিতে জর্জরিত। তাদের আয় শুধু নদীর মাছ শিকার। এখন নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।
বাউফল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, জেলেদের খাদ্য সহায়তা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরে ১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

দিনাজপুরে ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পরিবারসহ পালিয়ে গেছেন। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতের বিচার দাবি করেছেন পরিবার ও স্থানীয়রা। রোববার দুপুরে ঘটনার পর বিরল ও কোতয়ালী উভয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জানা যায়, রোববার দুপুরের দিকে দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা নামক এলাকার ৩ শিশুকন্যা বাড়ীর পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের মাঝখানে যায়। এ সময় একই এলাকার এক ব্যক্তি ১১ বছর বয়সী এক শিশুকন্যাকে পার্শ্ববর্তী নদীর স্লুইচগেটের নিচে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই শিশুকন্যার সঙ্গে যাওয়া দুই খেলার সাথী চিৎকার শুরু করলে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে এলাকাবাসীর জটলা সৃষ্টি হয়। পরে সেটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু এরইমধ্যে কোতয়ালী থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এ সময় ওই অভিযুক্তের তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেন স্থানীয়রা।
 
শিশুটির বাবা জানান, কৃষিকাজ থেকে এসে তার মেয়ের শরীরে হাত দেওয়ার কথা শুনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মারতে যান। সম্পর্কে খালু শ্বশুর হওয়ায় স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাকে বলে। তবে এখন আমি চাই, আইন যেভাবে বলে সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।
 
শিশুটির মা জানান, আমার মেয়ের সঙ্গে যাওয়া দুই জন শিশু আমাকে জানিয়েছে যে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে দাদা হওয়ায় ব্রিজের পাড়ে যেতে বলে। মেয়েটা যাওয়ার পর তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। ওই সময় ওই দুই মেয়ে চিৎকার শুরু করে।
 
সদর উপজেলার ১নং চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) পাভেল ইমরান বলেন, এমন সালিশের কোনো বিধান নেই। আমি পুরো ঘটনা এখনও জানি না, দুই পক্ষের কাছেই শুনছি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করছি। 

ঘটনার পর ওই এলাকায় যান কোতয়ালী ও বিরল থানা পুলিশ। তবে যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেটি বিরল থানাধীন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানাতে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। 

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে ধারণা করা হচ্ছে শ্লীলতাহানি। ঘটনাস্থল বিরল থানাধীন হওয়ায় তাদের বিরল থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। 

বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছবুর জানান, এই ঘটনায় রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিরল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে ভিকটিমের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ