এবার এসএসসি-সমমানে পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার, কমেছে প্রায় ১ লাখ
Published: 16th, March 2025 GMT
এবার বেশিসংখ্যা ছাত্রী পরীক্ষার্থী নিয়ে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।
রবিবার (১৬ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে এই তথ্য তুলে ধরে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
আরো পড়ুন:
মাদারীপুরে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে মানববন্ধন
প্রাইভেট ও কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি
এবারের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। গতবার ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী। সে হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৯৫ হাজার ৯১১ জন।
অবশ্য পরীক্ষার্থী কমার ধারা দুই বছর অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী কমেছিল ৪৮ হাজার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন, ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন, ছাত্রী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি, প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন, ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা-ওয়ালার স্বপ্ন
আমি পেশায় চা–বিক্রেতা। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আমার পড়াশোনার ইতি ঘটে মাধ্যমিকে। তিন ভাই আর তিন বোনের মধ্যে আমি
পঞ্চম। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আর দুই ভাই বিয়ে করে অন্যত্র সংসার করছেন। তবু আট সদস্যের এই বিশাল পরিবারের
বেশির ভাগ নির্ভর করত বাবার আয়ের ওপর। বাবা ছিলেন সবজি বিক্রেতা। গৌরীপুর শহরের অলিগলিতে ফেরি করে তিনি সবজি বিক্রি করতেন।
পড়াশোনায় ইতি ঘটলে আমি হাল ধরি পরিবারের। ২০১০ সালে গৌরীপুর পৌর শহরে একটি মুদিদোকানে দৈনিক ১০০ টাকা বেতনে কাজ নিই। এক বছর মুদিদোকান থেকে আশানুরূপ বেতন না পাওয়ায় সেখান থেকে সরে আসি। পরে গৌরীপুর পৌর শহরের কালীখলা এলাকায় আমার মামার জালাল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করি সেই ১০০ টাকা বেতনেই। সেখানেও বেশ কয়েক মাস কাজ করার পর পারিশ্রমিক ঠিকমতো না পাওয়ায় চলে আসি।
ওই হোটেলের বারান্দায় একটা চায়ের দোকান দেওয়ার স্বপ্ন দেখি। মাসে ৬০০ টাকা ভাড়ায় ২০১২ সালের শেষ দিকে হোটেলটির বারান্দায় হারুন টি হাউসের যাত্রা শুরু হয়। চায়ের দোকানটি আলাদা পরিচিতি লাভ করে। দোকানটিতে চা–প্রেমীর ভিড় লেগেই থাকত। কারণ, আমি গরুর খাঁটি দুধের চা বিক্রি করতাম। যে কারণে নানা সময়ে হোটেলটির মালিকের কটুকথাও সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। চায়ের দোকানে ভিড়ের কারণে হোটেলে বেচাকেনায় সমস্যা হচ্ছে—এই ছিল তাঁর কথা। দোকান ছেড়ে দিতে চাপ দেন তিনি।
তবু হাল না ছেড়ে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করি। চায়ের দোকানটি না ছেড়ে গরুর দুধের চা বিক্রি করা বন্ধ করে দিই। কমে যায় চা–প্রেমীদের ভিড়। এতে মনোমালিন্য বন্ধ হয় হোটেলের মালিকের সঙ্গে।
চা বিক্রির পাশাপাশি একসময় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসিতে ভর্তি হই। ২০২১ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করি। আমার চা বিক্রি চলতে থাকে।
চা বিক্রি, পড়াশোনা, পরিবারের দেখভাল করার পাশাপাশি শতাধিক বই নিয়ে ২০২৩ সালে একই হোটেলের বারান্দায় হারুন পাঠাগার নামে আমার এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু করি। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের প্রশংসাও করেন অনেকে। বাংলাদেশের প্রথম সারির সব গণমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়। দোকানে নিয়মিত চা খেতে আসা গ্রাহকদের প্রতিবছর বর্ষসেরা চা–প্রেমী সম্মাননা দিই ২০১৭ সাল থেকে। চা বিক্রির পাশাপাশি এই কাজও ব্যতিক্রম হওয়ায় আলোচিত হই।
মানুষকে বইমুখী করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া আমার পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দেড় হাজার। পাঠক বেড়ে হয়েছে তিন শতাধিক।
২০২৩ সালের জুন মাসে বাবাকে হারাই। মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যু হয় তাঁর। সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার কাঁধে।
মা আর ছোট বোনকে নিয়ে তিনজনের সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল চায়ের দোকানটি। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ওই জায়গায় থাকা চারটি প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেন জায়গার মালিক। যে কারণে দেড় হাজার বই আর চায়ের দোকানটি নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই।
বইগুলো নিরাপদে রাখার জন্য একাধিক মানুষের শরণাপন্ন হই; কিন্তু কেউ জায়গা দিতে সম্মত হননি। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেন গৌরীপুর কালীখলা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শংকর ঘোষ। তিনি মন্দিরের পাশে একটি ঘরে পাঠাগারটি পরিচালনার সুযোগ দেন; কিন্তু চায়ের দোকানটি শুরু করতে পারিনি। এখন শুধু বই আর পত্রিকা পড়েই সময় কাটছে আমার।
ছোট বোন বর্তমানে গৌরীপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। একজন চা–বিক্রেতা হিসেবে জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তবু আশা রাখি এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।