ভবদহ অঞ্চলে নদী অববাহিকাভিত্তিক টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি
Published: 16th, March 2025 GMT
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা উপজেলা জলাবদ্ধতায় ধুঁকছে অনেক বছর ধরে। এর সমাধানে বারবার নেওয়া ‘ভুল প্রকল্প’ শুধু রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকারই অপচয় করেনি; বাড়িয়েছে ভুক্তভোগীদের কষ্টের দিন। ভবদহে জলাবদ্ধতায় চরম কষ্টে থাকা মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমকালের সভাকক্ষে ‘ভবদহ জলাবদ্ধতা-দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং সমাধানের পথ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সমকাল’ ও ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)’ যৌথভাবে এর আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ‘পানি অধিকার ফোরাম’।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ভবদহের এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এর সমাধান একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক হতে হবে। মাসের পর মাস মানুষ বুকপানিতে থাকবে, আর আমরা বলব যে, কিছু করার নেই– এটা হতে পারে না। বেশি দেরি হয়েছে বলে এখন বাধাটাও বেশি আসছে। সেই ২০০৭-০৮ সালেই যদি টিআরএম করা হতো, তাহলে আজ এত মানুষ সংগঠিত হয়ে টিআরএমের বিরোধিতা করতে পারত না। নদী খনন, নদী খননের সঙ্গে টিআরএম করা, উজানের সঙ্গে সংযোগসহ নানা ধরনের পরামর্শ আসছে। কিন্তু এই সমাধানগুলো গুরুতর। সমাধান এত সহজ নয় যে, একটা স্লুইসগেট খুলে দিলে কিংবা খাল খনন অথবা টিআরএম করলেই হবে। যদি টিআরএমকে সমাধান হিসেবে ধরাও হয়, তাহলে অনেক মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ জমির মালিক নয়। আবার কেউ বেশি জমির মালিক, কেউ কম জমির। ফলে কেউ বেশি টাকা পাবেন, আবার কেউ কম টাকা পাবেন। আবার কেউ ভূমিহীন, দিনমজুর। তারা সরকারের প্রচলিত আইনে কোনো টাকা পাবেন না।
জলাবদ্ধতার আশু কোনো মুক্তি নেই। তবে দুই-তিন বছরের মধ্যে মুক্তি দেওয়া যাবে না– এটা আমি মনে করি না। ভূমি, কৃষি, মৎস্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে হয়তো একটা বিলে টিআরএম করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব। এই কমিটিতে প্রকৌশলী এবং প্রান্তিক বিশেষজ্ঞদেরও রাখা যেতে পারে। তাদের নিয়ে টিআরএমের কাজ শুরু করতে হবে। আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে রাজারহাট খালের সংযোগ করতে হবে, বলেছেন আপনারা। আমরা সেটা করব। এই মুহূর্তে যেটা জরুরিভাবে করতে হবে সেটা হলো দ্রুত এই চার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নিয়ে একটি মিটিং করা। ইপিজেড যেন কোনো অবস্থাতেই তাদের খালের সংযোগ আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে করতে না পারে, সে জন্য যশোরের ডিসিকে ইমিডিয়েটলি নির্দেশনা দিতে হবে।
খুশী কবির
ভবদহ এলাকায় প্রযুক্তিগত সমাধান প্রয়োজন। সঠিকভাবে একটা স্বাধীন গবেষণা করা উচিত; ফরমায়েশি গবেষণা নয়। এর সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণটা প্রয়োজন। মতের পার্থক্য থাকবে। তবে সবার কথা নিয়ে একটা ঐকমত্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য গৃহীত প্রকল্পে ভূমি, কৃষি, মৎস্য, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। টেকনিক্যাল এক্সপার্টদেরও যুক্ত করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হয়েছে। নদী প্রবাহের পরিবর্তন হয়েছে। টিআরএমের কথাও আসছে। যাই-ই করা হোক না কেন; পুরোটাই যেন সার্বিকভাবে হয়। সবাই যেন এটা গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু নাও করতে পারে, সে ক্ষেত্রে যেন বাস্তবায়নের একটা রূপরেখা দেয়। পরবর্তী সরকার যেন সেটা বাস্তবায়ন করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে এখন আমাদের ইমিডিয়েট অ্যাকশন নিতে হবে ভবদহের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে।
আবু সাঈদ খান
ভবদহের সমস্যাটা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এখানে মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়েই সংকটাপন্ন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে অনেক লেখালেখি হয়েছে, গবেষণা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সারাদেশই পরিচিত। কিন্তু সমস্যার সমাধানটা হচ্ছে না। এর থেকে উত্তরণ খুব জরুরি। এই এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ সমস্যা কেবল ওই অঞ্চলেরই নয়, বরং এটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা এই জাতির জন্য চ্যালেঞ্জ। সামগ্রিকভাবে জনগণের উপকারের জন্য এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য কিছু স্বল্পমেয়াদি এবং মধ্যমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। এটাই সংগত হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে সরকার পরিবর্তনও হতে পারে। কিন্তু প্রকল্পের যেন পরিবর্তন না হয়– এই নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। নইলে কোনো ধরনের লাভ হবে না।
ড.
আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, আমরা যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করি, সেগুলোর বেশির ভাগই প্রয়োজনভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি এবং সমন্বিত প্রকল্প হিসেবে তৈরি হয় না। এর পরিবর্তে কিছু প্রকল্পে শুধু ফরমায়েশি বা পৃষ্ঠগত ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করা হয়, যার মাধ্যমে প্রকল্পের প্রকৃত সম্ভাবনা এবং চাহিদা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।
এ ব্যবস্থায় প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন এবং তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরী হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের গবেষণা এবং প্রকল্প পরিকল্পনা দুটির আলাদা প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। গবেষণা হওয়া উচিত স্বাধীন। প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো পুনরায় দেখা এবং সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে।
জলাবদ্ধ এলাকার পানিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই জমা পানি নদীতে ফেলে সাগরে না পাঠিয়ে বরং এর লবণাক্ততা দূর করে সেটাকে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর একটা অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে যেসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়, সেগুলোর সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে একটা স্বাধীন গবেষণা করে প্রয়োজনের ভিত্তিতে মহাপরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিতভাবে এগোতে হবে।
নাজমুল আহসান
বিগত বছরগুলোর চেয়ে গত বছর দুর্যোগ বেশি হয়েছে। অতিবৃষ্টিও হয়েছে। ২০২২ সালে যশোর এলাকায় ৯৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৪৫৭.৩০ মিলিমিটার। আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও অতিবৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরে বৃষ্টিপাত এত বেশি ছিল; ভবদহ এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ওই এলাকায় হরি ও টেকা নদী খননের কাজ চলছে। কেশবপুরের অংশেও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ চলছে। সেখানে পানি নামছে। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পুরো ভবদহ এলাকাসহ এর আশপাশের এলাকা নিয়ে একটা গবেষণা প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। রিপোর্ট পেলে বড় আকারের প্রকল্প নেওয়া হবে। এটা হতে পারে টিআরএম কিংবা এর বিকল্প অন্য কিছু অথবা একাধিক সমাধান হাতে নেওয়া হতে পারে। শোলমারীতে আমরা আরেক ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের মূল সমস্যা হলো ওপর থেকে পানি না আসা। এটা হলে আমাদের নদীগুলোর এ অবস্থা হয়তো হতো না। কুষ্টিয়ার মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে পানি আসার কথা থাকলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে গঙ্গা ব্যারাজ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে পানি ‘ডাইভার্ট’ করার একটা সুযোগ আছে। এ বিষয়ে সামনের দিনে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভাবা যেতে পারে।
রওশন জাহান মনি
একটা সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। ভবদহ অঞ্চলের সমস্যার পরিবর্তিত রূপ এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষতিও অনেকটা স্পষ্ট। বিভিন্ন সময় এ সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি শুনলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা জনতান্ত্রিক সরকার এসেছে। সে কারণে মানুষের আবার আশা ফিরে এসেছে। প্রাকৃতিকভাবেই এই সমস্যা সমাধানের দাবি এসেছে। আমরা আশা করছি, এ পরিস্থিতির একটা নিরসন হবে। কেননা, ভবদহের এ পরিস্থিতি কেবল আঞ্চলিক নয়; জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত ।
জিয়া হায়দার চৌধুরী
ভবদহ এলাকায় ১৮ হাজারের বেশি চিংড়ি ঘের আছে। এসব এলাকায় আগে কোনো ঘের ছিল না। যখন এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তখন সেখানকার মানুষের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এর পর সেখানে চিংড়ি এবং মাছের ঘের করা শুরু হয়। সাধারণ মানুষই এই ঘের শুরু করে। লাভ দেখে প্রভাবশালীরাও ঘের করা শুরু করে। ২০১৯ সালে একটা ঘের ব্যবস্থাপনা নীতিমালাও করা হয়েছে। নীতিমালায় নদী, খাল বা বিলে ঘের করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। কেননা, কোনো আইন নেই। এ জন্য এই নীতিমালাকে আইন বা বিধিতে পরিণত করতে হবে। একই সঙ্গে এই ঘেরের সঙ্গে জড়িতদের ক্ষতি না করে টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে। লিজ প্রথা বাতিল করতে হবে। হাওরের জন্য যেমন হাওর বোর্ড আছে; ভবদহ অঞ্চলের জন্যও একটি ইউনিক বডি থাকলে ভালো হয়।
শেখ রোকন
ভবদহ অঞ্চলের সমস্যাটা মনে হয় ভাটির দিক থেকে আসছে। এ জন্য মাথাভাঙ্গা নদীর মুখটা খনন করতে হবে। এটা হলো অর্ধেক চিত্র। বাকি সমস্যা হলো, উজান থেকে পর্যাপ্ত পানি আসছে না। যদি সেটা আসত, তাহলে পলিগুলো ধুয়ে যেত। তাহলে লোকায়ত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো। মাথাভাঙ্গা নদীটা সীমান্ত নদী। পদ্মার যে অংশটায় মাথাভাঙ্গা নদী আছে, সেটাকে অল্পতেই পদ্মার সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব।
শামসুল হুদা
গত ৪০ বছর ধরে এ সমস্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়টায় যশোর, খুলনা এবং সাতক্ষীরা জেলার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, শিক্ষাব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু সমাধান নিয়ে আলোচনা করলে হবে না। বরং ক্ষয়ক্ষতিও নিরূপণ করা প্রয়োজন। সব ক্ষতি নিরূপণ করা যদিও সম্ভব নয়, এর পরও চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে এ ক্ষতির কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে। বিভিন্ন পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়নই নয়; যেখানে অর্থের অপচয় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে, সেটাও বের করতে হবে। এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য এ সরকারের আমলেই অন্তত একটা গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
সানজিদা খান রিপা
ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: ভবদহ স্লুইসগেটের কাছে হরি নদী খনন করার যন্ত্র দুটি থেকে বৃদ্ধি করে চারটি করা; ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শোলগাতী পর্যন্ত নদীতে একটা চ্যানেল করে জরুরি ভিত্তিতে পানি সরানো; আমডাঙ্গা খালের পাশে গড়ে ওঠা মজুমদার অটোরাইস মিল সরিয়ে দিয়ে খালটির সোজাসুজি সংযোগ তৈরি করা ইত্যাদি।
মধ্যমেয়াদি সুপারিশ: ভবদহের বিলগুলোর সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ স্থাপন করতে হলে আমডাঙ্গা খালের গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা; মহাকাল এলাকায় অবস্থিত আমডাঙ্গা খালের ৬-ভেন্টের স্লুইসগেটটি ভেঙে ফেলা, ইপিজেডের কারখানার কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য খননকৃত খালটি আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে যেন সংযুক্ত না করা হয়, আমডাঙ্গা খালের সংকুচিত অংশে বসতবাড়ির ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে পোল্ডারের অভ্যন্তরে আবদ্ধ নদীগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ ও বিল ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা; ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা, মুক্তেশ্বরী, হরি, শ্রী, আপার ভদ্রা, হরিহর ও ঘ্যাঙরাইল নদীর অবাধ সংযোগ তৈরি করে প্রবহমান রাখার জন্য নদী খনন ও পলি ব্যবস্থাপনা করা; প্রতিটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বিলগুলোয় পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়ন করা; নদী, খাল, বিল ও অন্যান্য জলাশয়ের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা প্রদান সম্পূর্ণরূপে বাতিল এবং সুশীল সমাজ, স্থানীয় পরিষদ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন করা প্রয়োজন।
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার
ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিবেশ ও কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে হবে। বাস্তুতন্ত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া শস্য ও মৎস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাব। এ তিনটি ক্ষেত্রকে সমন্বিত করে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা যায়।
ড. মোহন কুমার দাশ
স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক সমাধান সম্ভব। রিমোট সেনসিং এবং জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলাবদ্ধতার বিস্তৃতি, ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং পানি নিষ্কাশনের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হবে। এ অঞ্চল নিয়ে উল্লেখযোগ্য বেজলাইন স্টাডির সংখ্যা অপ্রতুল এবং বর্তমান গবেষণা সীমিত।
ডিজিটাল এলিভেশন মডেল, লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং ও ফিল্ড সার্ভের সমন্বয়ে উচ্চতা ও পানি নিষ্কাশন পথের অধিকতর সঠিক মডেলিং করা সম্ভব। স্যাটেলাইট ও গাণিতিক মডেলভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবহার করে অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার ঝুঁকি নিরূপণ করা সম্ভব, যা আগাম প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পূর্বাভাস মডেল প্রয়োগ করে ভবিষ্যৎ জলাবদ্ধতার প্রবণতা নির্ধারণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। লেন্ডস্যাট, সেন্টিন্যাল এবং উচ্চ রেজুলিউশনের বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে নদী, খাল ও জলাধারের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
এখন গুগল আর্থ ইঞ্জিন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি উন্নত নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নির্ধারণ করতে হবে। সঠিক বাস্তবায়নের জন্য স্পারসো, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নোয়ামি, বুয়েটের আইডব্লিউএফএম, আবহাওয়া বিভাগ, সিইজিআইএস, আইডব্লিউএম এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
একেএম মাসুদ আলী
আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন একটা শক্তিশালী আইন। এ আইনের অনুচ্ছেদ ১০-এর আলোকে কোনো এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় রোধে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ও এ আইনের ১৫-এর ১ ধারায় বলা আছে। আমাদের যে আকাঙ্ক্ষাগুলো আছে, যে কোনো আইনের মধ্যেই তার প্রতিচ্ছবি রয়েছে। এ আইনের ১৬ ধারায় পরিবেশ অপরাধকে শনাক্তের বিষয়ে বলা আছে। এটি দেখা যেতে পারে। একটা আইনি নিরীক্ষা সমস্যার সমাধান হতে পারে। পানি আইনের অনুচ্ছেদ ৪-এ নদীতে নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করার এখতিয়ার দেওয়া আছে। পরিবেশ আইন ও পরিবেশ দৃষ্টিতে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের সব অংশকে এক করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। জলাবদ্ধতা সমস্যাকে পরিবেশ বিপর্যয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। যেখানে মানবিক বিপর্যয় চূড়ান্ত, সেখানে যে কোনো একটা আইনের প্রাধান্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়কে এক করার উদ্যোগ না থাকলে বিপর্যয় ঘনীভূত হয়। ভবদহ তারই একটা উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া– এই তিনটি জেলা নিয়ে একটা প্রকল্পের পরিচালক ছিলাম আমি। এ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল না। কিন্তু আমি যোগদানের দুই মাস পর ওই এলাকার এক ব্যক্তি নিজ হাতে নকশা এঁকে এনে সেখানকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। আমি জলাবদ্ধতার জায়গাগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করি। আমি দেখলাম, খাল খনন ও ‘হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার’ করলে এই জলাবদ্ধতা দূর হবে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ মানবসৃষ্ট। খালগুলো বেদখল ছিল। মানুষের সঙ্গে মিশলে তারা সহায়তা করেন। আমি প্রশাসনের কোনো ধরনের সাহায্য ছাড়াই পাকা বাড়ি ভেঙে খাল উদ্ধার করেছি। মানুষ জমিও দিয়েছিল খাল খনন করতে। এর মাধ্যমে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে পেরেছিলাম। আরও ২৯টি স্পটে আমি জলাবদ্ধতা দূর করতে পেরেছিলাম ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ পাইপলাইন’-এর মাধ্যমে। যেসব জমিতে বাড়ি করা হয়েছে, সেসব জায়গায় এটি করা হয়েছে। এক দিনে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে কাজ করতে হবে। যেটা করা হবে, তাতে যেন ভবিষ্যতে আর হাত দেওয়া না লাগে।
মাহফুজুর রহমান মুকুল
যতক্ষণ টিআরএম বাস্তবায়ন করা না যাবে, ততক্ষণ বিলের পানি পাম্পিং করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় বাড়াতে হবে। দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড একটা কাজ করছে, সেটা কৃষি অধিদপ্তর জানে না অথবা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর জানে না। এই সমন্বয় বাড়াতে হবে। ভবদহের সমস্যা ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যাকে অনেকে অনেক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
মো. আব্দুল্লাহ আল রশিদ
ভবদহ এলাকায় স্বল্প মেয়াদে জলাবদ্ধতা দূর করতে পাম্প ব্যবহার করি আমরা। ওই এলাকায় বেশির ভাগ পাম্পই বিএডিসির। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে স্লুইসগেটেও পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। এ বিষয়ে যদি পল্লী বিদ্যুৎকে একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাহলে এ বিলটা কম আসবে। ভবদহ এলাকার জন্য আলাদা কোনো বডি তৈরি করা যেতে পারে। তারা পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করবে। টিআরএম বিষয়ে মানুষকে বোঝাবে। এ উদ্যোগ অনেকটা কার্যকর হবে। ভবদহ এলাকা নিচের দিকে। ভূমি গঠনের আগেই এখানে পোল্ডার করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য এলাকার ভূমি গঠন হলেও ভবদহ এলাকায় হয়নি। এ কারণে আমাদের টিআরএম লাগবেই।
মোতলেব সরকার
যেসব নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ৩টি অববাহিকার নদী ও বিলগুলো দখলমুক্ত করে খনন করতে হবে। সেগুলো কম খরচে করা যায়। ভবদহ, বিল ডাকাতিয়াসহ যেসব এলাকায় এ সমস্যা রয়েছে, প্রতিটি এলাকায় খননকাজ চালাতে হবে। এসব এলাকায় ভূমিদস্যুরা বিল, খাল ও নদী দখল করে নিয়েছে। সেগুলোকে সিএস পর্চা অনুযায়ী উদ্ধার করতে হবে এবং খনন করে সবার সঙ্গে সংযুক্ত করে পানি প্রবাহের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ সরদার
এখনও মানুষের উঠোনে পানি আছে। পানি দ্রুতগতিতে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তঃনদীগুলোর সংযোগ তৈরি করতে হবে। এ অঞ্চলের প্রভাবশালীরা বিলের খাসজমি দখল করে চিংড়ি ঘের তৈরি করে ব্যবসা করছে। প্রায় ১৮ হাজার ঘের রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে দুটি ঘেরের পাড়ের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ ফুট জায়গা রাখার নিয়ম থাকলেও তারা সেটি মানছে না। ঘের রেখে ভবদহের জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। তাই ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে।
প্রকাশ চন্দ্র
টিআরএমের চিন্তা মাথায় রেখেই নদী খনন করতে হবে। এর বাইরে নদী খনন করে টাকা অপচয় করার কোনো দরকার নেই। আমডাঙ্গা খালকে দ্রুত খনন করে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। এ ছাড়া ভবদহ এলাকার একটা বিল এলাকায় একটা ইপিজেড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে ইপিজেডের খালের একটা সংযোগ করা হচ্ছে। এর ফলে নতুন একটা বিপদ আসছে। এটা বন্ধ করতে হবে।
গীতা রানী কুণ্ডু
ভবদহ এলাকায় পানির কারণে শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে, মাদকের হার বাড়ছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে পারিবারিক সমস্যা থেকে শুরু করে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। এই এলাকায় কেউ আত্মীয়তাও করে না জলাবদ্ধতার কারণে।
মাধব চন্দ্র
সাতক্ষীরায় দুটি বড় নদীতে খনন হয়েছে। এর সঙ্গে ৭২টি খালও খনন করা হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতা কেটে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ পানি প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে আন্তঃনদী প্রবাহ নেই। একমুখী স্রোতের ফলে পলি এলেও তার অবক্ষেপণ হবে না। ফলে জলাবদ্ধতা আবার হবে। আবারও নদী ভরাট হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, নদীকে কেটে খাল তৈরি করা হচ্ছে। নদীর পূর্বের প্রশস্ততা কমিয়ে নদীর মধ্যেই মাটি ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী ছোট হয়ে যাচ্ছে। নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ইছামতীর শাখা গেট দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই গেট খুলে দিতে হবে। তা না হলে নদী-খাল খননের সুফল ভোগ করা যাবে না।
বিকাশ চন্দ্র মল্লিক
বর্ষাকালের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এই মুহূর্তে অন্ততপক্ষে আমডাঙ্গা খালকে পুরোপুরি খনন করা কয়েক মাসের মধ্যে সম্ভব নয়। যদিও আমডাঙ্গার পিচের রাস্তার ওপর ছয়টি গেট রয়েছে; বর্ষার আগেই এ গেটগুলোর সামনে থেকে ভৈরব নদ পর্যন্ত গভীরভাবে খনন করে ইউডি লাইন করে দিলে বাড়িঘরের ক্ষতি হবে না। পানিও অপসারণ করা সম্ভব। একই সঙ্গে অন্তত ২০টি বিলে ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বাবর আলী গোলদার
এরশাদ আমল থেকে এখানে নদী খনন হচ্ছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে নদী খনন সমস্যা-সমাধানের কোনো উপায় নয়। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন হয়েছে। কিন্তু এখন জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করতে হবে। জলাবদ্ধতা সমাধানের মূল লক্ষ্য টিআরএম প্রযুক্তি বাস্তবায়ন। টিআরএম প্রকল্পের সুফল আগেও মানুষ পেয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে নদী অববাহিকাভিত্তিক টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে সহজ শর্তে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোয় আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় প্রয়োজন।
তপন মণ্ডল
কপালিয়া বিলে টিআরএমের পরিকল্পনা ২০১২-১৩ সালে করা হয়েছিল। এর কার্যক্রমও চলছিল। কিন্তু এক দল স্বার্থান্বেষী সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। এখন সেখানে পুনরায় টিআরএম পরিকল্পনা করা হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সহজ শর্তে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাহলে এলাকার মানুষ রাজি হবে। এর আগে নদীর নাব্য ও প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। বিল কপালিয়ায় দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন করা প্রয়োজন। তাহলে সেখানে ঘের ও মৎস্য চাষ করে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।
সুপারিশ
প্রতিটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বিলগুলোয় পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়ন করা।
ইজারা প্রদান সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা।
পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দ্রুত পানি কমানোর ব্যবস্থা করা।
ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শোলগাতী পর্যন্ত নদীতে চ্যানেল করে জরুরি ভিত্তিতে পানি সরানো।
আমডাঙ্গা খালের পাশে গড়ে ওঠা মজুমদার অটোরাইস মিল সরিয়ে খালটির সোজাসুজি সংযোগ তৈরি করা। খালটির গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা। আমডাঙ্গা খালের ৬-ভেন্টের স্লুইসগেটটি ভেঙে ফেলা।
পোল্ডারের অভ্যন্তরে আবদ্ধ নদগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ ও বিল ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা।
ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা, মুক্তেশ্বরী, হরি, শ্রী, আপার ভদ্রা, হরিহর ও ঘ্যাঙরাইল নদীর সংযোগ তৈরি করে প্রবহমান রাখার জন্য নদী খনন ও পলি ব্যবস্থাপনা করা।
ভবদহের জলাবদ্ধতা সমাধানে সুশীল সমাজ, স্থানীয় পরিষদ, প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাসহ অংশীজনকে নিয়ে স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন করা।
প্রধান অতিথি
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
উপদেষ্টা, পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়
সভাপতি
খুশী কবির
চেয়ারপারসন
এএলআরডি ও সমন্বয়ক, নিজেরা করি
সূচনা বক্তব্য
আবু সাঈদ খান
উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল
প্রেক্ষাপট উপস্থাপন
রওশন জাহান মনি
উপ-নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
আলোচক
ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান
সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়
নাজমুল আহসান
সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
জিয়া হায়দার চৌধুরী
অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর
শামসুল হুদা
নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার
পরিচালক, জাতীয় চিড়িয়াখানা
ড. মোহন কুমার দাশ
নির্বাহী পরিচালক, ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড ম্যারিটাইম ইনস্টিটিউট (নোয়ামি)
একেএম মাসুদ আলী
নির্বাহী পরিচালক, ইনসিডিন বাংলাদেশ
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, কৃষি মন্ত্রণালয়
মো. আব্দুল্লাহ আল রশিদ
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), যশোর
মাহফুজুর রহমান মুকুল
খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী, বেলা
মোতলেব সরকার
নির্বাহী পরিচালক
প্রগতি সমাজকল্যাণ সংস্থা, যশোর
প্রকাশ চন্দ্র
নির্বাহী পরিচালক, দ্বীপশিখা
গীতা রানী কুণ্ডু
নির্বাহী পরিচালক, জুঁই নারী উন্নয়ন সংস্থা, যশোর
মাধব চন্দ্র
নির্বাহী পরিচালক, স্বদেশ সাতক্ষীরা
বিকাশ চন্দ্র মল্লিক
সাবেক চেয়ারম্যান, আমডাঙ্গা ইউনিয়ন
বাবর আলী গোলদার
পরিচালক, পাঁজিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা, যশোর
তপন মণ্ডল
ভবদহ এলাকার বাসিন্দা
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন
সানজিদা খান রিপা
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এএলআরডি
সঞ্চালনা
শেখ রোকন
সহযোগী সম্পাদক, সমকাল
অনুলিখন
মাজহারুল ইসলাম রবিন
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সমকাল
আলোকিচিত্রী
হাসান জাকির
মামুনুর রশিদ, সমকাল
সমন্বয়
হাসান জাকির
হেড অব ইভেন্টস, সমকাল
রফিকুল ইসলাম
প্রোগ্রাম অফিসার (অ্যাডভোকেসি), এএলআরডি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ব যবস থ ব যবহ র কর স ল ইসগ ট প রকল প র ট আরএম র ট আরএম ক ট আরএম প খনন করত ম হ ম মদ অন য ন য পর স থ ত র রহম ন ল ইসল ম এ সমস য র সমস য সমস য র সমন ব ত ক র যকর খ ল খনন ভবদহ র নদ র স পর য য় এ জন য আম দ র ন ত নদ স বল প দ র কর পর ব শ ক ত কর প রব হ র জন য এল ক র দ র পর র পর ব ক জ কর র করত ন করত র একট মৎস য ধরন র ত করত আইন র সরক র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভবদহ অঞ্চলে নদী অববাহিকাভিত্তিক টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা উপজেলা জলাবদ্ধতায় ধুঁকছে অনেক বছর ধরে। এর সমাধানে বারবার নেওয়া ‘ভুল প্রকল্প’ শুধু রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকারই অপচয় করেনি; বাড়িয়েছে ভুক্তভোগীদের কষ্টের দিন। ভবদহে জলাবদ্ধতায় চরম কষ্টে থাকা মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমকালের সভাকক্ষে ‘ভবদহ জলাবদ্ধতা-দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং সমাধানের পথ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সমকাল’ ও ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)’ যৌথভাবে এর আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ‘পানি অধিকার ফোরাম’।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
ভবদহের এই জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এর সমাধান একটা সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক হতে হবে। মাসের পর মাস মানুষ বুকপানিতে থাকবে, আর আমরা বলব যে, কিছু করার নেই– এটা হতে পারে না। বেশি দেরি হয়েছে বলে এখন বাধাটাও বেশি আসছে। সেই ২০০৭-০৮ সালেই যদি টিআরএম করা হতো, তাহলে আজ এত মানুষ সংগঠিত হয়ে টিআরএমের বিরোধিতা করতে পারত না। নদী খনন, নদী খননের সঙ্গে টিআরএম করা, উজানের সঙ্গে সংযোগসহ নানা ধরনের পরামর্শ আসছে। কিন্তু এই সমাধানগুলো গুরুতর। সমাধান এত সহজ নয় যে, একটা স্লুইসগেট খুলে দিলে কিংবা খাল খনন অথবা টিআরএম করলেই হবে। যদি টিআরএমকে সমাধান হিসেবে ধরাও হয়, তাহলে অনেক মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ জমির মালিক নয়। আবার কেউ বেশি জমির মালিক, কেউ কম জমির। ফলে কেউ বেশি টাকা পাবেন, আবার কেউ কম টাকা পাবেন। আবার কেউ ভূমিহীন, দিনমজুর। তারা সরকারের প্রচলিত আইনে কোনো টাকা পাবেন না।
জলাবদ্ধতার আশু কোনো মুক্তি নেই। তবে দুই-তিন বছরের মধ্যে মুক্তি দেওয়া যাবে না– এটা আমি মনে করি না। ভূমি, কৃষি, মৎস্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে হয়তো একটা বিলে টিআরএম করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব। এই কমিটিতে প্রকৌশলী এবং প্রান্তিক বিশেষজ্ঞদেরও রাখা যেতে পারে। তাদের নিয়ে টিআরএমের কাজ শুরু করতে হবে। আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে রাজারহাট খালের সংযোগ করতে হবে, বলেছেন আপনারা। আমরা সেটা করব। এই মুহূর্তে যেটা জরুরিভাবে করতে হবে সেটা হলো দ্রুত এই চার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নিয়ে একটি মিটিং করা। ইপিজেড যেন কোনো অবস্থাতেই তাদের খালের সংযোগ আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে করতে না পারে, সে জন্য যশোরের ডিসিকে ইমিডিয়েটলি নির্দেশনা দিতে হবে।
খুশী কবির
ভবদহ এলাকায় প্রযুক্তিগত সমাধান প্রয়োজন। সঠিকভাবে একটা স্বাধীন গবেষণা করা উচিত; ফরমায়েশি গবেষণা নয়। এর সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণটা প্রয়োজন। মতের পার্থক্য থাকবে। তবে সবার কথা নিয়ে একটা ঐকমত্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য গৃহীত প্রকল্পে ভূমি, কৃষি, মৎস্য, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। টেকনিক্যাল এক্সপার্টদেরও যুক্ত করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হয়েছে। নদী প্রবাহের পরিবর্তন হয়েছে। টিআরএমের কথাও আসছে। যাই-ই করা হোক না কেন; পুরোটাই যেন সার্বিকভাবে হয়। সবাই যেন এটা গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু নাও করতে পারে, সে ক্ষেত্রে যেন বাস্তবায়নের একটা রূপরেখা দেয়। পরবর্তী সরকার যেন সেটা বাস্তবায়ন করে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তবে এখন আমাদের ইমিডিয়েট অ্যাকশন নিতে হবে ভবদহের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে।
আবু সাঈদ খান
ভবদহের সমস্যাটা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এখানে মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়েই সংকটাপন্ন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে অনেক লেখালেখি হয়েছে, গবেষণা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সারাদেশই পরিচিত। কিন্তু সমস্যার সমাধানটা হচ্ছে না। এর থেকে উত্তরণ খুব জরুরি। এই এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ সমস্যা কেবল ওই অঞ্চলেরই নয়, বরং এটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা এই জাতির জন্য চ্যালেঞ্জ। সামগ্রিকভাবে জনগণের উপকারের জন্য এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য কিছু স্বল্পমেয়াদি এবং মধ্যমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। এটাই সংগত হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে সরকার পরিবর্তনও হতে পারে। কিন্তু প্রকল্পের যেন পরিবর্তন না হয়– এই নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। নইলে কোনো ধরনের লাভ হবে না।
ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান
আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, আমরা যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করি, সেগুলোর বেশির ভাগই প্রয়োজনভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি এবং সমন্বিত প্রকল্প হিসেবে তৈরি হয় না। এর পরিবর্তে কিছু প্রকল্পে শুধু ফরমায়েশি বা পৃষ্ঠগত ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করা হয়, যার মাধ্যমে প্রকল্পের প্রকৃত সম্ভাবনা এবং চাহিদা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না।
এ ব্যবস্থায় প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন এবং তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরী হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে আমাদের গবেষণা এবং প্রকল্প পরিকল্পনা দুটির আলাদা প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। গবেষণা হওয়া উচিত স্বাধীন। প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো পুনরায় দেখা এবং সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে।
জলাবদ্ধ এলাকার পানিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই জমা পানি নদীতে ফেলে সাগরে না পাঠিয়ে বরং এর লবণাক্ততা দূর করে সেটাকে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর একটা অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে যেসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায়, সেগুলোর সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে একটা স্বাধীন গবেষণা করে প্রয়োজনের ভিত্তিতে মহাপরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিতভাবে এগোতে হবে।
নাজমুল আহসান
বিগত বছরগুলোর চেয়ে গত বছর দুর্যোগ বেশি হয়েছে। অতিবৃষ্টিও হয়েছে। ২০২২ সালে যশোর এলাকায় ৯৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৪৫৭.৩০ মিলিমিটার। আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও অতিবৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরে বৃষ্টিপাত এত বেশি ছিল; ভবদহ এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ওই এলাকায় হরি ও টেকা নদী খননের কাজ চলছে। কেশবপুরের অংশেও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ চলছে। সেখানে পানি নামছে। এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পুরো ভবদহ এলাকাসহ এর আশপাশের এলাকা নিয়ে একটা গবেষণা প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। রিপোর্ট পেলে বড় আকারের প্রকল্প নেওয়া হবে। এটা হতে পারে টিআরএম কিংবা এর বিকল্প অন্য কিছু অথবা একাধিক সমাধান হাতে নেওয়া হতে পারে। শোলমারীতে আমরা আরেক ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের মূল সমস্যা হলো ওপর থেকে পানি না আসা। এটা হলে আমাদের নদীগুলোর এ অবস্থা হয়তো হতো না। কুষ্টিয়ার মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে পানি আসার কথা থাকলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে গঙ্গা ব্যারাজ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে পানি ‘ডাইভার্ট’ করার একটা সুযোগ আছে। এ বিষয়ে সামনের দিনে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভাবা যেতে পারে।
রওশন জাহান মনি
একটা সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়। ভবদহ অঞ্চলের সমস্যার পরিবর্তিত রূপ এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষতিও অনেকটা স্পষ্ট। বিভিন্ন সময় এ সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি শুনলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা জনতান্ত্রিক সরকার এসেছে। সে কারণে মানুষের আবার আশা ফিরে এসেছে। প্রাকৃতিকভাবেই এই সমস্যা সমাধানের দাবি এসেছে। আমরা আশা করছি, এ পরিস্থিতির একটা নিরসন হবে। কেননা, ভবদহের এ পরিস্থিতি কেবল আঞ্চলিক নয়; জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত ।
জিয়া হায়দার চৌধুরী
ভবদহ এলাকায় ১৮ হাজারের বেশি চিংড়ি ঘের আছে। এসব এলাকায় আগে কোনো ঘের ছিল না। যখন এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তখন সেখানকার মানুষের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এর পর সেখানে চিংড়ি এবং মাছের ঘের করা শুরু হয়। সাধারণ মানুষই এই ঘের শুরু করে। লাভ দেখে প্রভাবশালীরাও ঘের করা শুরু করে। ২০১৯ সালে একটা ঘের ব্যবস্থাপনা নীতিমালাও করা হয়েছে। নীতিমালায় নদী, খাল বা বিলে ঘের করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। কেননা, কোনো আইন নেই। এ জন্য এই নীতিমালাকে আইন বা বিধিতে পরিণত করতে হবে। একই সঙ্গে এই ঘেরের সঙ্গে জড়িতদের ক্ষতি না করে টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে। লিজ প্রথা বাতিল করতে হবে। হাওরের জন্য যেমন হাওর বোর্ড আছে; ভবদহ অঞ্চলের জন্যও একটি ইউনিক বডি থাকলে ভালো হয়।
শেখ রোকন
ভবদহ অঞ্চলের সমস্যাটা মনে হয় ভাটির দিক থেকে আসছে। এ জন্য মাথাভাঙ্গা নদীর মুখটা খনন করতে হবে। এটা হলো অর্ধেক চিত্র। বাকি সমস্যা হলো, উজান থেকে পর্যাপ্ত পানি আসছে না। যদি সেটা আসত, তাহলে পলিগুলো ধুয়ে যেত। তাহলে লোকায়ত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো। মাথাভাঙ্গা নদীটা সীমান্ত নদী। পদ্মার যে অংশটায় মাথাভাঙ্গা নদী আছে, সেটাকে অল্পতেই পদ্মার সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব।
শামসুল হুদা
গত ৪০ বছর ধরে এ সমস্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়টায় যশোর, খুলনা এবং সাতক্ষীরা জেলার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, শিক্ষাব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু সমাধান নিয়ে আলোচনা করলে হবে না। বরং ক্ষয়ক্ষতিও নিরূপণ করা প্রয়োজন। সব ক্ষতি নিরূপণ করা যদিও সম্ভব নয়, এর পরও চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে এ ক্ষতির কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে। বিভিন্ন পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়নই নয়; যেখানে অর্থের অপচয় এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে, সেটাও বের করতে হবে। এর যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য এ সরকারের আমলেই অন্তত একটা গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
সানজিদা খান রিপা
ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: ভবদহ স্লুইসগেটের কাছে হরি নদী খনন করার যন্ত্র দুটি থেকে বৃদ্ধি করে চারটি করা; ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শোলগাতী পর্যন্ত নদীতে একটা চ্যানেল করে জরুরি ভিত্তিতে পানি সরানো; আমডাঙ্গা খালের পাশে গড়ে ওঠা মজুমদার অটোরাইস মিল সরিয়ে দিয়ে খালটির সোজাসুজি সংযোগ তৈরি করা ইত্যাদি।
মধ্যমেয়াদি সুপারিশ: ভবদহের বিলগুলোর সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ স্থাপন করতে হলে আমডাঙ্গা খালের গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা; মহাকাল এলাকায় অবস্থিত আমডাঙ্গা খালের ৬-ভেন্টের স্লুইসগেটটি ভেঙে ফেলা, ইপিজেডের কারখানার কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য খননকৃত খালটি আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে যেন সংযুক্ত না করা হয়, আমডাঙ্গা খালের সংকুচিত অংশে বসতবাড়ির ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে পোল্ডারের অভ্যন্তরে আবদ্ধ নদীগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ ও বিল ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা; ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা, মুক্তেশ্বরী, হরি, শ্রী, আপার ভদ্রা, হরিহর ও ঘ্যাঙরাইল নদীর অবাধ সংযোগ তৈরি করে প্রবহমান রাখার জন্য নদী খনন ও পলি ব্যবস্থাপনা করা; প্রতিটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বিলগুলোয় পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়ন করা; নদী, খাল, বিল ও অন্যান্য জলাশয়ের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখতে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা প্রদান সম্পূর্ণরূপে বাতিল এবং সুশীল সমাজ, স্থানীয় পরিষদ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন করা প্রয়োজন।
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার
ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিবেশ ও কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে হবে। বাস্তুতন্ত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া শস্য ও মৎস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাব। এ তিনটি ক্ষেত্রকে সমন্বিত করে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত, যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা যায়।
ড. মোহন কুমার দাশ
স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক সমাধান সম্ভব। রিমোট সেনসিং এবং জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে জলাবদ্ধতার বিস্তৃতি, ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং পানি নিষ্কাশনের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হবে। এ অঞ্চল নিয়ে উল্লেখযোগ্য বেজলাইন স্টাডির সংখ্যা অপ্রতুল এবং বর্তমান গবেষণা সীমিত।
ডিজিটাল এলিভেশন মডেল, লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং ও ফিল্ড সার্ভের সমন্বয়ে উচ্চতা ও পানি নিষ্কাশন পথের অধিকতর সঠিক মডেলিং করা সম্ভব। স্যাটেলাইট ও গাণিতিক মডেলভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবহার করে অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার ঝুঁকি নিরূপণ করা সম্ভব, যা আগাম প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পূর্বাভাস মডেল প্রয়োগ করে ভবিষ্যৎ জলাবদ্ধতার প্রবণতা নির্ধারণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। লেন্ডস্যাট, সেন্টিন্যাল এবং উচ্চ রেজুলিউশনের বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে নদী, খাল ও জলাধারের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
এখন গুগল আর্থ ইঞ্জিন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি উন্নত নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নির্ধারণ করতে হবে। সঠিক বাস্তবায়নের জন্য স্পারসো, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নোয়ামি, বুয়েটের আইডব্লিউএফএম, আবহাওয়া বিভাগ, সিইজিআইএস, আইডব্লিউএম এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
একেএম মাসুদ আলী
আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন একটা শক্তিশালী আইন। এ আইনের অনুচ্ছেদ ১০-এর আলোকে কোনো এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় রোধে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ও এ আইনের ১৫-এর ১ ধারায় বলা আছে। আমাদের যে আকাঙ্ক্ষাগুলো আছে, যে কোনো আইনের মধ্যেই তার প্রতিচ্ছবি রয়েছে। এ আইনের ১৬ ধারায় পরিবেশ অপরাধকে শনাক্তের বিষয়ে বলা আছে। এটি দেখা যেতে পারে। একটা আইনি নিরীক্ষা সমস্যার সমাধান হতে পারে। পানি আইনের অনুচ্ছেদ ৪-এ নদীতে নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করার এখতিয়ার দেওয়া আছে। পরিবেশ আইন ও পরিবেশ দৃষ্টিতে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের সব অংশকে এক করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। জলাবদ্ধতা সমস্যাকে পরিবেশ বিপর্যয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। যেখানে মানবিক বিপর্যয় চূড়ান্ত, সেখানে যে কোনো একটা আইনের প্রাধান্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়কে এক করার উদ্যোগ না থাকলে বিপর্যয় ঘনীভূত হয়। ভবদহ তারই একটা উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া– এই তিনটি জেলা নিয়ে একটা প্রকল্পের পরিচালক ছিলাম আমি। এ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল না। কিন্তু আমি যোগদানের দুই মাস পর ওই এলাকার এক ব্যক্তি নিজ হাতে নকশা এঁকে এনে সেখানকার জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেন। আমি জলাবদ্ধতার জায়গাগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করি। আমি দেখলাম, খাল খনন ও ‘হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার’ করলে এই জলাবদ্ধতা দূর হবে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ মানবসৃষ্ট। খালগুলো বেদখল ছিল। মানুষের সঙ্গে মিশলে তারা সহায়তা করেন। আমি প্রশাসনের কোনো ধরনের সাহায্য ছাড়াই পাকা বাড়ি ভেঙে খাল উদ্ধার করেছি। মানুষ জমিও দিয়েছিল খাল খনন করতে। এর মাধ্যমে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে পেরেছিলাম। আরও ২৯টি স্পটে আমি জলাবদ্ধতা দূর করতে পেরেছিলাম ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ পাইপলাইন’-এর মাধ্যমে। যেসব জমিতে বাড়ি করা হয়েছে, সেসব জায়গায় এটি করা হয়েছে। এক দিনে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে কাজ করতে হবে। যেটা করা হবে, তাতে যেন ভবিষ্যতে আর হাত দেওয়া না লাগে।
মাহফুজুর রহমান মুকুল
যতক্ষণ টিআরএম বাস্তবায়ন করা না যাবে, ততক্ষণ বিলের পানি পাম্পিং করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় বাড়াতে হবে। দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড একটা কাজ করছে, সেটা কৃষি অধিদপ্তর জানে না অথবা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর জানে না। এই সমন্বয় বাড়াতে হবে। ভবদহের সমস্যা ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যাকে অনেকে অনেক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
মো. আব্দুল্লাহ আল রশিদ
ভবদহ এলাকায় স্বল্প মেয়াদে জলাবদ্ধতা দূর করতে পাম্প ব্যবহার করি আমরা। ওই এলাকায় বেশির ভাগ পাম্পই বিএডিসির। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে স্লুইসগেটেও পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। এ বিষয়ে যদি পল্লী বিদ্যুৎকে একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাহলে এ বিলটা কম আসবে। ভবদহ এলাকার জন্য আলাদা কোনো বডি তৈরি করা যেতে পারে। তারা পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করবে। টিআরএম বিষয়ে মানুষকে বোঝাবে। এ উদ্যোগ অনেকটা কার্যকর হবে। ভবদহ এলাকা নিচের দিকে। ভূমি গঠনের আগেই এখানে পোল্ডার করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য এলাকার ভূমি গঠন হলেও ভবদহ এলাকায় হয়নি। এ কারণে আমাদের টিআরএম লাগবেই।
মোতলেব সরকার
যেসব নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ৩টি অববাহিকার নদী ও বিলগুলো দখলমুক্ত করে খনন করতে হবে। সেগুলো কম খরচে করা যায়। ভবদহ, বিল ডাকাতিয়াসহ যেসব এলাকায় এ সমস্যা রয়েছে, প্রতিটি এলাকায় খননকাজ চালাতে হবে। এসব এলাকায় ভূমিদস্যুরা বিল, খাল ও নদী দখল করে নিয়েছে। সেগুলোকে সিএস পর্চা অনুযায়ী উদ্ধার করতে হবে এবং খনন করে সবার সঙ্গে সংযুক্ত করে পানি প্রবাহের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ সরদার
এখনও মানুষের উঠোনে পানি আছে। পানি দ্রুতগতিতে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তঃনদীগুলোর সংযোগ তৈরি করতে হবে। এ অঞ্চলের প্রভাবশালীরা বিলের খাসজমি দখল করে চিংড়ি ঘের তৈরি করে ব্যবসা করছে। প্রায় ১৮ হাজার ঘের রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে দুটি ঘেরের পাড়ের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ ফুট জায়গা রাখার নিয়ম থাকলেও তারা সেটি মানছে না। ঘের রেখে ভবদহের জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। তাই ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে।
প্রকাশ চন্দ্র
টিআরএমের চিন্তা মাথায় রেখেই নদী খনন করতে হবে। এর বাইরে নদী খনন করে টাকা অপচয় করার কোনো দরকার নেই। আমডাঙ্গা খালকে দ্রুত খনন করে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। এ ছাড়া ভবদহ এলাকার একটা বিল এলাকায় একটা ইপিজেড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমডাঙ্গা খালের সঙ্গে ইপিজেডের খালের একটা সংযোগ করা হচ্ছে। এর ফলে নতুন একটা বিপদ আসছে। এটা বন্ধ করতে হবে।
গীতা রানী কুণ্ডু
ভবদহ এলাকায় পানির কারণে শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে, মাদকের হার বাড়ছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে পারিবারিক সমস্যা থেকে শুরু করে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। এই এলাকায় কেউ আত্মীয়তাও করে না জলাবদ্ধতার কারণে।
মাধব চন্দ্র
সাতক্ষীরায় দুটি বড় নদীতে খনন হয়েছে। এর সঙ্গে ৭২টি খালও খনন করা হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতা কেটে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ পানি প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে আন্তঃনদী প্রবাহ নেই। একমুখী স্রোতের ফলে পলি এলেও তার অবক্ষেপণ হবে না। ফলে জলাবদ্ধতা আবার হবে। আবারও নদী ভরাট হবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, নদীকে কেটে খাল তৈরি করা হচ্ছে। নদীর পূর্বের প্রশস্ততা কমিয়ে নদীর মধ্যেই মাটি ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী ছোট হয়ে যাচ্ছে। নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। ইছামতীর শাখা গেট দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই গেট খুলে দিতে হবে। তা না হলে নদী-খাল খননের সুফল ভোগ করা যাবে না।
বিকাশ চন্দ্র মল্লিক
বর্ষাকালের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এই মুহূর্তে অন্ততপক্ষে আমডাঙ্গা খালকে পুরোপুরি খনন করা কয়েক মাসের মধ্যে সম্ভব নয়। যদিও আমডাঙ্গার পিচের রাস্তার ওপর ছয়টি গেট রয়েছে; বর্ষার আগেই এ গেটগুলোর সামনে থেকে ভৈরব নদ পর্যন্ত গভীরভাবে খনন করে ইউডি লাইন করে দিলে বাড়িঘরের ক্ষতি হবে না। পানিও অপসারণ করা সম্ভব। একই সঙ্গে অন্তত ২০টি বিলে ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বাবর আলী গোলদার
এরশাদ আমল থেকে এখানে নদী খনন হচ্ছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে নদী খনন সমস্যা-সমাধানের কোনো উপায় নয়। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন হয়েছে। কিন্তু এখন জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করতে হবে। জলাবদ্ধতা সমাধানের মূল লক্ষ্য টিআরএম প্রযুক্তি বাস্তবায়ন। টিআরএম প্রকল্পের সুফল আগেও মানুষ পেয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে নদী অববাহিকাভিত্তিক টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে সহজ শর্তে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রকল্পগুলোয় আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় প্রয়োজন।
তপন মণ্ডল
কপালিয়া বিলে টিআরএমের পরিকল্পনা ২০১২-১৩ সালে করা হয়েছিল। এর কার্যক্রমও চলছিল। কিন্তু এক দল স্বার্থান্বেষী সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। এখন সেখানে পুনরায় টিআরএম পরিকল্পনা করা হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সহজ শর্তে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাহলে এলাকার মানুষ রাজি হবে। এর আগে নদীর নাব্য ও প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। বিল কপালিয়ায় দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন করা প্রয়োজন। তাহলে সেখানে ঘের ও মৎস্য চাষ করে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।
সুপারিশ
প্রতিটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বিলগুলোয় পর্যায়ক্রমে টিআরএম বাস্তবায়ন করা।
ইজারা প্রদান সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা।
পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দ্রুত পানি কমানোর ব্যবস্থা করা।
ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শোলগাতী পর্যন্ত নদীতে চ্যানেল করে জরুরি ভিত্তিতে পানি সরানো।
আমডাঙ্গা খালের পাশে গড়ে ওঠা মজুমদার অটোরাইস মিল সরিয়ে খালটির সোজাসুজি সংযোগ তৈরি করা। খালটির গভীরতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা। আমডাঙ্গা খালের ৬-ভেন্টের স্লুইসগেটটি ভেঙে ফেলা।
পোল্ডারের অভ্যন্তরে আবদ্ধ নদগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ ও বিল ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা।
ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা, মুক্তেশ্বরী, হরি, শ্রী, আপার ভদ্রা, হরিহর ও ঘ্যাঙরাইল নদীর সংযোগ তৈরি করে প্রবহমান রাখার জন্য নদী খনন ও পলি ব্যবস্থাপনা করা।
ভবদহের জলাবদ্ধতা সমাধানে সুশীল সমাজ, স্থানীয় পরিষদ, প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাসহ অংশীজনকে নিয়ে স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠন করা।
প্রধান অতিথি
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
উপদেষ্টা, পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়
সভাপতি
খুশী কবির
চেয়ারপারসন
এএলআরডি ও সমন্বয়ক, নিজেরা করি
সূচনা বক্তব্য
আবু সাঈদ খান
উপদেষ্টা সম্পাদক, সমকাল
প্রেক্ষাপট উপস্থাপন
রওশন জাহান মনি
উপ-নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
আলোচক
ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান
সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়
নাজমুল আহসান
সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
জিয়া হায়দার চৌধুরী
অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর
শামসুল হুদা
নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার
পরিচালক, জাতীয় চিড়িয়াখানা
ড. মোহন কুমার দাশ
নির্বাহী পরিচালক, ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড ম্যারিটাইম ইনস্টিটিউট (নোয়ামি)
একেএম মাসুদ আলী
নির্বাহী পরিচালক, ইনসিডিন বাংলাদেশ
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, কৃষি মন্ত্রণালয়
মো. আব্দুল্লাহ আল রশিদ
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), যশোর
মাহফুজুর রহমান মুকুল
খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী, বেলা
মোতলেব সরকার
নির্বাহী পরিচালক
প্রগতি সমাজকল্যাণ সংস্থা, যশোর
প্রকাশ চন্দ্র
নির্বাহী পরিচালক, দ্বীপশিখা
গীতা রানী কুণ্ডু
নির্বাহী পরিচালক, জুঁই নারী উন্নয়ন সংস্থা, যশোর
মাধব চন্দ্র
নির্বাহী পরিচালক, স্বদেশ সাতক্ষীরা
বিকাশ চন্দ্র মল্লিক
সাবেক চেয়ারম্যান, আমডাঙ্গা ইউনিয়ন
বাবর আলী গোলদার
পরিচালক, পাঁজিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা, যশোর
তপন মণ্ডল
ভবদহ এলাকার বাসিন্দা
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন
সানজিদা খান রিপা
প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এএলআরডি
সঞ্চালনা
শেখ রোকন
সহযোগী সম্পাদক, সমকাল
অনুলিখন
মাজহারুল ইসলাম রবিন
স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সমকাল
আলোকিচিত্রী
হাসান জাকির
মামুনুর রশিদ, সমকাল
সমন্বয়
হাসান জাকির
হেড অব ইভেন্টস, সমকাল
রফিকুল ইসলাম
প্রোগ্রাম অফিসার (অ্যাডভোকেসি), এএলআরডি