পাকিস্তানের সহিংসতাকবলিত বেলুচিস্তানে পৃথক দুটি বোমা হামলায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের ৫ সদস্যসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৭ জন। রোববার এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ এ কথা জানিয়েছে।

বেলুচিস্তানের নুশকি–দলবন্দিন মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসের কাছে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হন। আহত হয়েছেন ৩৫ জন। তবে ঠিক কী ধরনের হামলা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ বলেছে, বিস্ফোরণের পরপরই আহত ব্যক্তিদের নুশকি হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মির গুল খান নাসির টিচিং হসপিটালে জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ জানিয়েছে, আহত ব্যক্তিদের হেলিকপ্টারে করে কোয়েটায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।

হামলার পর ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নুশকিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের গাড়িবহরের কাছে বিস্ফোরণে এই আধাসামরিক বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন। নুশকি স্টেশন হাউস অফিসার জাফরুল্লাহ সুমালানি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

জাফরুল্লাহ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া আলামত দেখে মনে হচ্ছে, আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে ফ্রন্টিয়ার কোরের বহরে হামলা চালিয়েছে।

এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার। এক বিবৃতিতে সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ বলেন, ‘শত্রুরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের মনোবল দুর্বল করা যাবে না।’

বেলুচিস্তানে সম্প্রতি সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বালুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সদস্যরা গত মঙ্গলবার জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালায়। তাঁরা রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে ট্রেনের ৪৪০ জন যাত্রীকে জিম্মি করেন।

পরদিন যৌথ বাহিনীর অভিযানে জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৩৩ হামলাকারী নিহত হন। তবে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার আগেই হামলাকারীরা ২৬ যাত্রীকে হত্যা করেন। অভিযানের সময় ফ্রন্টিয়ার কোরের চার সদস্যও নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, কাজে ফিরেছেন মেট্রোরেল কর্মীরা

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চার জন কর্মী লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত এমআরটি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগের পর কাজে ফিরেছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় মেট্রোরেলের একক যাত্রার টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এর আগে, সকাল ৭টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা একক যাত্রার টিকেট বিক্রি বন্ধ ছিল। এ সময় শুধু র‍্যাপিড পাস আছে- এমন যাত্রীরা যাতায়াত করতে পেরেছেন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত- তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়া, এমআরটি পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

সরেজমিনে ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, টিকেট বিক্রি করছেন কর্মীরা। এর আগে, সকাল ৭টায় একই স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেল স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি এবং চলন্ত সিঁড়ির কলাপসিবল গেইট বন্ধ রয়েছে। টানিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি বিজ্ঞপ্তি।

সেখানে লেখা ছিল, সাময়িকভাবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ আছে। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত।

সকাল ৭টা ২০ মিনিটে একজন নিরাপত্তাকর্মী এসে কলাপসিবল গেইট খুলে দিয়ে বলেন, ‘‘যাদের র‌্যাপিড পাস আছে তারা যেতে পারবেন। সিঙ্গেল টিকেট দেওয়া বন্ধ আছে।’’ এমনিতে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ওই গেইট খোলা হয়।

সেখানে থাকা ডিএমটিসিএলের একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘আমাদের স্টাফরা সবাই এসেছেন, আশপাশেই আছেন; কিন্তু কাজ করবেন না।’’

মেট্রোরেল কর্মীরা জানান, এমআরটি পুলিশের সদস্যদের দ্বারা চারজন কর্মী মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গতকাল রবিবার ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের’ ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল বিকেল সোয়া ৫টায় সচিবালয় স্টেশনে দুইজন নারী কোনো প্রকার পরিচয়পত্র প্রদর্শন না করেই সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান।

যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ছাড়া সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।

পরে ঠিক একইভাবে দুইজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান। এ বিষয়ের তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরো কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ’র সঙ্গে ইএফওতে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ’র কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করেন এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও’র শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করেন। এ পরিস্থিতি মেট্রোরেল কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

এ অবস্থায় ১৭ মার্চের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এসআই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কন্সটেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি, এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল, স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্যসব কর্মীর শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া, অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ছাড়া ও অনুমতি ছাড়া কেউ যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন: চলছে মেট্রোরেল কর্মীদের কর্মবিরতি, র‍্যাপিড পাস ছাড়া যেতে পারছে না কেউ

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ