Prothomalo:
2025-03-16@20:27:06 GMT

একজন চা-ওয়ালার স্বপ্ন 

Published: 16th, March 2025 GMT

আমি পেশায় চা–বিক্রেতা। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আমার পড়াশোনার ইতি ঘটে মাধ্যমিকে। তিন ভাই আর তিন বোনের মধ্যে আমি
পঞ্চম। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে আর দুই ভাই বিয়ে করে অন্যত্র সংসার করছেন। তবু আট সদস্যের এই বিশাল পরিবারের
বেশির ভাগ নির্ভর করত বাবার আয়ের ওপর। বাবা ছিলেন সবজি বিক্রেতা। গৌরীপুর শহরের অলিগলিতে ফেরি করে তিনি সবজি বিক্রি করতেন।

পড়াশোনায় ইতি ঘটলে আমি হাল ধরি পরিবারের। ২০১০ সালে গৌরীপুর পৌর শহরে একটি মুদিদোকানে দৈনিক ১০০ টাকা বেতনে কাজ নিই। এক বছর মুদিদোকান থেকে আশানুরূপ বেতন না পাওয়ায় সেখান থেকে সরে আসি। পরে গৌরীপুর পৌর শহরের কালীখলা এলাকায় আমার মামার জালাল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করি সেই ১০০ টাকা বেতনেই। সেখানেও বেশ কয়েক মাস কাজ করার পর পারিশ্রমিক ঠিকমতো না পাওয়ায় চলে আসি।

ওই হোটেলের বারান্দায় একটা চায়ের দোকান দেওয়ার স্বপ্ন দেখি। মাসে ৬০০ টাকা ভাড়ায় ২০১২ সালের শেষ দিকে হোটেলটির বারান্দায় হারুন টি হাউসের যাত্রা শুরু হয়। চায়ের দোকানটি আলাদা পরিচিতি লাভ করে। দোকানটিতে চা–প্রেমীর ভিড় লেগেই থাকত। কারণ, আমি গরুর খাঁটি দুধের চা বিক্রি করতাম। যে কারণে নানা সময়ে হোটেলটির মালিকের কটুকথাও সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। চায়ের দোকানে ভিড়ের কারণে হোটেলে বেচাকেনায় সমস্যা হচ্ছে—এই ছিল তাঁর কথা। দোকান ছেড়ে দিতে চাপ দেন তিনি।

তবু হাল না ছেড়ে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করি। চায়ের দোকানটি না ছেড়ে গরুর দুধের চা বিক্রি করা বন্ধ করে দিই। কমে যায় চা–প্রেমীদের ভিড়। এতে মনোমালিন্য বন্ধ হয় হোটেলের মালিকের সঙ্গে।

 চা বিক্রির পাশাপাশি একসময় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসিতে ভর্তি হই। ২০২১ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করি। আমার চা বিক্রি চলতে থাকে।

চা বিক্রি, পড়াশোনা, পরিবারের দেখভাল করার পাশাপাশি শতাধিক বই নিয়ে ২০২৩ সালে একই হোটেলের বারান্দায় হারুন পাঠাগার নামে আমার এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু করি। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের প্রশংসাও করেন অনেকে। বাংলাদেশের প্রথম সারির সব গণমাধ্যমেও খবরটি প্রকাশিত হয়। দোকানে নিয়মিত চা খেতে আসা গ্রাহকদের প্রতিবছর বর্ষসেরা চা–প্রেমী সম্মাননা দিই ২০১৭ সাল থেকে। চা বিক্রির পাশাপাশি এই কাজও ব্যতিক্রম হওয়ায় আলোচিত হই।

মানুষকে বইমুখী করার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া আমার পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দেড় হাজার। পাঠক বেড়ে হয়েছে তিন শতাধিক।

২০২৩ সালের জুন মাসে বাবাকে হারাই। মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যু হয় তাঁর। সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার কাঁধে।

মা আর ছোট বোনকে নিয়ে তিনজনের সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল চায়ের দোকানটি। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ওই জায়গায় থাকা চারটি প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেন জায়গার মালিক। যে কারণে দেড় হাজার বই আর চায়ের দোকানটি নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই।

বইগুলো নিরাপদে রাখার জন্য একাধিক মানুষের শরণাপন্ন হই; কিন্তু কেউ জায়গা দিতে সম্মত হননি। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেন গৌরীপুর কালীখলা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শংকর ঘোষ। তিনি মন্দিরের পাশে একটি ঘরে পাঠাগারটি পরিচালনার সুযোগ দেন; কিন্তু চায়ের দোকানটি শুরু করতে পারিনি। এখন শুধু বই আর পত্রিকা পড়েই সময় কাটছে আমার।

ছোট বোন বর্তমানে গৌরীপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। একজন চা–বিক্রেতা হিসেবে জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তবু আশা রাখি এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল

এছাড়াও পড়ুন:

এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং

এইচএসসি পাসের পর সবার চিন্তা থাকে ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি, সঙ্গে ভালো বিষয়ে পড়ে ভবিষ্যতে কিছু করা। তাদের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পড়বে বিজনেসে, কেউ পড়বে ল নিয়ে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয় তো থাকছেই। কিন্তু আমরা যদি গতানুগতিক বিষয়ে না পড়ে একটু যুগের চাহিদার দিকে লক্ষ্য করে নতুন বিষয়ে পড়া যেতে পারে। এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং তেমনি একটি বিষয়। এসএসসি, এইচএসসি অথবা ও-লেভেল বা এ-লেভেল পাস করেই যে কোনো ছাত্রছাত্রী দেশে শুরু করতে পারেন এয়ারক্রাফট মেইনটেইন্যান্স বিষয়ে পড়াশোনা। এয়ারক্রাফট মেইনটেইন্যান্স (এরোস্পেস/এভিওনিক্স) হচ্ছে কোনো আকাশযানের উড্ডয়নের আগে সব ধরনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, মেরামত সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান।
বিমান তৈরি, মেরামত, পর্যবেক্ষণ এবং এ-সম্পর্কীয় যাবতীয় ডিজাইন এ বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে এই বিষয়ে পড়াশোনা করাচ্ছে ইউনাইটেড কলেজ অব এভিয়েশন সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। বিশ্বজুড়ে সব দেশেই কাজের সুযোগ রয়েছে, এমন পেশার সংখ্যা খুব বেশি নয়। যে কয়েকটি পেশায় এই সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম এয়ারক্রাফট মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং। এয়ারলাইন্স খাতে এ ধরনের ইঞ্জিনিয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বজুড়ে এয়ারলাইন্স শিল্পের প্রসারের সঙ্গে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা উড়োজাহাজের সব ধরনের মান নিশ্চিত করেন। বিশেষ করে অ্যারোপ্লেন উড্ডয়নের আগে এর সব সিস্টেম ঠিক আছে কিনা– সে সম্পর্কে পাইলটরা সব ধরনের তথ্য নিয়ে থাকেন তাঁর কাছ থেকে। এ ছাড়া এ বিষয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করে চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে।
ভর্তির যোগ্যতা : এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৩.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ। যে কোনো সালের পাসকৃত ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবে।
যোগাযোগ : বাড়ি-১৬, রোড-৪, সেক্টর-৩, উত্তরা। 
ফোন : ০১৭৪৯৩০৬০৯০। www.uca.edu.bd  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং
  • ইউরোপে পড়ালেখার এই জনপ্রিয় বৃত্তির সুযোগ কি আপনিও নিতে চান
  • প্রচারের নামে ২২ কোটি টাকা তছরুপ, কম্বলের টাকাও হাওয়া
  • ২০২৩ সালের অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্সে পড়েত চাইলে আবেদন করুন দ্রুত
  • ব্রাজিলের হয়ে এবারও খেলা হচ্ছে না নেইমারের
  • ফেইথের ‘ফাঁদে’ ফতুর প্রবাসী চান পরিত্রাণ
  • যেভাবে পরিকল্পনা করে ছিনতাই করা হয় ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা
  • ৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম