গাজীপুরের কালীগঞ্জে জুম্মার নামাজের আগে সুদ ও ঘুষ নেওয়া হারাম হুজুরের এমন বয়ানকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

আহতদের চিকিৎসার জন্য গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন প্রিন্স প্রতিপক্ষকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে প্রতিপক্ষকে মারধর, ভাঙচুর, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রদল নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তবে হাসপাতালে ত্রাস সৃষ্টির ঘটনায় এসআই মিলন মিয়া বাদী হয়ে ছয়জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার ইফতারের আগে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড বালীগাঁও উত্তরপাড়া এলাকায় সুদ ও ঘুষ নেওয়া হারাম বলে মসজিদে হুজুরের বয়ান দেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। পরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

এই ঘটনায় বিএনপি নেতা হরমুজ আলীর তিন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম খোকন, মোহাম্মদ সোহেল ও মোহাম্মদ সুমন গুরুতর আহত হলে আত্মীয়-স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রতিপক্ষ আহত ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি মো.

গোলজার হোসেন, তার ভাই মোক্তার হোসেন, হাবিবুল্লাহ, বাদু মিয়া ও মো. শামীমদেরও হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন বিএনপির নেতা গোলজার হোসেন হাসপাতালে প্রতিপক্ষের মোহাম্মদ সুমনকে মারধর করেন। 

এদিকে ছাত্রদলের কর্মী রিয়াদ হোসেন তার বাবা মোহাম্মদ সোহেলকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে বলে কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবুল হোসেন প্রিন্সকে জানান। তখন ছাত্রনেতা প্রিন্স তার দলবল নিয়ে হাসপাতাল গিয়ে প্রতিপক্ষকে মারধর করেন। এ ঘটনায় রাতে বিএনপি নেতা গোলজার হোসেন সাতজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়া অপরপক্ষের জাহাঙ্গীর আলম খোকন বাদী হয়ে ১১ জনের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

এদিকে রোববার ভোররাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের মারধরের ঘটনায় ছাত্রদল নেতাসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই ছাত্রদল নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে সকালে থানা ঘেরাও করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা থানার ফটকে অবস্থান করেন।

আটক হওয়ারা হলেন- কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন প্রিন্স (২২), ছাত্রদলের কর্মী রিয়াদ (২৪),  চয়ন (১৬) আরাফাত (২০), সিহান (১৮) ও তারিকুল ইসলাম।

ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি মো. গোলজার হোসেন বলেন, পূর্ব শক্রতার জেরে জাহাঙ্গীর ও তার স্বজনরা আমাকে একা পেয়ে মারধর করে। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে গেলে সেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আবারও মারধর করেন।

অপরপক্ষের আহত জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, গোলজার হোসেন, তার ভাই ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা মিলে আমাকে মারধর করে। এই খবর পেয়ে বাড়ি থেকে আমার দুই ভাই এলে তাদেরও মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। 
কালীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম প্রধান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদল নেতা হাসপাতালে তার বন্ধুর বাবাকে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরে সংঘর্ষে তার জড়িত নন। প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করছি। হাসপাতালে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলাউদ্দিন  বলেন, ‘সুদ ও ঘুষ নেওয়া হারাম সংক্রান্ত বয়ানকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৪-১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দুপুরে গাজীপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ছ ত রদল ন ত ম হ ম মদ স ছ ত রদল র ব এনপ র স ঘর ষ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভিডিও দেখে দালালের বাড়ি ঘেরাও

সমুদ্রপথে ইউরোপে লোক পাঠানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়নের দারখী গ্রামের আকাশ মোল্লা। সম্প্রতি ছোট ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন তিনি। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের সেই ভিডিও আপলোড করেন সামাজিক মাধ্যমে। এরপর শুরু হয় বিপত্তি। ভিডিও থেকে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করে গত শনিবার বাড়িতে চলে আসেন প্রতারিত যুবকদের স্বজন। বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে  কৌশলে পালিয়ে যান আকাশ ও তাঁর স্ত্রী।      
জানা গেছে, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ লাখ টাকায় সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়া নেওয়ার কথা বলে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবকদের ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে আটকে রাখেন আকাশ মোল্লা। এরপর নির্যাতন করে আরও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। দেশ থেকে টাকা না পাঠালে নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। তাঁর কবল থেকে মুক্তি পেতে কোনো উপায় পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগী যুবকরা। সম্প্রতি আকাশের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নির্যাতনের ভিডিওসহ প্রমাণ নিয়ে শনিবার বিকেলে ঝালকাঠিতে এসেছেন তারা। প্রথমে আকাশ বাড়িতে আছে জানালেও পরে অস্বীকার করেন স্বজনরা। এক পর্যায়ে আকাশের স্ত্রী সুমনা আক্তার সাথি উত্তেজিত হয়ে ভুক্তভোগীর স্বজনদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোকজন এলে তিনিও উধাও হয়ে যান। রাত ৮টার দিকে সদর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. আমিনুল, এসআই ফরিদ হোসেন এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ শোনার জন্য থানায় নিয়ে যান ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনের।    
এ সময় কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার অরুণ মিয়ার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘একটু ভালো থাকার আশায় ছেলে আলাউদ্দিনকে মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে আকাশ। আরও টাকা চেয়ে নির্যাতন করেছে। সে এখানে আছে জানতে পেরে এসেছি। আকাশকে না পেলেও তার স্ত্রী ঘরেই ছিল। সে কীভাবে পালিয়ে গেল? পুলিশ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পিছু হটেছে।’   
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, সাধারণত যেখানে ঘটনা ঘটে, সেখানে মামলা হয়। তা ছাড়া আকাশ মোল্লার বাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পেলে তাঁকে কীভাবে আইনের আওতায় আনা যায় দেখা হতো। তাই আমাদের কিছুই করার নেই।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মাদারীপুরের পূর্ব সাইচপাড়া গ্রামের পারুল বেগমের ছেলে আরাফাত সরদার ও ভাইয়ের কাছ থেকে আকাশ 
ব্যাংক এজেন্ট ও চেকের মাধ্যমে ১৮ লাখ করে মোট ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন তিন কিস্তিতে। এরপর ইন্দোনেশিয়া দ্বীপে নিয়ে আটক করে আরও টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আরও ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। 
একই কায়দায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার রখিবপাড়া গ্রামের মৌসুমী আক্তারের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী সুমন হালদার ও তাতিকান্দি গ্রামের মরজিনা বেগমের ছেলে তাইম হোসেন ও ভাই তমিজ হোসেনের কাছ থেকেও ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। শুধু তারা নয় এ রকম ৪০ যুবককে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে জিম্মি করে নির্যাতন ও বাড়তি টাকা আদায় করছেন আকাশ। ভুক্তভোগীদের স্বজনরা আকাশের বাড়িতে অবস্থান নিলে তাঁর স্ত্রী গেম না দেওয়ার (অস্ট্রেলিয়া না পাঠানোর) হুমকি দিয়েছেন। 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আকাশ তাঁর ভাই পলক ও বাবা কবির মোল্লা মালয়েশিয়া থাকতেন। এক বছর আগে কবির মোল্লা দেশে এসে এসএ পরিবহনের পাশে ভাঙারি ব্যবসা শুরু করেন। পলকের বিয়ে উপলক্ষে ছয় মাস আগে ঝালকাঠি আসেন তারা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। তারা হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে গেছে বলে জানান প্রতিবেশীরা। এলাকার কারও সঙ্গে তাদের তেমন ওঠাবসা নেই। 
আকাশ ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ভাই রাতুল হাসান পলক বলেন, ভাই-ভাবি বাসায় নেই। ভাই মালয়েশিয়া থাকাকালে এ ধরনের কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা জানি না। আমিও মালয়েশিয়া থাকি। বিয়ে করতে বাড়ি এসেছি। ভাই মালয়েশিয়া থেকে কিছু দিন আগে এলেও ভাবি বাড়িতেই থাকেন।
পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় বলেন, ভুক্তভোগী যুবকদের স্বজনরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভিডিও দেখে দালালের বাড়ি ঘেরাও
  • চট্টগ্রামের ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুর, আটক ৬
  • চট্টগ্রাম ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের মঞ্চ ভাঙচুর, আটক ৬
  • নড়াইলের কালিয়ায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
  • টাকায় মেলে ভালো জায়গা, না দিলে হারিয়ে যায়
  • টাকায় মিলে ভালো জায়গা, না দিলে হারিয়ে যায়
  • গোপালগঞ্জে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু