ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে এপ্রিলে আরেকটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আসছে। যা ভবিষ্যতে রূপ নেবে রাজনৈতিক দলে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্ল্যাটফর্মের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।

অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিতে (জানাক) ছিলেন শিবিরের সাবেক নেতারাও। এনসিপির শীর্ষ পদ নিয়ে বিরোধে তাদের একাংশ আলাদা হয়ে যায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের দাবিতে তাদের নেতৃত্বে আরেকটি রাজনৈতিক দল আসছে।

ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা গ্রাফিতিতে দু’জন তরুণীসহ ছয়জনের মুখচ্ছবি রয়েছে। নারীদের একজন হিজাব পরা, অন্যজনের মাথা খোলা। তরুণদের একজন দাড়ি-টুপি জোব্বা পরা, একজন আদিবাসী। জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক নয়, এর মাধ্যমে মধ্যপন্থি দল গঠনের আভাস দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

তারা সমকালকে জানান, রাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে প্ল্যাটফর্মটি।  জনগণ চাইলে রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে। শুধু সাবেক শিবির নয়, সব মতের মানুষের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। শিবির ‘ট্যাগিং’-এ এনসিপিতে যাদের জায়গা হয়নি, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ পূরণের সম্ভাবনা না থাকায় যারা এনসিপিতে যোগ দেননি, তাদের নিয়ে হবে প্ল্যাটফর্ম। সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনের শুরু হয়। এতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষও রাজপথে নামেন। আন্দোলন অভ্যুত্থানে রূপ নিলে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অভাবনীয় পতন ঘটে। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান অনুযায়ী, অভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সহযোগীর ভূমিকায় ছিল আওয়ামী লীগ। অপরাধের মূলহোতা শেখ হাসিনা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা সামনের থাকলেও নেতৃত্বে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা আমলের শেষ দিকে নিষিদ্ধ হওয়া শিবির নেতারা সাংগঠনিক পরিচয়ে ছিলেন না আন্দোলনে। 

অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শরফুদ্দিনসহ অন্তত ৩০ নেতা যোগ দেন জানাকে। তারা আলী আহসান জুনায়েদকে এনসিপির সদস্য সচিব পদে চেয়েছিলেন। ছাত্রশক্তি, ছাত্র অধিকার, ছাত্রলীগের পক্ষত্যাগী এবং বাম সংগঠন থেকে আসা নেতারাও নিজ নিজ বলয় থেকে শীর্ষ পদ চেয়েছিলেন।

এ বিরোধে সাবেক শিবির নেতারা এনসিপিতে যোগ দেননি। যোগ না দেওয়া নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ আমলে শিবির হত্যাকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, নতুন দলেও শুধু অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয়নি। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

রাফে সালমান রিফাত জানাকের যুগ্ম সদস্য সচিব ছিলেন। নতুন প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে তিনি সমকালকে বলেন, এনসিপি গঠন প্রক্রিয়ায় অনেক কিছুই ন্যায্য হয়নি। শুধু সাবেক শিবির নয়, কওমি মাদ্রাসা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে তা মনে করেন। তাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণা করবে, এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। যা রাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। ঈদের পর পর জনগণের কাছে যাবে। জনগণ গ্রহণ করলে, রাজনৈতিক দল গঠিত হতে পারে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জানাকের সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয় কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে বিলুপ্ত হবে। তাই জানাক আর কার্যকর নয় জানিয়ে রাফে সালমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের আরেক সাবেক সভাপতি মির্জা গালিবসহ যারা অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন, তারাও নতুন প্ল্যাটফর্মে থাকবেন। 

প্ল্যাটফর্মের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়া এখনও অসম্পূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন চাই। নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক দল প ল য টফর ম আওয় ম এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আমরা সকলেই একমত, এখানে (দেশে) রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি। এ উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের, দীর্ঘদিন ধরে তারা গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আছে, সেখানে বাংলাদেশ জাসদের ভূমিকাও রয়েছে।’

শনিবার জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আলোচনায় এ কথা বলে আলী রীয়াজ। সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। 

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন ইন্দু নন্দ দত্ত, ডা. মুশতাক হোসেন, এটিএম মহব্বত আলী প্রমুখ।

আলোচনায় আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শেষ করতে চায় কমিশন। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্র সংস্কারের একটি সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করতে পারবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকার সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে: ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
  • মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
  • জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির ৩ নেতার পদত্যাগ
  • জাতীয় পার্টি ছাড়লেন খুলনার সাবেক এমপিসহ ৩ নেতা
  • অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের: আলী রীয়াজ
  • ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী ছিলেন গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামী কণ্ঠস্বর: জোনায়েদ সাকি
  • ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে: জোনায়েদ সাকি
  • কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন 
  • ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ, তদন্তের আহ্বান সিনেটরদের
  • হাসিনার পতনে গ্রামেগঞ্জে প্রভাব ও আওয়ামী কর্মীদের ভাবনা কী