বেশি মাংস, বেশি ডিম দেয় নতুন প্রজাতির এই হাঁস—বলছেন গবেষকেরা
Published: 16th, March 2025 GMT
দুপুরের নরম রোদে হাঁসের খামার ঘুরে দেখছিলেন সিরাজগঞ্জের খামারি আবদুস সালাম। তাঁর এক ডাকে পুকুরপাড় থেকে দৌড়ে এল একঝাঁক হাঁস। খামারে ঢুকেই বললেন, ‘১২ বছর ধরে হাঁস পালছি। এত লাভজনক জাত আগে দেখিনি।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চয়ড়া গ্রামে আবদুস সালামের খামার। একসময় দেশি হাঁস পালতেন, কিন্তু মৃত্যুহার বেশি বলে লাভের মুখ দেখাটা কঠিন হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি পালা শুরু করেছেন নতুন জাতের হাঁস ‘বাউ-ডাক’। অভিজ্ঞতা কী, জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, ‘আগে হাঁস পালনে যা আয় করতাম, তা দিয়ে চলা কঠিন ছিল। আর এখন মাত্র ১০-১২ সপ্তাহেই দুই-আড়াই কেজি হয়ে যায় বাউ-ডাক, আর বছরে ২২০ থেকে ২৩০টি ডিম দেয়। দেশি হাঁসের তুলনায় এটাতে লাভ বেশি।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক ২০১৪ সালে হাঁসের জাত উন্নয়নে গবেষণা শুরু করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামছুল আলম ভূঁঞার নেতৃত্বে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
অধ্যাপক সামছুল আলম ভূঁঞা বলেন, ‘হাঁসের ডিম ও মাংস উৎপাদনে খামারিরা যেন লাভবান হন, সে জন্যই দেশি-বিদেশি জাতের হাঁসের সংকরায়ণ নিয়ে গবেষণা হয়। গবেষণাগার ও মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা শেষে ২০২০ সালে জাতটি সরকারিভাবে অনুমোদন পায়। এরপর পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক এনজিও মানব মুক্তি সংস্থার (এমএমএস) মাধ্যমে গবেষণাটি মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়।’
নতুন জাতটির বিষয়ে গবেষক জানান, উন্নত জাত উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জাতের হাঁস নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। চীনের পেকিন জাতের হাঁস ও দেশি নাগেশ্বরী জাতের হাঁসের ক্রস ব্রিডিং করে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়। পেকিন হাঁস বেশি মাংস উৎপাদনকারী হলেও কেবল বদ্ধ পদ্ধতিতে টিকে থাকে। এটি দেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও পরিবেশগত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না বলে আধা-বদ্ধ বা উন্মুক্ত রাখলে দৈহিক বৃদ্ধি কম হয়। আবার ডিমও কম দেয়। অন্যদিকে দেশি নাগেশ্বরী হাঁস পরিবেশ সহনশীল হলেও মাংস উৎপাদন কম। এ সমস্যা সমাধানে দুটি জাতের সংকরায়ণ করে উদ্ভাবিত হয় ‘বাউ-ডাক’। বাউ-ডাক বদ্ধ ও উন্মুক্ত দুই জায়গাতেই সুবিধাজনক।
আরও পড়ুনসিএসইর ছাত্র মাহাবুবের খামারে এখন শতাধিক গরু-ছাগল২৬ জুন ২০২৩উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
মাঠপর্যায়ে গবেষণার সাফল্য নিয়ে গবেষক অধ্যাপক সামছুল আলম ভূঁঞা বলেন, ‘আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল এমন একটি উন্নত জাতের হাঁস উদ্ভাবন, যা দেশি হাঁসের মতো পরিবেশ সহনশীল হবে, আবার বিদেশি জাতের মতো বেশি মাংস ও ডিম উৎপাদন করবে। দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় আমরা সেটি করতে পেরেছি। বাউ-ডাক এখন খামারিদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে, যা আমাদের কাজেও অনুপ্রেরণা জোগায়।’
আরও পড়ুনউদ্যোক্তা থেকে যেভাবে দেশের প্রথম সফল নারী অ্যাগ্রো–ইনফ্লুয়েন্সার হলেন পপি০৮ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করল ওপেনএআই
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে অসৎ কৌশল অবলম্বনের অভিযোগে মামলা করেছে ওপেনএআই। এতে দাবি করা হয়, মাস্ক নিজের স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির (এআই) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ওপেনএআইয়ের ব্যবসাকে প্রভাবিত করছেন। খবর বিবিসির
গত বছর মাস্ক ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে কোম্পানির করপোরেট কাঠামো পরিবর্তন বন্ধ করার জন্য মামলা করেছিলেন। মাস্ক অল্টম্যানের সঙ্গে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু ২০১৮ সালে মাস্ক প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যান।
এ মামলা সিলিকন ভ্যালির দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যকার একটি দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
বুধবার এক বিবৃতিতে ওপেনএআই বলে, ইলন মাস্ক ওপেনএআইকে তার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করে এআই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দুর্নীতিমূলক কৌশল অবলম্বন করছে। তাকে থামাতে আমরা পাল্টা মামলা করেছি।
গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে একজন ফেডারেল বিচারক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০২৬ এর মার্চে এ মামলার বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক ইয়ভন গঞ্জালেজ রজার্স এর আগে মাস্কের একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। যেখানে তিনি অস্থায়ীভাবে ওপেনএআই-এর অলাভজনক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর বন্ধ করতে আবেদন করেছিলেন।