সোনারগাঁয়ে ডিবি পরিচয়ে কোটি টাকা ডাকাতি
Published: 16th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার দড়িকান্দি ব্রিজ সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নাজিম উদ্দিন সোনারগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সোনারগাঁ থানার ওসি এমএ বারী জানান, “একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশের বিশেষ টিম ইতোমধ্যেই ডাকাতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে শুরু করেছে।”
আরো পড়ুন:
ফেনীতে পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আটক
যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় আহত ১০, থানায় অভিযোগ
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকার ভাটারা এলাকার দিবা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন ও মাইক্রোবাস চালক মামুন শেখ মতিঝিল সিটি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা থেকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে চাঁদপুর শাখায় যাচ্ছিলেন। সোনারগাঁ উপজেলার দড়িকান্দি ব্রিজ পার হওয়ার পর সিলভার রঙের একটি এক্সজিও ফিল্ডার গাড়িতে আসা ছয়জনের একটি দল তাদের গতিরোধ করে। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়ি তল্লাশির কথা বলে। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নাজিম উদ্দিন ও চালক মামুনকে চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
ডাকাত সদস্যরা তাদের বিভিন্ন স্থানে ঘোরানোর পর অপরিচিত একটি এলাকায় নামিয়ে দেয় এবং গাড়িতে থাকা দুই ব্যাগভর্তি ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী নাজিম উদ্দিন বলেন, “আমাদের কোম্পানিতে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন হয়, যা শুধু সিটি ব্যাংকই করে। মালিক দেশের বাইরে থাকায় তার সই করা চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।”
ঢাকা/অনিক/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই অভ য গ স ন রগ
এছাড়াও পড়ুন:
খরচই ওঠে না, ভেঙে ফেলা হচ্ছে সিনেমা হল
দুপুরের কড়া রোদ্দুর মাথায় গলে পড়ছে। কোনোমতে গামছা প্যাঁচিয়ে জিরানোর ছলে কী যেন ভাবছিলেন হাতুড়ি পিটিয়ে দেয়াল ভাঙার শব্দ শুনতে শুনতে। ষাটোর্ধ্ব বয়সী রিকশাচালক আবুল মিয়া এই শহরেই রিকশা চালান তিন যুগের বেশি সময় ধরে। চোখের সামনেই তাঁর কৈশোর-যৌবনের বিনোদনের জায়গাটা ভাঙা হচ্ছে। জানালেন বেদের মেয়ে জোছনা ছবিটা তাঁর খুব প্রিয়। এই শহরে সিনেমাটি যখন আসে টানা ১০ বার দেখেছেন। শেষে মায়ের বানানো গোবরের লাকড়ি বিক্রি করে সিনেমা দেখেছেন। তাঁর মতে সিনেমা দেখতে এত ভিড় অন্য কোনো সিনেমায় দেখেননি। একটা সময় পর নানা কারণে ছবি দেখা ছেড়ে দেন তিনি।
বেশির ভাগ অংশের ভাঙার কাজ শেষ, সামনের অংশটুকু গুঁড়িয়ে দিলেই আর চেনা যাবে না ময়মনসিংহ নগরীর পূরবী সিনেমা হলটি। এই বিনোদন কেন্দ্র ভাঙতে দেখে কৈশোরের স্মৃতিচারণ ও আক্ষেপ করলেন গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আবুল মিয়া।
মালিক পক্ষ জানায়, কয়েক বছর ধরে প্রতি শোতে পাঁচ-সাতজন দর্শক হয়। অনেক সময়
দর্শক না থাকায় শো বন্ধ থাকে। দিনের পর দিন স্টাফ খরচও না ওঠায় হল ভাঙার সিদ্ধান্ত
নিতে হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবন করে দর্শক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে পূরবী সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
অনেকে বলছেন, আগেও যতগুলো সিনেমা হল ভাঙা হয়েছে কর্তৃপক্ষের ছিল একই উছিলা। সিনেপ্লেক্সের জায়গায় হয়েছে মোবাইল, প্রসাধনীর জমকালো দোকান। এর আগে ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর অলকা, অজন্তা, ছায়াবাণী ও পূরবী সিনেমা হলে একজোগে বোমা হামলা হয়। এর পরই মূলত সিনেমা হলগুলোয় দর্শকসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে। করোনার পর থেকে সেই সংখ্যা আরও বাড়ে। হলের নিচতলায় ৭০০ আসন, দ্বিতীয় তলায় ডি চেয়ার ছিল ৩২০টি এবং বক্স ছিল ২০টি। এ ছাড়া মানসম্মত সিনেমা তৈরি না হওয়ায় দর্শক হারিয়েছে সিনেমা হলগুলো।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, ৮-১০ জন শ্রমিক দেয়াল ভেঙে ইট, পাথর ও লোহা সরানোর কাজ করছেন। শ্রমিক মুকুল মিয়া বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে হল ভাঙার কাজ শুরু করেছি। দৈনিক গড়ে ১২-১৪ জন শ্রমিক কাজ করছি। প্রথম-দ্বিতীয় তলার ছাদ এবং দেয়াল ভাঙা হয়েছে। সম্পূর্ণ ভাঙতে আরও কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে।’
ঠিকাদার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘১৫ লাখ টাকায় পূরবী সিনেমা হলের পুরাতন মালপত্র
ক্রয় করেছি। আমরা সেগুলো ভেঙে এখন জায়গা খালি করছি। সব মিলিয়ে আমাদের চার মাস
সময় লাগবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা জলিল মিয়া জানান, এই হলটি দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন তারা। এক
সময় সিনেমার জোয়ার ছিল। তাই মানুষ হলের আশপাশে অনেক ভিড় জমাত। এখন ছবি না চলার কারণে মালিকপক্ষ হল ভাঙছে। এতে খারাপ লাগলেও মালিক তো আর বছরের পর বছর লোকসান গুনবেন না।
পূরবী সিনেমা হলের ম্যানেজার মোখতার হোসেনের ভাষ্য, দেশের নামকরা কয়েকটি হলের একটি ছিল পূরবী। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর আগে হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন ভালো ভালো ছবি নির্মিত হওয়ায় হলভর্তি দর্শক হতো। বিশেষ করে করোনার পর হলের দর্শক একেবারে ধস নামে। তিনি বলেন, ‘সবশেষ এক মাস আগে আমরা একবুক জ্বালা ছবিটি চালিয়েছিলাম। আমার কিছু আর জানা নেই।’