শিশুকে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছেন হিটু শেখ
Published: 16th, March 2025 GMT
শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ মাগুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার বিকেলে মাগুরা সদর থানার ওসির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাগুরা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার চার আসামিকেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি হিটু শেখ এরই মধ্যে শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ বিষয়ক আলামত ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য সিআইডি বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় গত ৫ মার্চ রাতে আট বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনার পর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হিটু শেখকে প্রধান করে মামলা করেন শিশুটির মা।
এদিকে, শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সেভ দ্য উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন নামে একটি সামাজিক সংগঠন। রোববার বেলা ১১টায় মাগুরা জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দোষীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। দেশে প্রচলিত আইনে ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার বিধান রয়েছে। সেখানে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারিক কাজ শেষ দেখতে চাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ হত য
এছাড়াও পড়ুন:
বরগুনায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও কিশোরীর বাবাকে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
বরগুনায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামিদের এবং মামলা করার জের ধরে ওই কিশোরীর বাবাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরগুনা পৌর শাখার আয়োজনে পৌর শহরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দাবিতে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আয়োজনে মানববন্ধন হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে।
আরও পড়ুন‘পোলারে মাইর্যা ফালাইছে, নাতনিডার জীবনও শ্যাষ করলো’৫ ঘণ্টা আগেপরিবারটির ভাষ্য, বরগুনা সদরের বাড়ি থেকে ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ওই কিশোরী (১৪)। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামের এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন মুখে কাপড় গুঁজে কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন ৫ মার্চ সকালে ওই কিশোরীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। পরের দিন স্থানীয় লোকজন দুজনকে ধরে পুলিশে দেন। পুলিশ সিজিতকে আটক করে এবং তাঁর বন্ধুকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়। কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাতে থাকে আসামিপক্ষ। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মুঠোফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে কিশোরীর বাবার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির বাবাসহ চারজনকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি হামলা কখনোই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেনে নেয় না। যখনই কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। মেয়েকে ধর্ষণের পর বিচার চেয়ে মামলা করায় বাবাকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। এটি জাহেলিয়াতি যুগের চেয়েও বর্বর একটি ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক।
মানববন্ধনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মওলানা মিজানুর রহমান কাসেমি, সাধারণ সম্পাদক আবদুর সাকুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওলানা নুরুল আমিন, পৌর শাখার সভাপতি গোলাম হায়দার, সহসভাপতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের জেলা শাখার আহ্বায়ক মানিক শিকদার ও সদস্যসচিব জয়দেব রায় উপস্থিত ছিলেন।
একই দাবিতে বেলা ১১টায় বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সনাক ও টিআইবির পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেই সঙ্গে বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদ ও জাগোনারী কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সনাক সভাপতি মনির হোসেন, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগম, জাগোনারীর শুক্লা মুখার্জি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক সুখরঞ্জন শীল, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সেলিনা আক্তার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ সিকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ বরগুনা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়দেব রায় ও সমাজসেবক তপন চন্দ্র দাস।
বরগুনায় কিশোরীকে ধর্ষণের মামলা করায় বাবাকে হত্যার ঘটনার বিচারসহ ১১ দফা দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। বক্তারা বলেন, সারা দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। এটা মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি গোষ্ঠী নানাভাবে নারীদের হেনস্তা করে আসছে। এটা খুব ভয়াবহ অবস্থা। এর পরিণতি ভালো হবে না। বরগুনায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অপহরণের পরে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার দাবিতে তার বাবা বরগুনা থানায় মামলা করলে তাঁকেও খুন করা হয়। এ দুই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বক্তারা।
বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও তাঁর এক বন্ধুকে আটক করা হয়েছিল। এরপর তাঁদের ওই কিশোরীর মুখোমুখি করা হয়। তখন একজনকে কিশোরী শনাক্ত করেনি। তাই মুচলেকা রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিশোরীর বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে একজনের বিষয়ে তদন্ত করে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল তদন্ত করছে।