অপরিচিত এক নারীর সঙ্গে শিশুসন্তানকে রুটি ও কলা কিনতে বাইরে দোকানে পাঠান মা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেলেও সন্তান না ফেরায় ওই নারী হাসপাতালে কান্নাকাটি শুরু করেন। জানতে পেরে ঘটনাটি পুলিশকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ এসে ঘটনা তদন্ত করতে থাকে। এর মধ্যে তিন ঘণ্টা পর এক ব্যক্তির সহায়তায় চুরি হওয়া শিশুটি মায়ের কোলে ফিরে আসে।

আজ রোববার সকালে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। চুরি হওয়া শিশুটির নাম লাইজু আক্তার (৯)। জেলার শিবালয় উপজেলার দড়িকয়ড়া গ্রামের কৃষক আবদুল কাইয়ুমের মেয়ে লাইজু স্থানীয় কয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

হাসপাতাল ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, অসুস্থতার কারণে তিন দিন আগে এক বছরের ছোট সন্তানকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন মা শিল্পী বেগম ও কাইয়ুম দম্পতি। আজ ভোরে পারিবারিক কাজে বাড়িতে চলে যান কৃষক কাইয়ুম। সকালে বড় সন্তান লাইজুর ক্ষুধা লাগায় ছোট সন্তানকে একা হাসপাতালের শয্যায় রেখে খাবার কিনতে বাইরে যেতে পারেননি মা শিল্পী। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বোরকা পরিহিত অপরিচিত এক নারী তাঁকে বলেন, তিনি কলা ও রুটি এনে দেবেন। পরে তাঁকে ৫০০ টাকার একটি নোট দিয়ে কলা ও রুটি কিনতে দিলে ওই নারী শিশু লাইজুকে তাঁর সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। পরে শিশুটিকে তাঁর সঙ্গে পাঠানো হয়। এরপর দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শিশুসন্তানকে নিয়ে ওই নারী হাসপাতালে না ফেরায় কান্নাকাটি শুরু করতে থাকেন শিল্পী বেগম। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।

সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেব দুলাল বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শিশুটিকে উদ্ধারের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়। পরে হাসপাতাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের এক দোকানি শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

ফুটপাতের দোকানদার হাবিবুর রহমান বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে বোরকা পরিহিত এক নারী তাঁর দোকানে যান। শিশুটিকে নিজের সন্তান পরিচয় দিয়ে কিছুক্ষণ দেখে রাখার কথা বলে ওই নারী সেখান থেকে চলে যান। প্রায় আধা ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওই নারী না আসায় শিশুটি কান্না শুরু করে। পরে শিশুটির কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর দোকানদার হাবিবুর তাকে হাসপাতালে তার মায়ের কাছে নিয়ে আসেন। মেয়েকে ফিরে পেয়ে শান্তির নিশ্বাস ছাড়েন শিল্পী বেগম।

শিল্পী বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে দুই বাচ্চা নিয়ে আমি একা আছিলাম। বড় মেয়ে লাইজুর খিদা (ক্ষুধা) লাগায় ছোট বাচ্চারে হাসপাতালের বেডে রাইখ্যা বাইরে যাইতে পারি নাই। এক মহিলা আইস্যা কইলো আমারে ট্যাহা দেন কলা-রুটি আইন্যা দেই। পরে ট্যাহা ও মেয়েরে সঙ্গে নিয়্যা যায়। আমি তো আর বুঝতে পারি নাই, মেয়েরে চুরি কইর‌্যা নিয়্যা ওই মহিলা পালাইব।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, অপরিচিত কারও কিছু খাওয়া ও ছোট শিশুসহ জিনিসপত্র নিজ দায়িত্বে রাখার বিষয়ে হাসপাতালে আসা ও ভর্তি থাকা রোগী এবং রোগীর স্বজনদের প্রতিনিয়ত সতর্ক করা হয়। তবু কেউ কেউ বোকার মতো ব্যবহার করেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আমান উল্লাহ বলেন, শিশুকে চুরি করা বোরকা পরিহিত ওই নারীকে শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

খরচই ওঠে না, ভেঙে ফেলা হচ্ছে সিনেমা হল

দুপুরের কড়া রোদ্দুর মাথায় গলে পড়ছে। কোনোমতে গামছা প্যাঁচিয়ে জিরানোর ছলে কী যেন ভাবছিলেন হাতুড়ি পিটিয়ে দেয়াল ভাঙার শব্দ শুনতে শুনতে। ষাটোর্ধ্ব বয়সী রিকশাচালক আবুল মিয়া এই শহরেই রিকশা চালান তিন যুগের বেশি সময় ধরে। চোখের সামনেই তাঁর কৈশোর-যৌবনের বিনোদনের জায়গাটা ভাঙা হচ্ছে। জানালেন বেদের মেয়ে জোছনা ছবিটা তাঁর খুব প্রিয়। এই শহরে সিনেমাটি যখন আসে টানা ১০ বার দেখেছেন। শেষে মায়ের বানানো গোবরের লাকড়ি বিক্রি করে সিনেমা দেখেছেন। তাঁর মতে সিনেমা দেখতে এত ভিড় অন্য কোনো সিনেমায় দেখেননি। একটা সময় পর নানা কারণে ছবি দেখা ছেড়ে দেন তিনি।
বেশির ভাগ অংশের ভাঙার কাজ শেষ, সামনের অংশটুকু গুঁড়িয়ে দিলেই আর চেনা যাবে না ময়মনসিংহ নগরীর পূরবী সিনেমা হলটি। এই বিনোদন কেন্দ্র ভাঙতে দেখে কৈশোরের স্মৃতিচারণ ও আক্ষেপ করলেন গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আবুল মিয়া।
মালিক পক্ষ জানায়, কয়েক বছর ধরে প্রতি শোতে পাঁচ-সাতজন দর্শক হয়। অনেক সময় 
দর্শক না থাকায় শো বন্ধ থাকে। দিনের পর দিন স্টাফ খরচও না ওঠায় হল ভাঙার সিদ্ধান্ত 
নিতে হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবন করে দর্শক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে পূরবী সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
অনেকে বলছেন, আগেও যতগুলো সিনেমা হল ভাঙা হয়েছে কর্তৃপক্ষের ছিল একই উছিলা। সিনেপ্লেক্সের জায়গায় হয়েছে মোবাইল, প্রসাধনীর জমকালো দোকান। এর আগে ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর অলকা, অজন্তা, ছায়াবাণী ও পূরবী সিনেমা হলে একজোগে বোমা হামলা হয়। এর পরই মূলত সিনেমা হলগুলোয় দর্শকসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে। করোনার পর থেকে সেই সংখ্যা আরও বাড়ে। হলের নিচতলায় ৭০০ আসন, দ্বিতীয় তলায় ডি চেয়ার ছিল ৩২০টি এবং বক্স ছিল ২০টি। এ ছাড়া মানসম্মত সিনেমা তৈরি না হওয়ায় দর্শক হারিয়েছে সিনেমা হলগুলো।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, ৮-১০ জন শ্রমিক দেয়াল ভেঙে ইট, পাথর ও লোহা সরানোর কাজ করছেন। শ্রমিক মুকুল মিয়া বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে হল ভাঙার কাজ শুরু করেছি। দৈনিক গড়ে ১২-১৪ জন শ্রমিক কাজ করছি। প্রথম-দ্বিতীয় তলার ছাদ এবং দেয়াল ভাঙা হয়েছে। সম্পূর্ণ ভাঙতে আরও কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে।’
ঠিকাদার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘১৫ লাখ টাকায় পূরবী সিনেমা হলের পুরাতন মালপত্র 
ক্রয় করেছি। আমরা সেগুলো ভেঙে এখন জায়গা খালি করছি। সব মিলিয়ে আমাদের চার মাস 
সময় লাগবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা জলিল মিয়া জানান, এই হলটি দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন তারা। এক 
সময় সিনেমার জোয়ার ছিল। তাই মানুষ হলের আশপাশে অনেক ভিড় জমাত। এখন ছবি না চলার কারণে মালিকপক্ষ হল ভাঙছে। এতে খারাপ লাগলেও মালিক তো আর বছরের পর বছর লোকসান গুনবেন না।
পূরবী সিনেমা হলের ম্যানেজার মোখতার হোসেনের ভাষ্য, দেশের নামকরা কয়েকটি হলের একটি ছিল পূরবী। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর আগে হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন ভালো ভালো ছবি নির্মিত হওয়ায় হলভর্তি দর্শক হতো। বিশেষ করে করোনার পর হলের দর্শক একেবারে ধস নামে। তিনি বলেন, ‘সবশেষ এক মাস আগে আমরা একবুক জ্বালা ছবিটি চালিয়েছিলাম। আমার কিছু আর জানা নেই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ