ইউরোপে পড়ার জন্য ইরাসমাস মুন্ডাস বেশ জনপ্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ একটি বৃত্তি। ইউরোপের নামী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সমন্বিতভাবে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে আমি এই বৃত্তি পাই। সেবার বিশ্বজুড়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। শেষে ৪৪টি দেশ থেকে আমরা ৮১ জন নির্বাচিত হই। পরে জেনেছি, এর আগের পাঁচ বছর বাংলাদেশ থেকে কেউই এই প্রোগ্রামে আসেনি। এখন অবশ্য অনেকেই ইরাসমাস মুন্ডাসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যাঁরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে চান, তাঁদের সহায়তা করার জন্যই আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।

আছে নানা সুবিধা

২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি) ভর্তি হয়েছিলাম। স্নাতক শেষে চাকরিও শুরু করি। তবে আগে থেকেই আমার দেশের বাইরে মাস্টার্স করার পরিকল্পনা। তাই খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। এক সহকর্মীর কাছ থেকে ইরাসমাস মুন্ডাসের খোঁজ পেয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আবেদন করি।

ইরাসমাস বৃত্তির বড় সুবিধা হলো, ইউরোপের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ। আমার হোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ডেনমার্কের আরহুস ইউনিভার্সিটি ও ড্যানিশ স্কুল অব মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিজম। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুন্ডুসিয়ান হিসেবে আরহুসে শিক্ষা যাত্রা শুরু করি। এখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে, যা যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। প্রাগ, মিউনিখ, অ্যামস্টারডাম ও লন্ডনের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেওয়ার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। এখন বিজনেস ও ইনোভেশনের ওপর মেজর করছি। এখানেও আমি একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। আমাদের ক্লাসের বেশির ভাগ শিক্ষকই গার্ডিয়ান, বিবিসি, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসসহ নানা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। যেহেতু অভিজ্ঞ সব মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাচ্ছি, তাই মাস্টার্স শেষে পিএইচডি করার পরিকল্পনা আছে।

আরও পড়ুন২০২৫ সালের ১০ ফেলোশিপের খোঁজ১২ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন নতুন দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, গবেষণা এবং বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ করে দেয় এই বৃত্তি। ক্লাসে বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের দেখি। আমার অনেক বন্ধু ইরান, চীন থেকেও এসেছে। শিক্ষার্থীর যাতায়াত, স্বাস্থ্যবিমা ও গবেষণা-সম্পর্কিত খরচ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি, লাইব্রেরি ফি, পরীক্ষা ফি, সবই বৃত্তির আওতায় পড়ে। নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিতে হয় আমাদের।

ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা। নির্বাচিত হলেই যে সব খরচ দেওয়া হয় বা প্রতিটি প্রোগ্রামের বৃত্তি একই রকম—তা কিন্তু নয়। সেলফ ফান্ডেড বা নিজ অর্থায়নে পড়ার জন্যও অনেকে নির্বাচিত হন। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকেই তাঁর খরচ বহন করতে হয়।

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষা নিয়ে ৫ ভুল ধারণা০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কীভাবে আবেদন করবেন

জয়েন্ট মাস্টার্স প্রোগ্রামের চারটি সেমিস্টারে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের হিসেবে, সবচেয়ে বেশি বৃত্তি পাওয়া ২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই বৃত্তি নিয়ে তিন শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।

ইরাসমাস মুন্ডাসের স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। স্নাতকের শেষ বর্ষেও আবেদন করতে পারবেন। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা আইইএলটিএসে প্রোগ্রাম ভেদে স্কোর থাকতে হবে ৬.

৫ থেকে ৭.০। পছন্দের প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো, তবে বাধ্যতামূলক নয়।

আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রতিটি প্রোগ্রামের নাম ও ঠিকানা পাওয়া যাবে। তারপর কোর্স, আবেদনপ্রক্রিয়া ও বৃত্তি সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি ‘কন্টাক্ট প্রজেক্ট পারসন’ অপশনে ক্লিক করে যোগাযোগ করা যাবে।

ইরাসমাস মুন্ডাস বৃত্তির তিনটিতে আবেদনের সময় তিন রকম। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট মোবিলিটি (আইসিএম) অ্যাকশন, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) অ্যাকশন ও ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স (ইএমজেএম) অ্যাকশনের জন্য বিভিন্ন সেশনে আবেদন করতে হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ব ত ত র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৩ টাকা বা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তাতে গত ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২১৪ টাকা। ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় গত রোববার। ওই দিন বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে তিন টাকা কমেছিল। এর পরের চার দিন মূল্যবৃদ্ধিতে কোম্পানিটি বড় চমক দেখায়। চার দিনেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৩ টাকা। তাতেই সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয়। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৭৪ টাকায়।

হঠাৎ গত সপ্তাহে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামনে বছর শেষের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে কোম্পানিটি। গত ডিসেম্বরে কোম্পানিটির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, বিমা খাতের কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে হিসাব বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিন বা চার মাসের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করতে হয়। সাধারণত পরিচালনা পর্ষদের যে সভায় বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়, সেই সভা থেকেই বছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী, হাইডেলবার্গ সিমেন্টকে চলতি মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে লভ্যাংশের ঘোষণা দিতে হবে। এই ঘোষণা সামনে রেখে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

* চলতি মাসের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে কোম্পানিটিকে।
* সিমেন্ট খাতের ৭ কোম্পানির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার।
* ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ, ২৭৪ টাকা।

নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ স্ক্যান ও রুবি ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বাজারজাত করে থাকে। শেয়ারবাজারে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার। ঢাকার শেয়ারবাজারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দেশীয় মালিকানাধীন আর বাকি দুটি বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি। সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর গণনা হয় দেশের অর্থবছরের সঙ্গে সংগতি রেখে, অর্থাৎ জুলাই-জুনকেন্দ্রিক। আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর মূলত ক্যালেন্ডার বছর বা জানুয়ারি-ডিসেম্বরকেন্দ্রিক।

গত বছরের প্রথম ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৪১ কোটি টাকার মুনাফা করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকা কম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৫১ কোটি টাকা। গত বছর কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ বিক্রি বা ব্যবসা কমে যাওয়া। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটি ব্যবসা কমেছে ২৭১ কোটি টাকার। একদিকে ব্যবসা কমেছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই কারণে মুনাফা কমে গেছে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসের মধ্যে শেষ ৩ মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এক প্রান্তিকে লোকসানের পরও আগের দুই প্রান্তিকের মুনাফার কারণে এটি শেষ পর্যন্ত মুনাফার ধারাতেই ছিল।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি আড়াই টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর এই লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল নগদ ১০ শতাংশ। এখন শেয়ারধারীরা অপেক্ষায় আছেন গত বছরের লভ্যাংশের জন্য। যে লভ্যাংশ সামনে রেখে কোম্পানির শেয়ারের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে গত সপ্তাহে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি মাঝারি মূলধনের একটি কোম্পানি। কোম্পানিটির মূলধন ৫৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে এটির শেয়ারের প্রায় ৬১ শতাংশেরই মালিকানায় ছিলেন উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। বাকি ৩৯ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৬ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারধারণ-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারধারীর সংখ্যা ছিল মোট ১০ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯১৭ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, যাঁদের হাতে কোম্পানিটির ৫ হাজারের কম শেয়ার রয়েছে। এসব বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৬ শতাংশ ধারণ করেন। আর ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ২২৬ জন। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ শেয়ার রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩৮ জন। আর ২ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে ৮ জন বিনিয়োগকারীর হাতে। ৫ লাখ থেকে ১ কোটি শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ৬ জন। এক কোটির বেশি শেয়ার রয়েছে শুধু কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রামে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা
  • গাজা সিটির একমাত্র সচল হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • গাজায় এ পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইন্টারনেটের ব্যবহার কম উৎপাদনশীল খাতে
  • হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা