সব করদাতার অনলাইন রিটার্ন বাধ্যতামূলক, প্রস্তুতি শুরু এনবিআরের
Published: 16th, March 2025 GMT
আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সবার জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হবে—এ ঘোষণা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগেই দিয়েছে। এ জন্য প্রস্তুতি পর্ব শুরু করেছে সংস্থাটি।
আজ রোববার সরকারি চাকরিজীবী, পেশাজীবী, সব তফসিল ব্যাংক, মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধি, কর আইনজীবী, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদসহ সব অংশীজনের জন্য কর্মশালার আয়োজন করে এনবিআর। সেখানে অনলাইন রিটার্ন জমার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে ‘ই-রিটার্ন সিস্টেমের সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানের উপায় নির্ধারণ’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। এ ছাড়া এনবিআর সদস্য ও কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এনবিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর অনলাইন রিটার্ন দাখিলে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৬ জন করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। একই সময়ে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৩০৫ জন করদাতা অনলাইন রিটার্নের জন্য নিবন্ধন নিয়েছেন। আগামী অর্থবছর থেকে শতভাগ আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল বাধ্যতামূলক করার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ঝামেলামুক্ত ও সময়সাশ্রয়ী। অনলাইন রিটার্ন ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে রিটার্ন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করত, তা অনেকাংশ দূর হয়েছে। আয়কর রিটার্ন শতভাগ অনলাইন হলে রিটার্ন দাখিলের হার অনেক বেড়ে যাবে বলে তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আয়কর র ট র ন করদ ত
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ হঠাৎ বাড়ছে
দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত সরকার নিট ৩৮ হাজার ৫১০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে সরকারের ব্যাংক ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর মানে প্রথম ৭ মাসে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, শেষ এক মাস ১০ দিনে নিয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বাড়ার কারণের মধ্যে রাজস্ব আদায় কম হওয়া, সঞ্চয়পত্র থেকে প্রত্যাশিত ঋণ না পাওয়া এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণছাড় কমে যাওয়া উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ সময়ে স্বাভাবিকভাবে সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা অনেক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া বাজেটে চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে। তবে বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতিবছর বেড়ে থাকে। তবে চলতি
অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব
আদায় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকায় নেমেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ ঋণাত্মক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে যা ঋণ
নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে এ খাতে আগের দায় শোধ হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বেশি। এ ছাড়া বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ছাড় ও প্রতিশ্রুতি কমেছে। সব মিলিয়ে শেষ দিকে এসে
ব্যাংক ঋণে নির্ভরতা কিছুটা বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ১০ মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ৮৫ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ঋণের ৪৭ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পরিশোধ করায় মুদ্রাবাজার সংকোচন হয়। অবশ্য এ সময়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে যা কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
মূলত বিগত সরকারের সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ঋণের নামে বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাৎ করে। এখন আর সে ঋণ ফেরত না আসায় কোনো কোনো ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না। যে কারণে গত নভেম্বর থেকে তিন দফায় বিশেষ ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ মার্চ সার্বিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে যা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণস্থিতি বেড়ে ৪ লাখ ৪ হাজার ১০৫ কোটি টাকা হয়েছে। গত জুন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থিতি কমে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকায় নেমেছে। গত জুন শেষে যা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গোপনে ‘ওভারড্রাফট’ খাতে নেওয়া ৪৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা সমন্বয় করে এখন ৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকায় নেমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। গত বছর আমানত বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ সময়ে ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের বিপরীতে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় শোধ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে মনে করেন গভর্নর।