ভেনেজুয়েলার অপরাধ চক্র ত্রেন দে আরাহুয়ার সদস্য বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার জন্য একটি আদেশ জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে স্বল্প ব্যবহৃত ১৭৯৮ সালের বহিঃশত্রু আইন (এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট) ব্যবহার করে ওই বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার কারণে শনিবার তা স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

আদালতের সিদ্ধান্ত আসার কয়েক ঘণ্টা আগে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের আদেশটি প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি অপরাধ চক্রের হামলার শিকার, যারা অপহরণ, চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রেন দে আরাহুয়া, সিনালোয়া কারতেলসহ ছয়টি অপরাধী সংগঠনকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন প্রশাসন।

তবে এই সিদ্ধান্তের ওপর ১৪ দিনের স্থগিতাদেশ জারি করে বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ বলেছেন, প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় হামলা (ইনভেশন) শব্দটি ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কোনো রাষ্ট্র কর্তৃক যুদ্ধ ঘোষণা করলেই কেবল এই কথা বলা যেতে পারে।

ওই আইনের ভিত্তিতে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে অনিয়মিত যুদ্ধ ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল অপরাধ চক্রটি। ওই ঘোষণার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী ভেনেজুয়েলার নাগরিক, যারা অপরাধ চক্রের সদস্য বলে অভিযুক্ত, তাদের বহিঃশত্রু হিসেবে অবিলম্বে আটক, নিয়ন্ত্রিত বা নির্বাসিত করা যেতে পারে। 

এদিকে ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) এবং রেডিও ফ্রি এশিয়াসহ মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে কর্মরত শত শত সাংবাদিককে বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে আমেরিকার বিশ্বব্যাপী মিডিয়া প্রভাবের ওপর একটি বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভিওএ, রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপের মতো সংবাদমাধ্যমগুলোর শত শত সাংবাদিক ও কর্মীকে সপ্তাহান্তে একটি ই-মেইল পাঠানো হয়। এতে  বলা হয়, তাদের আর অফিসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া এতে তাদের প্রেস পাস, অফিসের দেওয়া টেলিফোন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম জমা দিতেও বলা হয়। খবর রয়টার্স ও সামা নিউজের।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

‘জুলাই অভ্যুত্থান’ শক্তির নতুন প্ল্যাটফর্ম আসছে এপ্রিলে

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদের নেতৃত্বে এপ্রিলে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন প্ল্যাটফর্ম।

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ না দেওয়া জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অংশ নতুন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই প্ল্যাটফর্ম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

রবিবার (১৬ মার্চ) আলী আহসান জুনায়েদ তার ফেসবুক প্রোফাইলে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। কার্যক্রম নিয়ে এপ্রিলে আত্মপ্রকাশ করতে করবে তাদের এই প্ল্যাটফর্ম, যাকে শক্তিশালী হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

এনসিপি গঠনের পরই এমন একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম আসার কথা শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে জুনায়েদের ঘোষণা থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হলো।

অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক সভাপতি জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শরফুদ্দিনসহ অন্তত ৩০ নেতা যোগ দেন জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। 

শিবিরের সাবেক নেতারা আলী আহসান জুনায়েদকে এনসিপির সদস্য সচিব পদে চেয়েছিলেন। ছাত্রশক্তি, ছাত্র অধিকার, ছাত্রলীগের পক্ষত্যাগী এবং বাম সংগঠন থেকে আসা নেতারাও নিজ নিজ বলয় থেকে শীর্ষ পদ চেয়েছিলেন।

তখন বলাবলি হয়েছে, পদ-পদবি নিয়ে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহদের সঙ্গে বিরোধ সাবেক শিবির নেতারা এনসিপিতে যোগ দেননি। তারা এখন নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন।

এনসিপি গঠনের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি বা জনাক বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এই কমিটির ব্যানারে এখন কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। 

যোগ না দেওয়া নেতাদের ভাষ্য- আওয়ামী লীগ আমলে শিবির হত্যাকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, নতুন দলেও শুধু অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয়নি। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ রবিবার রাতে তার ফেসবুক প্রোফাইলে নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন।

এই অবস্থায় নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নিয়ে জুনায়েদের ফেসবুক পোস্টের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

‘আসসালামু আলাইকুম’ সম্বোধন করে জুনায়েদ লিখেছেন, “৩৬শে জুলাই ফতহে গণভবনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হলেও, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বহু মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।”

“পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান- এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেওয়ার কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে বলে মন্তব্য করে জুনায়েদ লিখেছেন, “এই পরিস্থিতিতে, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলো প্রকৃতই বাস্তবায়ন করতে চাই।”

“৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে, তা পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এই বিপ্লব পরিপূর্ণতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

ফেসবুক পোস্টে জুনায়েদ লিখেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব।”

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এই উদ্যোগে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আসুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গঠনের এই সংগ্রামে শামিল হই।”

নতুন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কমন্টে অংশ গুগল ফর্ম জুড়ে দিয়েছেন জুনায়েদ।

পোস্টের শেষে জুনায়েদ নিজেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শক্তির নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ