বরগুনায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও কিশোরীর বাবাকে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 16th, March 2025 GMT
বরগুনায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামিদের এবং মামলা করার জের ধরে ওই কিশোরীর বাবাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরগুনা পৌর শাখার আয়োজনে পৌর শহরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। একই দাবিতে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আয়োজনে মানববন্ধন হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে।
আরও পড়ুন‘পোলারে মাইর্যা ফালাইছে, নাতনিডার জীবনও শ্যাষ করলো’৫ ঘণ্টা আগেপরিবারটির ভাষ্য, বরগুনা সদরের বাড়ি থেকে ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ওই কিশোরী (১৪)। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামের এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন মুখে কাপড় গুঁজে কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন ৫ মার্চ সকালে ওই কিশোরীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। পরের দিন স্থানীয় লোকজন দুজনকে ধরে পুলিশে দেন। পুলিশ সিজিতকে আটক করে এবং তাঁর বন্ধুকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়। কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাতে থাকে আসামিপক্ষ। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মুঠোফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে কিশোরীর বাবার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির বাবাসহ চারজনকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি হামলা কখনোই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেনে নেয় না। যখনই কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। মেয়েকে ধর্ষণের পর বিচার চেয়ে মামলা করায় বাবাকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। এটি জাহেলিয়াতি যুগের চেয়েও বর্বর একটি ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক।
মানববন্ধনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মওলানা মিজানুর রহমান কাসেমি, সাধারণ সম্পাদক আবদুর সাকুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মওলানা নুরুল আমিন, পৌর শাখার সভাপতি গোলাম হায়দার, সহসভাপতি মাওলানা মো.
একই দাবিতে বেলা ১১টায় বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সনাক ও টিআইবির পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেই সঙ্গে বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদ ও জাগোনারী কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সনাক সভাপতি মনির হোসেন, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি নাজমা বেগম, জাগোনারীর শুক্লা মুখার্জি, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক সুখরঞ্জন শীল, বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সেলিনা আক্তার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ সিকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ বরগুনা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়দেব রায় ও সমাজসেবক তপন চন্দ্র দাস।
বরগুনায় কিশোরীকে ধর্ষণের মামলা করায় বাবাকে হত্যার ঘটনার বিচারসহ ১১ দফা দাবিতে মানববন্ধন করা হয়। বক্তারা বলেন, সারা দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। এটা মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি গোষ্ঠী নানাভাবে নারীদের হেনস্তা করে আসছে। এটা খুব ভয়াবহ অবস্থা। এর পরিণতি ভালো হবে না। বরগুনায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অপহরণের পরে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার দাবিতে তার বাবা বরগুনা থানায় মামলা করলে তাঁকেও খুন করা হয়। এ দুই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বক্তারা।
বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও তাঁর এক বন্ধুকে আটক করা হয়েছিল। এরপর তাঁদের ওই কিশোরীর মুখোমুখি করা হয়। তখন একজনকে কিশোরী শনাক্ত করেনি। তাই মুচলেকা রেখে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিশোরীর বাবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে একজনের বিষয়ে তদন্ত করে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল তদন্ত করছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ক শ র বরগ ন য় র রহম ন ইসল ম র ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘গাজা যুদ্ধ টিকিয়ে রেখে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সুবিধা নিচ্ছে’
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ টিকিয়ে রেখে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সুবিধা নিচ্ছে। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ‘গাজায় নারী শিশুসহ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ’ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এ কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, গাজার যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নারী ও শিশু। জাতিসংঘ কেন এই যুদ্ধ বন্ধ করতে সফল হচ্ছে না? জাতিসংঘে যারা অর্থ সহায়তা দেয়, তারাই যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছে। গাজার যুদ্ধ শত বছরের সমস্যা। এই সমস্যাটা টিকিয়ে রেখে সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সুবিধা নিচ্ছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ টিকিয়ে রাখছে। যারা মানবতার পক্ষে তাদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা যুদ্ধকে না বলার জন্য শক্ত জনমত গড়ে তুলুন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, অ্যাকশন এইডের মৌসুমী বিশ্বাস, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড নেটওয়ার্কিংয়ের পরিচালক জনা গোস্বামী, গণশক্তির নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গাজা ও রাফায় ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর সামরিক অভিযান, অবরোধ ও গণহত্যা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। শিশু, গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ ও সাধারণ মানুষদের নির্বিচারে হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সকল ধরনের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিতে হবে। বাংলাদেশি পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরায়েল (ইসরায়েল ব্যতীত) পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ, ওআইসি ও অন্যান্য ফোরামে সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। গাজা ও রাফায় মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহায়তায় অংশগ্রহণের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া আরব বিশ্বের স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়- এই অবস্থান বাংলাদেশকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে বিশ্ব জনমত গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার কূটনৈতিক প্রয়াস নিতে হবে। ইসরায়েলি বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানো শুধু একটি রাষ্ট্রের প্রতি সহানুভূতি নয়, বরং বৈশ্বিক মানবতা রক্ষার সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ।