বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচকে আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে বসছে আলুর হাট। এতে সপ্তাহে তিন দিন বগুড়া-জয়পুরহাট-হিলি আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিচকে শিবগঞ্জ উপজেলার কিচকে অনেক ব্যাপারী ও পাইকার কেনা আলু সড়কের ওপর স্তূপ করেন। কেউ কেউ সড়কের মধ্যেই যানবাহনে আলু ওঠানো–নামানোর কাজ করেন। এতে এ আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে চলাচলকারী বগুড়া-জয়পুরহাট, বগুড়া-ধামইরহাট, বগুড়া-হিলি-দিনাজপুর রুটের বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।

বগুড়া বাস মিনিবাস কোচ পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তালুকদার বলেন, বগুড়া-জয়পুরহাট রুটে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার কোচ চলাচল করে। কিচকে মহাসড়কের পাশে হাট বসার কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা দেয়। বগুড়া থেকে ছেড়ে যাওয়া মিনিবাস জয়পুরহাট পৌঁছাতে গড়ে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু যানজটের কারণে সকাল ছয়টায় ছেড়ে যাওয়া বাস দুপুরেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। প্রতিবছর আলুর মৌসুমে কিচক হাটে যান চলাচল নিয়ে এ নজিরবিহীন দুর্ভোগ পোহাতে হলেও এদিকে কারও কোনো নজর নেই।

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে কিচক হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের যানজট হরিপুর থেকে সাধুরিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। শত শত বাস, ট্রাক, ভটভটি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা মহাসড়কে আটকা পড়ে আছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোশারফ হোসেন বলেন, পাঁচজন যাত্রী নিয়ে সকাল সাতটা থেকে যানজটে আটকা। তিনি কালাই থেকে মোকামতলা যাচ্ছেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত কিচক হাট অতিক্রম করতে পারেননি তিনি।

কিচকে আলুর হাটের যানজটে আটকা পড়া জয়পুরহাটের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এসো-র নির্বাহী পরিচালক মতিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি আলুর হাটের যানজটে আটকা পড়ে আছেন। তিনি বলেন, সড়কের ওপর হাট বসিয়ে এভাবে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ঠেলে দেওয়া চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।

কিচক বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, কিচক হাট ইজারা দিয়ে সরকার গড়ে ২০ লাখ টাকা বছরে আয় করে।  যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেই সরকারি দলের লোকজন হাট ইজারা পান। আর দলীয় নেতারা ইজারা পাওয়ার পর প্রভাব বিস্তার করে সড়কের ওপর হাট বসিয়ে মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখে ঠেলে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যত দূর জেনেছি, কিচকে একটি হিমাগারে আলু আনলোডের কারণে যানজট হচ্ছে। তবে হিমাগার কিংবা হাট বসাসহ যে কারণেই হোক, যানজট ও মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল র হ ট র য নজট সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণের দায় একাই নিচ্ছেন মাগুরার সেই শিশুর বোনের শ্বশুর

মাগুরার সেই শিশুটিকে ধর্ষণের দায় একাই নিচ্ছেন তার বোনের শ্বশুর। অবশ্য এই মামলার বাকি তিন আসামির পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাকে হত্যার চেষ্টায় শামিল হয় তার ভগ্নিপতি। ওই সময় শিশুটির বোন রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

ধর্ষণের মামলায় দোষ স্বীকার করে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন মাগুরার সেই শিশুটির বোনের শ্বশুর।

আরো পড়ুন:

ফেনীতে যৌতুকের জন্য নববধূকে হত্যা, শ্বশুর গ্রেপ্তার

রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ-জেএসএস গোলাগুলি, নিহত ১

রবিবার (১৬ মার্চ) আদালত সূত্রে ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

৬ মার্চ সকালে শিশুটির বোনের শ্বশুর তাদের ঘরে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করেন। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে সারা দেশে তোলপাড় হয়। গ্রেপ্তার হন আসামিরা।

গত শনিবার বিকেলে মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায় ওই আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

জবাবন্দিতে তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে তার ছোট ছেলের (বোনের স্বামী) কক্ষে শিশুটিকে একা শুয়ে থাকতে দেখে ঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। শিশুটি চিৎকার করলে তার গলা চেপে ধরেন। 

শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তিনি ধর্ষণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ব্লেড দিয়ে শিশুটিকে ক্ষতবিক্ষত করেন। শিশুটিকে অচেতন ফেলে রেখে মাঠে কাজ করতে চলে যান। ঘটনার সময় বাড়ির অন্য সদস্যরা যে যার কাজে বেরিয়েছিলেন। আর শিশুটির বোন বাড়ির এক কোণে রান্নাঘরে মোবাইল ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর শিশুটির বোন ঘরে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় প্রতিবেশী এক নারী ওই বাড়িতে আসেন। তারা শিশুটিকে অচেতন দেখে তার মাথায় পানি ঢালেন। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে শিশুটির বোনের শাশুড়ি বাড়িতে এসে প্রথমে শিশুটিকে স্থানীয় এক কবিরাজের বাড়িতে নেন। সেখান থেকে নেওয়া হয় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে মামলার বাদী শিশুটির মায়ের এজাহারের অমিল রয়েছে। বাদী বলেছিলেন, ঘটনা ঘটেছে রাতে। অবশ্য এজাহারে তিনি এ–ও উল্লেখ করেছিলেন, বিয়ের পর থেকে তার বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন মেয়ের শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে।

১ মার্চ মাগুরার শিশুটি নিজ বাড়ি থেকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। সেদিন সন্ধ্যায় শিশুটির মরদেহ হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় নেওয়া হয়। জানাজা শেষে উত্তেজিত জনতা শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে।

এর আগে ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগে মামলা করেন শিশুটির মা।

 মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে প্রধান আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিন আসামির রিমান্ড চলছে।

রবিবার দুপুরে মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা সদর থানায় সাংবাদিকদের বলেন, মামলার অন্যতম আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

শাহীন/মাগুরা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ