কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রশ্নফাঁসের ঘটনার প্রমাণ বিনষ্ট করার অভিযোগসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো স্মারকলিপিতে এসব দাবি জানান।

স্মারকলিপিতে পরীক্ষার পূর্বে অতিদ্রুত তদন্ত করে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রদানের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি বিনষ্ট করার চেষ্টা, অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীর খাতা জব্দ এবং আগামী পরীক্ষার পূর্বে অভিযুক্তের খাতার সঙ্গে প্রমাণাদি মিলিয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রদানের দাবি করেন।

আরো পড়ুন:

কুবিতে আপত্তিকর অবস্থায় ৪ বহিরাগত আটক

কুবিতে প্রশ্নফাঁস: অভিযুক্ত শিক্ষককে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

পাশাপাশি ৩০৬ কোর্সের বিফোর ফাইনালের ফলাফল অ্যাসাইনমেন্ট মিড নেওয়া ব্যতীত নাম্বারিং করার অভিযোগও করেন। 

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ড্রাইভে লিংক নষ্ট হওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছি না। তাই তদন্তের বিষয় জানতে আমরা বিভাগীয় প্রধানের কাছে গেলে তিনি আমাদের একটি লিখিত দিতে বলেন। সে ক্ষেত্রে আমরা লিখিত স্মারকলিপিটি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে জমা দিয়েছি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, “প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে এসেছিল। তারা এ বিষয়ে আমাকে অবগত করেছে এবং আমি তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা স্মারকলিপি হাতে পেয়েছি এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে এবং তাদের সিদ্ধান্ত ও উপস্থাপিত প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের অবশ্যই যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে।”

গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাতে একটি বেনামি মেইল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের চলমান তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় প্রতিটি কোর্সের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে দাবি করা হয়।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৩ মার্চ ওই ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষককে তদন্ত চলাকালে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়। এছাড়া তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম রকল প পর ক ষ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

১১ সড়ক খুঁড়ে ঠিকাদারের খবর নেই বছরের পর বছর

চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কয়েক বছর আগে সংস্কার কাজ শুরু হয় যশোর সদরের ১১টি সড়কে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কগুলোর কয়েকটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার-পাঁচ বছর আগেই। তবে এত বছরেও মাত্র ৫০-৬০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছেন ঠিকাদাররা। ম্যাকাডাম পদ্ধতিতে ইটের খোয়া ও বালু ফেলে রোলার ব্যবহার করলেও বছরের পর বছর কার্পেটিং (পিচের প্রলেপ) না করায় সড়কগুলোর অনেক স্থানেই আবার খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ইটের গুঁড়া ও বালুতে পথচারী ও সড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন হচ্ছেন নাস্তানাবুদ। আর বৃষ্টি হলে কাদায় চলা দায় হয়ে পড়ছে। 
এলজিইডি অফিস থেকে জানা গেছে, যশোর উপশহরের তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ পান ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হলেও পাঁচ বছরে সংস্কার হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। একই বছরের ৬ আগস্ট সংস্কার শেষ হওয়ার কথা ছিল দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া পর্যন্ত ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কে। তবে এই কাজও হয়েছে ৬০ শতাংশ। সদর উপজেলারই হুদার মোড় থেকে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হানিফ ট্রেডিং অ্যান্ড স্টিল হাউস। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই কাজ শেষের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। 

এ ছাড়া বসুন্দিয়া ইউনিয়নের সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কের ৪ দশমিক ১১৩ কিলোমিটার ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল, কিসমত-হৈবতপুরে শূন্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ২০২১ সালের ২০ আগস্ট, কিসমত হৈবতপুরে ২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ২০২০ সালের মে মাসে, বলাডাঙ্গা-মথুরাপুর সড়কের ২ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং মালঞ্চী কোল্ডস্টোর থেকে আরবপুর ইউপি সড়ক ২০২১ সালের জুলাইয়ে, শর্শনাদাহ-ভবানীপুর সড়কের এক দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক ২০২৪ সালের জুনে, একই বছরের সেপ্টেম্বরে মনোহরপুর যোগীপাড়া থেকে ওসমানপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক এবং ডিসেম্বরে চুড়ামনকাটি সড়ক সংস্কারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এই সময়ে কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।  
দীর্ঘদিনেও সড়কগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় তীব্র ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আরবপুরের ইজিবাইক চালক মহসিন আলী বলেন, রাস্তায় ইট দিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ফেলে রাখছে। যেমন ধুলাবালি ওড়ে, আবার গর্তে পড়ে বিভিন্ন সময় গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলে তো চলার কোনো উপায়ই থাকে না।
সালতা গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, এই রাস্তা দিয়ে ২০-২৫ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নিয়ে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। ইটের খোয়া বিছানোর পর চার থেকে পাঁচ বছর ফেলে রাখায় খানাখন্দের পাশাপাশি অনেক স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে গেছে।
হৈবতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠিকাদাররা এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। এর পর খোয়া দেয়। কিন্তু কার্পেটিং করার সময় খোঁজ পাওয়া যায় না। 
শর্শনাদাহ গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, শর্শনাদাহ-ভবানীপুরের সড়ক দিয়ে কৃষক সবজি-ধান আনা-নেওয়া করে। কয়েক বছর ধরে এই রাস্তা সংস্কারের নামে ফেলে রাখায় কৃষকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। 

আনন্দ বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার দাবি করেন, নানা সংকটের কারণে রাস্তার কাজ করতে দেরি হয়েছে। তবে ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন। আরেক ঠিকাদার আব্দুর রউফের দাবি, আগের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। এ জন্য কাজে দেরি হয়েছে। এখন দ্রুত কাজ শেষ করবেন।
যশোর সদর উপজেলা প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ রেজা বলেন, কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক সংস্কারের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অবহেলায় কাজ শেষ হয়নি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখায় জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত বাকি কাজ শেষ করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, যশোরে অনেক সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ না করে ঠিকাদাররা ফেলে রেখেছেন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ডেকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মতো কাজগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদাররা দ্রুত কাজ শুরু না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১১ সড়ক খুঁড়ে ঠিকাদারের খবর নেই বছরের পর বছর
  • শূকরের খোঁয়াড়ের মতো নোংরা এক বাসায় কেটেছে ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলো
  • চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাবির সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক