ক্ষোভ থেকে বাবাকে হত্যার পর পানিতে ফেলেন ছেলে: পুলিশ
Published: 16th, March 2025 GMT
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বলিগ্রাম পশ্চিমপাড়া বড়পুকুর থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধারের পর এটি হত্যাকাণ্ড ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে দেন ছেলে শাহীন মণ্ডল (৩৮)। ঘটনার পর থেকে নজরদারিতে রেখে শনিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শনিবার রাতে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার শাহীন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত বৃদ্ধ রজ্জব আলী (৬০) ভ্যানচালক ও পুকুর পাহারাদার (নাইটগার্ড) ছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর রাতে তিনি বাড়িতে খাবার খেয়ে পুকুর পাহারা দিতে যান। ২২ ডিসেম্বর কৃষকরা মাঠে কাজ করতে যাওয়ার পথে বৃদ্ধের লাশ পুকুরের পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। সে সময় পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় লোকজনের ধারণা ছিল, শীতের রাতে বৃদ্ধ পানিতে পড়ে যাওয়ার মৃত্যু হয়েছে। সে সময় কালাই থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়। বৃদ্ধের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেন পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ হলে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করলে আদালত লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। রজ্জব আলীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, এটি হত্যাকাণ্ড বলে জানতে পারে তারা। এ ঘটনায় নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী বাদী হয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কালাই থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, হত্যার পেছনে বৃদ্ধের বড় ছেলে শাহীনের হাত রয়েছে।
পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, বাবার প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকেই ছেলে শাহীন পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন। এ ঘটনা দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে লাশ পুকুরে ফেলে দেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছেলে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তদন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মবিরতিতেও চলছে মেট্রোরেল, সকালে টিকিট ছাড়াই গন্তব্যে যাত্রীরা
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মীকে এমআরটি পুলিশ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন মেট্রোরেলের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। দায়ী পুলিশ সদস্যদের একদিনের মধ্যে স্থায়ী বরখাস্ত না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
তবে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মেট্রোরেল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই মোতাবেক কর্মীদের কর্মবিরতির মধ্যেও আজ সোমবার সকাল থেকে শিডিউল মোতাবেক চলছে মেট্রোরেল। কাউন্টারে লোক থাকলেও তারা টিকিট বিক্রয় কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। এর ফলে টিকিট ছাড়াই চলাচল করছেন যাত্রীরা বলে জানা গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. তরিকুল ইসলাম সমকালকে জানান, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি। কিন্তু কাউন্টারে লোক থাকলেও তারা টিকিট বিক্রয় কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। ফলে টিকিট ছাড়াই ফার্মগেটে আসি।’
এর আগে গতকাল রাত দুইটার দিকে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’ এর ব্যানারে ঘটনা তুলে ধরে এক বিজ্ঞপ্তিতে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা পুলিশের উপপরিদর্শক মাসুদকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত এবং পরিদর্শক রঞ্জিত, কন্সটেবল শাস্তি দিতে হবে। তাদেরকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এমআরটি পুলিশ বিলোপ করে মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় নিজস্ব বাহিনী গঠন করতে হবে। স্টেশনে দায়িত্ব পালন করা মেট্রো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয়পত্র এবং অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে পারবে না। আহত কর্মীর চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মেট্রোরেলের সব স্টাফ কর্মবিরতি পালন করবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একাধিক কর্মী জানান, ১৭ মার্চ সকাল থেকে ট্রেন চালানো হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে দুজন মহিলা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে, স্টেশনের সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। নির্ধারিত পোশাক পরিহিত না হওয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা সুইং গেইট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরবর্তীতে পুলিশের এপিবিএন দুইজন সদস্য সুইং গেইট ব্যবহার করে, তা না লাগিয়ে চলে যান। মেট্রোর কর্মীরা কারণ জানতে চাইলে, তারা এবং কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে তর্কে জড়ান। কর্মরত কর্মীর কাঁধে বন্ধুক দিয়ে আঘাত করে। আরেকজন কর্মীকে এমআরটি পুলিশ বক্সে তুলে নিয়ে মারধর করে। এছাড়াও বন্দুক তাক করে গুলি করার হুমকি দেয়। পরে উপস্থিত অন্যান্য কর্মী ও যাত্রীরা এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে।