আধিপত্য বিস্তারে দুপক্ষে গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ
Published: 16th, March 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদীতে তালবাড়িয়া ডিগ্রির চরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকুড়লিয়া গ্রামের নছিরের ঘাট ও আকাতের ঘাটের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
চরকুড়লিয়া এলাকার সাইদুর রহমান ও কুষ্টিয়ার হরিপুর ইউনিয়নের মুকুলের পক্ষ আধিপত্যের দ্বন্দ্বে গোলাগুলি ও মহড়া দিয়েছে বলে জানা গেছে।
গভীর রাতে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে গ্রামের বাসিন্দারা জেগে ওঠেন। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এ নিয়ে আজ রোববার সকালেও দুপক্ষের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। প্রতিপক্ষের হামলায় চরকুড়লিয়া গ্রামের সাহাবুল ইসলামসহ দুজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সাইদুর ও মুকুল পক্ষের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীও জড়িত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী খোলস পাল্টে বিএনপির সঙ্গে মিশে চর এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় শক্তি প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে লক্ষ্মীকুন্ডার তালবাড়িয়া সরকারি খাস জমি প্রকাশ্যে ইজারা দেওয়া হয়। এরপর থেকে খাসজমি বণ্টন ও আধিপত্য নিয়ে সাইদুর ও মুকুল পক্ষের মধ্যে দৃশ্যমান দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদী শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের নছিরের ঘাট ও আকাতের ঘাট এলাকায় দুপক্ষ মহড়া দিতে শুরু করে। শনিবার রাত আড়াইটা পর্যন্ত দুপক্ষ গুলিবর্ষণসহ ককটেলের বিকট শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘শব্দ এত প্রকট ছিল যে, আমরা ভয়ে ঘরের লুকিয়ে ছিলাম। মনে হয়েছে, এগুলো গুলি ও ককটেলের শব্দ। লক্ষ্মীকুন্ডায় গোলাগুলি, মারামারি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং দখলের মূল কারণ ডিগ্রির চর তালবাড়িয়ার খাস ভূমি।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চরের সরকারি খাসজমি নিয়ন্ত্রণ করতেন দলের প্রভাবশালীরা। এরই মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে এক বছরের জন্য প্রকাশ্যে নিলামে ইজারা দেওয়া হয়। এরপর থেকে একাধিক পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে।
লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের বিট পুলিশিং ইনচার্জ (এসআই) জামাল মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিন গাড়ি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এলাকার প্রভাবশালী সাইদুর ও মুকুল পক্ষের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও আধিপত্য নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুকুলকে পাওয়া যায়নি। তাঁর প্রতিপক্ষ সাইদুর রহমানের ভাষ্য, রাতের ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রতিপক্ষ তাঁর লোকজনকে চরে যেতে দিচ্ছে না।
এলাকার আধিপত্য নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে জানিয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, তালবাড়িয়া ডিগ্রির চরের জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। কী কারণে সেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁর জানা নেই। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন এল ক য় এল ক র র ঘটন সরক র ককট ল
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মবিরতিতেও চলছে মেট্রোরেল, সকালে টিকিট ছাড়াই গন্তব্যে যাত্রীরা
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মীকে এমআরটি পুলিশ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন মেট্রোরেলের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। দায়ী পুলিশ সদস্যদের একদিনের মধ্যে স্থায়ী বরখাস্ত না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
তবে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মেট্রোরেল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেই মোতাবেক কর্মীদের কর্মবিরতির মধ্যেও আজ সোমবার সকাল থেকে শিডিউল মোতাবেক চলছে মেট্রোরেল। কাউন্টারে লোক থাকলেও তারা টিকিট বিক্রয় কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। এর ফলে টিকিট ছাড়াই চলাচল করছেন যাত্রীরা বলে জানা গেছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. তরিকুল ইসলাম সমকালকে জানান, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি। কিন্তু কাউন্টারে লোক থাকলেও তারা টিকিট বিক্রয় কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। ফলে টিকিট ছাড়াই ফার্মগেটে আসি।’
এর আগে গতকাল রাত দুইটার দিকে ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ’ এর ব্যানারে ঘটনা তুলে ধরে এক বিজ্ঞপ্তিতে ৬ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা পুলিশের উপপরিদর্শক মাসুদকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত এবং পরিদর্শক রঞ্জিত, কন্সটেবল শাস্তি দিতে হবে। তাদেরকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এমআরটি পুলিশ বিলোপ করে মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় নিজস্ব বাহিনী গঠন করতে হবে। স্টেশনে দায়িত্ব পালন করা মেট্রো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয়পত্র এবং অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে পারবে না। আহত কর্মীর চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মেট্রোরেলের সব স্টাফ কর্মবিরতি পালন করবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একাধিক কর্মী জানান, ১৭ মার্চ সকাল থেকে ট্রেন চালানো হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে দুজন মহিলা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে, স্টেশনের সুইং গেইট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। নির্ধারিত পোশাক পরিহিত না হওয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা সুইং গেইট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা উত্তেজিত হয়ে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান। পরবর্তীতে পুলিশের এপিবিএন দুইজন সদস্য সুইং গেইট ব্যবহার করে, তা না লাগিয়ে চলে যান। মেট্রোর কর্মীরা কারণ জানতে চাইলে, তারা এবং কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে তর্কে জড়ান। কর্মরত কর্মীর কাঁধে বন্ধুক দিয়ে আঘাত করে। আরেকজন কর্মীকে এমআরটি পুলিশ বক্সে তুলে নিয়ে মারধর করে। এছাড়াও বন্দুক তাক করে গুলি করার হুমকি দেয়। পরে উপস্থিত অন্যান্য কর্মী ও যাত্রীরা এমআরটি পুলিশের হাত থেকে কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে।