ভারতের চালের রপ্তানি মূল্য কমেছে
Published: 16th, March 2025 GMT
ভারতে চালের রপ্তানি মূল্য এখনো ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে চালের রপ্তানি মূল্য কমে আসছে। ভারতে কমলেও ভিয়েতনামে চলতি সপ্তাহে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
ভারতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের রপ্তানি মূল্য চলতি সপ্তাহে টনপ্রতি ৪০৩-৪১০ ডলার নির্ধারণ হয়েছে। গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ৪০৯-৪১৫ ডলার। ভারতের সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের চালের রপ্তানি মূল্য কমে যাওয়ায় ভারতের চালের দামও কমেছে।
ভারতে ২০২২ সালে কম বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদনসংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ফলে সে বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির সরকার বাসমতী ভিন্ন অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ২০২৩ সালে অন্যান্য চাল রপ্তানির ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে রেকর্ড ফসল উৎপাদনের ফলে সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় চাল রপ্তানির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু হয়।
ব্যবসায়ীদের মতে, ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চাল কিনতে শুরু করেছে। এতে ভারতের চালের দামের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।
ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৯২ ডলার, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৮৯ ডলার। ভিয়েতনামের মেকং ডেলটা অঞ্চলের কৃষকেরা তাঁদের শীত-বসন্ত মৌসুমের ফসলের প্রায় অর্ধেক তুলে ফেলেছেন। তবে সরকারের চাল ক্রয় ও মজুত পরিকল্পনার স্পষ্ট প্রভাব এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে থাইল্যান্ডেও চলতি সপ্তাহে নিম্নমুখী ছিল চালের দাম। দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল গত সপ্তাহে টনপ্রতি ৪১৫ ডলার থেকে কমে ৪০৫-৪০৮ ডলার হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে চালের দামে প্রভাব পড়েছে।
ব্যাংককের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভিয়েতনাম ও ভারতের চালের দাম থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম। তাই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চাহিদা নিম্নমুখী।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারত ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো থেকে নতুন চালের সরবরাহ বাড়ায় এ বছর থাইল্যান্ডের চালের চাহিদা আরও কমতে পারে। বিশেষ করে নিয়মিত গ্রাহকদের কাছ থেকে চাহিদা স্থিতিশীল থাকলেও মুদ্রার উত্থান-পতন চলমান থাকায় দাম টনপ্রতি ৪১০ ডলারের বেশি হবে না।’
ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল তারা সরবরাহ করে। চালের আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পরের চারটি অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে এ চারটি দেশ সম্মিলিতভাবে যত চাল রপ্তানি করে, ভারত একাই তার চেয়ে বেশি করে। ভারত সব মিলিয়ে ১৪০টি দেশে চাল রপ্তানি করে। সে জন্য ভারতের চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে চালের দামে প্রভাব ফেলে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারত চাল রপ্তানি থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরপর থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে শীত মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়তি। বিভিন্ন দেশে থেকে আমদানি করা হলেও দাম কমছে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেশিরভাগ পণ্যের দাম নিম্নমুখী, বেড়েছে চালের
পবিত্র রমজানের বাজারে বেশিরভাড় পণ্যের দাম নিম্নমুখী। তবে বাজারে কিছু কিছু চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, ভালোমানের সরু চাল কিনতে প্রতি কেজিতে দাম দিতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। মাঝারি চাল ৭০ থেকে ৭৬ টাকা আর মোটা চালের দাম ৫৮ থেকে ৬২ টাকা।
চালের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত ছয় মাসে তিনদফা বেড়েছে চালের দাম। এই সময় কেজিপ্রতি প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। এরমধ্যে শুধু একদফা দুই-এক টাকা কমেছিল।
কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রুস্তম শেখ বলেন, চালের দাম গত এক সপ্তাহে আবারও কেজিপ্রতি দুই টাকা বেড়েছে। রশিদ, উৎসব ডায়মন্ড, মোজাম্মেল ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সরু মিনিকেট চালের ২৫ কেজির বস্তায় ৫০ টাকা বেড়েছে। এই চাল ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা কেজি পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, আসলে ৮০ টাকার নিচে কোনো ভালো মানের চাল পাওয়া যায় না। আর বড় বড় ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম আরও বেশি, ৯০ থেকে ৯২ টাকার আশপাশে। ফলে মধ্যম আয়ের মানুষকে ৮০ টাকা কেজি চাল কিনতে হচ্ছে।
মোটা চালের দামও কম নয়। মোহাম্মদপুর, কাওরান বাজার, হাতিরপুল, রামপুরা ঘুরে দেখা যায়, ৫৮ টাকায় মোটা সেদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে। একটু ভালোমানের মোটা চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তবে বেশি পরিমাণে নিলে দু-এক টাকা কম দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম আগের মতো স্থিতিশীল দেখা গেছে, কিছু পণ্যের দাম নিম্নমুখীও। রোজার শুরুতে সয়াবিন তেলের যে সরবরাহ সংকট ছিল এখন তা-ও কমেছে। খোলা সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বোতলজাত তেলের সরবরাহে এখনও কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে।
রামপুরা বাজারে চঞ্চল ট্রেডার্সের বেলাল হোসেন বলেন, খোলা সয়াবিনের সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে। বোতলজাত তেলও দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। তবে চাহিদার তুলনায় কম। আগে যে তেল পাওয়াই যাচ্ছিল না, তেমন আর নেই।
লেবু, শসা ও বেগুনের মতো বাড়তি চাহিদার পণ্যগুলোর দাম কমছে। আগে বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। লেবুর হালি ৪০ টাকা ও শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া অন্যান্য সবজির বাজার আগের মতো থাকলেও ঢেড়স ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দর কমেছে। প্রতি কেজি ঢেড়স ৬০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত বছর উত্তাপ ছড়ানো পেঁয়াজেরও ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। খুচরা পর্যায়ে দেশি ভালোমানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। যেখানে গত বছর এ সময় বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হয়েছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। একইভাবে আলুর দাম অর্ধেক কমে এখন ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মোটাদাগে বলতে গেলে এ বছর পবিত্র রমজানে বেশ স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে মুদিপণ্যের দাম। রোজা শুরুর আগেই বাজারে যে অরাজকতা এবার দেখা যায়নি। এ বছর এখন পর্যন্ত চিনি, খেজুর, ডালের দাম কম রয়েছে।