সাতদিনের রিমান্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’
Published: 16th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ‘ছোট সাজ্জাদ’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা কমপ্লেক্স থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ রোববার তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত তার সাতদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার সাজ্জাদ হোসেন হাটহাজারীর শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির মো.
এদিকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা এ ঘটনা ঘটাইছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ ‘কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে’ তার স্বামীকে বীরের বেশে ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন তিনি। প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তার স্বামী ফিরে এলে খেলা হবে।’
সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে আনার পর সিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। তাতে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘ছোট সাজ্জাদকে ধরার জন্য পুলিশ সদরদপ্তরের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করা হচ্ছিল। পাশাপাশি তাকে ধরার জন্য চট্টগ্রাম পুলিশের একটি দল কয়েকদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিল। পুলিশ সদরদপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গত আগস্টে অক্সিজেন এলাকায় জোড়া খুন এবং পরবর্তীতে চান্দগাঁও এলাকায় প্রকাশ্যে একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, গার্মেন্টেসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ কার্যক্রম করত। বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজ্জাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সে চাঁদাবাজি, বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করত।’
তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের চেষ্টার পরও ব্যর্থতার কথা জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সে দুর্ধর্ষ প্রকৃতির সন্ত্রাসী। তাকে যখন ধরতে যাওয়া হয়েছিল, সে গুলি ছুড়ে পাঁচতলা একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনে পালিয়ে চলে যায়। এসময় দুজন লোক আহত হয়েছিল। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়ার পরই সে প্রকাশ্যে তাকে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়েছিল। এরপরই মূলত তাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।’
কে এই ছোট সাজ্জাদ
চট্টগ্রামের একসময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার দণ্ডিত এ আসামি ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হন। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় এখনও কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই ফোন আসে সাজ্জাদের। চাঁদা দিতে গড়িমসি করলে শিষ্যদের দিয়ে হামলা করেন। দুই দশকের বেশি এভাবেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন সাজ্জাদ। ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে নুরুন্নবী ম্যাক্সন ভারতে গিয়ে মারা গেছেন। একাধিকবার গ্রেপ্তারের পর দলছুট ঢাকাইয়া আকবর। সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা পক্ষ ত্যাগ করে বাহিনী গড়েছেন। ফলে ছোট সাজ্জাদকে শিষ্য হিসেবে গড়ে তোলেন বড় সাজ্জাদ।
বর্তমানে নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকার আধিপত্য নিয়ে লড়াই চলছে ছোট সাজ্জাদ ও বাবলার মধ্যে। এরই জেরে গতবছরের ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ। একইবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালায় সাজ্জাদ। গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে দিবালোকে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ আবারও আলোচনায় আসে।
গত ৫ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হন। গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে প্রকাশ্য পেটানোর হুমকি দেন। এরপর ৩০ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স এমপ গ র প ত র কর এল ক য় র জন য স এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূতের ইউনিলিভার বাংলাদেশের সদরদপ্তর পরিদর্শন
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের (ইউবিএল) ঢাকা সদরদপ্তর পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ও ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন (ডনকাস্টার) এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকক।
প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে ছিলেন– হিউম্যান রিসোর্স ডিরেক্টর সৈয়দা দুরদানা কবির; কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার এবং লিগ্যাল ডিরেক্টর অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি এসএম রাশেদুল কাইয়ুম।
উচ্চপর্যায়ের এই সফর ইউনিলিভারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে, যেখানে কীভাবে ব্রিটিশ ঐতিহ্য থেকে বেড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশে একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব কেমন হতে পারে, ইউনিলিভার তারই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান যেভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পে এত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে, তা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। তাদের এই পথচলা শুধু বাণিজ্যে সীমাবদ্ধ নয়-এটি যৌথ সমৃদ্ধি এবং দায়িত্বশীল ব্যবসার প্রতিচ্ছবি।
অনুষ্ঠানে ইউনিলিভারের অগ্রগামী টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহ তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু সহনশীলতা, প্লাস্টিক হ্রাস, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং কমিউনিটির ক্ষমতায়ন। উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করে, ইউনিলিভার বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়নের অগ্রাধিকারের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্রমাগত সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয়। ইউনিলিভারের মতো দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রেখে স্থানীয় প্রতিশ্রুতি পালন করা ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো এই রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। টেকসই উন্নয়নে তাদের বিনিয়োগই আজকের পৃথিবীর প্রয়োজনীয় কর্পোরেট নেতৃত্বের উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সহযোগিতা করা থেকে শুরু করে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারে নেতৃত্ব এবং বিজ্ঞাননির্ভর উদ্ভাবনে বিনিয়োগ-এইসব কাজের মধ্য দিয়ে ইউনিলিভার তাদের মূল লক্ষ্য ‘সবার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা’ বাস্তবায়ন করে চলেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস “যা বাংলাদেশের জন্য ভালো, সেটাই ইউনিলিভারের জন্য ভালো।
ইউবিএলের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর শামিমা আক্তার বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত, আমাদের লক্ষ্য নিয়ে গর্বিত, এবং বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকতে পেরে গর্বিত। এই যাত্রায় পাশে থাকার জন্য আমরা যুক্তরাজ্যের অংশীদার এবং বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের প্রতিশ্রুতি শুধুই ব্যবসার প্রতি নয়, এই দেশের মানুষের কল্যাণ ও অগ্রগতির প্রতিও।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি ইউনিলিভারের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যার শিকড় স্থানীয়ভাবে গভীর এবং যার রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি আস্থাভিত্তিক অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি।