বিভিন্ন মামলায় আদালতের পেশকার, পিয়ন ও কোর্ট পুলিশের উৎকোচ দেওয়ার টাকা নির্ধারণ করার ঘটনায় শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার মিঞা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসানকে ওই নোটিশ প্রদান করেন। তাঁদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

৬ মার্চ শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সভায় বিভিন্ন মামলায় আদালতের পেশকার, পিয়ন ও কোর্ট পুলিশের উৎকোচ দেওয়ার টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই টাকা নির্ধারণের জন্য করা সভার কার্যবিবরণী আদালতের বিভিন্ন কর্মচারী, আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারীদের দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, ‘পরিমাণ যা–ই হোক না কেন, ঘুষ গ্রহণ ও প্রদানের যাবতীয় উদ্যোগ সমানভাবে নিন্দনীয় ও বেআইনি কাজ। বিচার বিভাগ থেকে যখন সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, ঠিক তখন আপনাদের স্বাক্ষরিত এ ধরনের বেআইনি ও নৈতিকতাবিবর্জিত উৎকোচ প্রদানের উদ্যোগ আইন পেশার মতো একটি মহৎ পেশাকে যেমন কলুষিত করেছে, তেমনি বিচারপ্রার্থী জনগণের নিকট বিচার বিভাগের মর্যাদাহানি ঘটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এমন বেআইনি উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন আপনার পেশাগত নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে না, তা এই চিঠি প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। ওই কমিটি ৬ মার্চ প্রথম সভা করে। সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে আইনজীবীদের বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করার জন্য পেশকার, পিয়ন, সি আর ফাইলিংয়ের জন্য ১০০ টাকার বেশি না দেওয়া; কোনো দরখাস্তে জিআর, সিআর ১০০ টাকার বেশি না দেওয়া; জামিননামা দাখিলের খরচ মামলাপ্রতি ১০০ টাকার নিচে এবং ২০০ টাকার বেশি না দেওয়া; গারদখানায়, ওকালতনামায় স্বাক্ষরে ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

আইনজীবী সমিতির এমন সিদ্ধান্তের একটি কপি জজকোর্ট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পেশকার, পিয়ন ও কোর্ট পুলিশের জিআরওদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনজীবীকে দেওয়া হয়েছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মনিরুজ্জামানকে আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত কয়েক দফা কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আদালতের সঙ্গে আমরা আইনজীবীরাও দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তিন দিনের মধ্যেই শোকজের জবাব দেব।’

আরও পড়ুনশরীয়তপুর আদালতের কর্মচারীদের ফি নির্ধারণ করেছে আইনজীবী সমিতি, নানা আলোচনা ১৫ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১০০ ট ক আইনজ ব র জন য উৎক চ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ ২১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। আগামী ১৬ এপ্রিল সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। 

আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অংশ নিতে তারা ফরম নিতে পারেননি। ফরম নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান তারা।

গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সবগুলো পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন:

নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার না রাখার কথা ভাবছে ইসি

বাপ ডাইক্কা নির্বাচন দেওন লাগব, বললেন বিএনপির ফজলুর রহমান

মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমদ জানান, ২১টি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়ে সবগুলোই উৎরে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সবাইকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

মনোননয়ন জমা দেওয়া ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

সাতটি পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন- সহ-সভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহ-সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী আইনজীবী মো. আবদুর রশীদ লোকমান বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা ফরম নিতে পারিনি। দুপুর ও বিকেলে আমরা দুই দফায় সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছি।” 

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আমরা ২১ জন ফরম নিয়েছি। অন্যরা ফরম না নিলে আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের সৎ সাহস নেই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যারা ছাত্র-জনতার ওপর লাঠি নিয়ে হামলা করেছিল, তারা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে ভর্তিতে নতুন করে এমসিকিউ পরীক্ষা হবে
  • আদালতপাড়ায় এক হয়ে যুবককে পেটালেন সাবেক দুই স্ত্রী
  • ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আবার হবে
  • মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট
  • প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সব পদে জয়ী বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা
  • মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনায় ৩৮ নাগরিকের নিন্দা
  • পয়লা বৈশাখের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার নেই
  • চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ী হচ্ছেন সবাই
  • ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ: যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
  • ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী