ঈদের কেনাকাটায় ধুম লেগেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ইফতারের বিরতি ছাড়া যেন দম ফেলার ফুসরত নেই বিক্রেতাদের। নগরীর সব মার্কেট, শপিং মল এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানগুলোতে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রেতারা মার্কেট ও দোকান ঘুরে নিজেদের পছন্দের পোশাক ও প্রসাধনী সমগ্রী কেনাকাটা করছেন মধ্যরাত পর্যন্ত। 

ক্রেতা চাহিদার সুযোগ নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোষাক ব্র্যান্ডের ব্যবসায়ীরা দেশীয় পোশাককে বিদেশি ও ভারতীয় বলে ক্রেতাদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কয়েকটি বড় পোশাক ব্র্যান্ডকে জরিমানাও করেছে চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

আরো পড়ুন: দেশী পাঞ্জাবীকে ভারতীয় বলে বিক্রি, জরিমানা ২ লাখ

আরো পড়ুন:

ঈদে যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু আজ, ফিরতি টিকিট ২৪ মার্চ

চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত মিমি সুপার মার্কেট, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, সানমার শপিং মল, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, বালি আর্কেড, আখতারুজ্জামান সেন্টার, ফিনলে স্কয়ার, মতি টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সসহ নগরীর সবগুলো বড় বড় শপিং মল ও মার্কেটে বেচাবিক্রি চলছে দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। অভিজাত শ্রেণির ক্রেতারা এসব শপিং মলগুলো থেকে কেনাকাটা করছেন। 

নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটার ভরসাস্থল চট্টগ্রামের হকার্স মার্কেট, রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী ফুটপাতের দোকানগুলো। উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে আড়ং ও সেইলরসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে। 

চট্টগ্রামের বালি আর্কেড শপিং মলে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা তানভীরুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিক্রেতারা পোশাকের অতিরিক্ত মূল্য হাঁকাচ্ছেন। যে পোশাক দুই হাজার টাকায় বিক্রি করবেন তার দাম চাওয়া হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এই অবস্থায় পোশাক পছন্দ করে কেনা দায় হয়ে পড়েছে।” 

একই মার্কেটে আসা অপর ক্রেতা নাসিমা সুলতানা বলেন, “একদিকে প্রচণ্ড ভিড়, অপরদিকে বিক্রেতাদের অস্বাভাবিক দাম চাওয়া আমাদের বিভ্রান্ত করছে। দরদাম করে পোশাক কেনাও দায় হয়ে পড়েছে।” 

এদিকে, বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতা চাহিদা এবং ভিড়কে পুঁজি করে দেশী পোশাককে ভারতীয় ও বিদেশি পোশাক বলে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম নগরীর পাঞ্জাবির বড় ব্র্যান্ড সেলিম পাঞ্জাবি এবং পরীস্থান নামের দুইটি প্রতিষ্ঠান দেশিয় পাঞ্জাবিকে ভারতীয় পাঞ্জাবি বলে বিক্রি করার চিত্র হাতে নাতে ধরেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পরে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

চট্টগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদ বাজারে প্রতারণা রোধে এবং ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। সর্বশেষ গত শনিবার চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাঞ্জাবির বড় ব্র্যান্ড সেলিম পাঞ্জাবি ও পরীস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।”

তিনি আরো বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা থেকে কিনে আনা দেশে তৈরি পাঞ্জাবিকে ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি বলে ট্যাগ লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রি করার চিত্র হাতে নাতে ধরা পড়ে। এছাড়া, এই প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত দামে পোশাক বিক্রি করছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দোষ স্বীকারের পর সেলিম পাঞ্জাবিকে ২ লাখ টাকা এবং পরীস্থানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব ঈদ নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

বাহাদুরের দাম চাওয়া হচ্ছে ৯ লাখ

‘ঘোড়াটির বয়স পাঁচ বছর। নাম বাহাদুর। ভারতীয় মারোয়ারী তাজী জাতের প্রাণীটি দ্রুত দৌঁড়াতে পারে। একে নিয়ে বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। খয়েরি লাল-সাদা ঘোড়াটির যত্ন নিয়েছি নিজেই। এবারের মেলায় এর দাম ঠিক করেছি ৯ লাখ টাকা। অনেকে বিভিন্ন অংকের দাম বললেও এ পর্যন্ত সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাম উঠেছে।’ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ৫১৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর দোল পূর্ণিমার মেলায় কথাগুলো বলছিলেন বাহাদুরের মালিক নওগাঁর ধামইরহাটের আব্দুল মজিদ।

ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক আর দর-দামে এখন মুখর ঘোড়ার মেলা। ক্রেতা-বিক্রেতারা দামাদামি করছেন। সাধ্যের মধ্যে মিললে হচ্ছে বেচাকেনা। এ মেলায় এবার প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ভারতীয় মারোয়ারী তাজী জাতের ঘোড়াটি। এ ছাড়া পঙ্খিরাজ, বিজলি, কিরণমালা, বাংলার রানী, সুইটিসহ বাহারি নামের ঘোড়াও রয়েছে। তাদের দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তা দেখে পছন্দের ঘোড়া কিনতে ক্রেতাদের মধ্যেও রয়েছে প্রতিযোগিতা।

আয়োজকরা জানান, দেশের একমাত্র ঘোড়া বেচাকেনার হাট গোপীনাথপুর দোলের মেলা। সারাদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে মাসব্যাপী চলে মেলা। কিন্তু পশুর মেলা হয় প্রথম ১০ দিন। দোল পূর্ণিমার কয়েকদিন আগে থেকে মেলায় অবস্থান নিয়েছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগলও বেচাকেনা হয় এখানে। দরদাম ঠিকঠাকের পর পাশের একটি মাঠে ঘোড়া নিয়ে গিয়ে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়দৌড়।

নীলফামারীর ডোমার থেকে আবুল হোসেন ঘোড়া কিনতে এসেছিলেন মেলায়। তিনি বাহাদুরের দাম বলেছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। আরও দুই-একটি দেখার পর তিনি কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সওয়ারি ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আগে তাদের বাপ-দাদারা মেলায় ঘোড়া বেচাকেনা করতেন। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারাও এ পেশায় রয়েছেন। আগে ঘোরদৌড়ের বড় মাঠ থাকলেও এখন সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এতে বেচাকেনায়ও সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, গোপীনাথপুরের মেলাটি প্রাচীন মেলা। এখানে বিশালাকৃতির ঘোড়া এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রমজানের পবিত্রতা ও নিরাপত্তার জন্য বিনোদনমূলক যাত্রা, সার্কাসের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ