বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ ডা. প্রাণ গোপালের মেয়ে
Published: 16th, March 2025 GMT
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা দত্তকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে একদল লোক। ডা. প্রাণ গোপাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ওই হাসপাতালের (তৎকালীন বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ছিলেন।
ডা. অনিন্দিতা দত্ত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ভবনের এফ ব্লকে অবস্থিত। রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ভবনের তাঁর কার্যালয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে একদল লোক।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবস্থান করছে। দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তিনি ওই কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন। জানা গেছে, ডা.
শাহবাগ থানা ছাত্রদল নেতা রুবেল আহমদ বলেন, মামলার বাদীর তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এখন সেবাবাহিনী ও পুলিশ এসেছে। তারা বিষয়টি দেখবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, ‘প্রাণ গোপাল স্যারের মেয়ে এখানে চাকরি করেন। তাঁকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে। আমরাও উনার সঙ্গে বন্দি হয়ে আছি এখানে। ঘটনাস্থলে আর্মিও এসেছে। আমরাও ঝামেলায় আছি। পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রাণ গোপাল দত্তের বিরুদ্ধে ঢাকা ও কুমিল্লায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় অনিন্দিতা দত্তও আসামি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে অনিন্দিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলেন না। দুদিন ধরে তিনি আসা শুরু করেছেন।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। সেখানে পুলিশ ও আর্মি আছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবর দ ধ ব এসএমএমইউ শ হব গ অন ন দ ত অবর দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ভৈরবে ভাসমানদের ডেকে ডেকে সাহ্রি খাওয়ান একদল তরুণ
২০২০ সালে করোনাকালের রোজায় ভয়, ভীতি আর অভাব মানুষকে পেয়ে বসেছিল। তখন সবচেয়ে বিপাকে পড়েন ভাসমান মানুষ। রোজার মাসে অসহায় এই মানুষদের জন্য কী করা যায়, সেই ভাবনা থেকে পাঁচ বন্ধু পিয়াল, দিয়া, আরাফাত, হৃদয় ও রবিন বিনা মূল্যে ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেন। নিজেদের টাকার সঙ্গে সুহৃদদের অনুদান মিলিয়ে পুরো এক মাস ইফতার আয়োজন করেন তাঁরা। পরের বছর বিনা মূল্যে সাহ্রি খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন।
সময়ের বাস্তবতায় পাঁচজনের অনেকেই এখন প্রত্যক্ষভাবে নেই। তবে শুরু থেকেই সমানভাবে সক্রিয় পিয়াল। পিয়ালের মানবিক উদ্যোগের এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিবছর যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন তরুণ। বর্তমানে তাঁর দলের সক্রিয় সদস্য ৩০ জনের বেশি। তাঁদের কোনো সংগঠন নেই, ব্যানার নেই, নেই কোনো কমিটি কিংবা কার্যালয়। তারপরও প্রতিবছর তাঁদের উদ্যোগের বিস্তৃতি ঘটে চলেছে। আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসছেন অনেকে। এবার প্রতিদিন গড়ে ৭৫ জন ভাসমান মানুষ এই আয়োজনে সাহ্রি করেন। সাহ্রি খাওয়ানো হচ্ছে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন সড়কের রাজমহল রেস্তোরাঁয়।
বুধবার রাত পৌনে তিনটার দিকে স্টেশন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সাহ্রি খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন অন্তত ২০ তরুণ। দুজন হ্যান্ডমাইক হাতে সাহ্রির খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তখন প্ল্যাটফর্মের ভেতরে বাইরে ঘুমোচ্ছিলেন শতাধিক নারী-পুরুষ। সেখান থেকে অন্তত ৫০ জন ঘুম থেকে ওঠে আসেন সাহ্রি খেতে। পাশের গ্রাম থেকে আসেন আরও অনেকে। তিনটি ব্যাচে খাওয়া সম্পন্ন করা হয়। মেন্যুতে ছিল মাছ, মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল। মাছ অথবা মাংস প্রত্যেকে দুটির যে কোনো একটি আইটেম দিয়ে খেতে পারেন। সবজি ও ডাল সবার জন্য উন্মুক্ত।
ময়মনসিংহের কেন্দুয়া উপজেলার বলেশ্বর ইউনিয়নের কুমুড়কুড়া গ্রামের আ. রাশেদ মিয়ার ছেলে ওয়াদুদ মিয়া (৬৩) ভৈরবে দিনমজুরের কাজ করেন। থাকেন স্টেশন লাগোয়া একটি বাড়িতে। মাইকে সাহ্রির খাওয়ার আহ্বান শুনে তিনি আসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন খাইছি। যত্ন কইরা খাওয়ায়। মনে হয় নিজের ঘরে খাইতাছি।’
নেত্রকোনা সদর ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৮৩) বয়সের ভারে ন্যুব্জ। স্ত্রী নেই। দুই মেয়ে নিয়ে দুই বছর ধরে ভৈরবে আছেন। জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করেন। মাছ-সবজি দিয়ে সাহ্রি খেতে পেরে তৃপ্তির ঠেকুর তুলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মাছ দিয়া সরাই (সাহ্রি) খাওয়া আমার লাইগ্যা কঠিন। পেট ভইরা খাইলাম। রোজা রাখতে কষ্ট হইব না।’
প্রথম ব্যাচে পুরুষের সঙ্গে দুজন ছিলেন সাহ্রি খাওয়ায়। দুজনের একজন ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকায় বাস করা ছিদ্দিক মিয়ার স্ত্রী নার্গিস বেগম (৫০)। তিনি স্থানীয় একটি মশার কয়েল কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। বলেন, ‘সরাই (সাহ্রি) ও ইস্তারি (ইফতার) খরচ বাইড়া গেছে। বেতনের টেহা দিয়া দুইটার খরচ এক লগে চালান কষ্টের। এখানে আইস্যা খাইতে পারায় চাপ কইম্মা গেল।’
জানা গেল, পিয়ালের কর্মিবাহিনী প্রতিদিন রাত দুইটার মধ্যে স্টেশন সড়কে আসতে থাকেন। চারটার মধ্যে খাওয়ানো শেষ করা হয়। পরে কর্মীরা বাড়ি ফিরে গিয়ে নিজেরা সাহ্রি খেয়ে ঘুমাতে যান।
কথা হয় এবারের কর্মসূচিতে সক্রিয়দের একজন আবদুস সামাসের সঙ্গে। তিনি জানালেন, রাত দুইটার পর রাজমহল রেস্তোরাঁ যেন বেহেস্তখানায় পরিণত হয়। বৃদ্ধ-গরিব, অসহায় মানুষ যখন মাছ-মাংস দিয়ে তৃপ্তি নিয়ে ভাত খান, তখন দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখার তৃপ্তি অন্যরকম।
আরেক কর্মী হান্নান হিমু। তাঁর ভাষ্য, সাহ্রি কর্মসূচি শেষ না করে ঘুমান না। এই ভালো লাগার ব্যাখ্যা নেই।
পুরো বিষয় নিয়ে পিয়ালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সৎ উদ্দেশ্য আর স্বচ্ছতা—কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা এই নীতি কঠিনভাবে মেনে চলার চেষ্টা করছি। শুরুতে আমাদের নিয়ে অনেকে কটু কথা বলেছেন। আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এখন নিন্দুকও প্রশ্ন না তুলেন বরং প্রশংসা করছেন। আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসছেন।’