রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদের বদলি ঠেকাতে রাস্তা অবরোধ করেছে একদল মানুষ।

রোববার দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে খামারবাড়ি গোলচত্বর এলাকা অবরোধ করলে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়; এতে সেখান থেকে আশেপাশের এলাকাতেও যানজট ছড়িয়ে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।

এদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের কিছু কর্মকর্তা খামারবাড়ির ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তবে রোববার দুপুরে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচির সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। অনৈতিক ও শৃঙ্খলা বিরোধী এই কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয় বিবৃতিতে।

ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে কিছু মানুষ দুপুর ১২টার দিকে খামারবাড়ির খেজুর বাগান ক্রসিং সড়কটি অবরোধ করেন। এর ফলে মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে মিরপুর কিংবা বিজয় সরণিগামী যানবাহনগুলো আটকা পড়ে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার মুখও আটকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ফার্মগেট থেকে আসাদগেট ক্রসিংয়ের রাস্তাটিও। দুপুর দেড়টার দিকে অবরোধকারীরা মূল সড়ক থেকে সরে এসে খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তেজগাঁও অফিসে যাচ্ছিলেন আরিফ হাসান। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি সমকালকে বলেন, ‘বাইক চালিয়েও একটু একটু করে রাস্তা আগাতে পারছি না। তীব্র রোদ আর গরম পড়েছে আজ, তারপর রোজা। এর মধ্যে সড়কের এমন বেহাল দশায় ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।’

ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘দুপুর বারোটার দিকে কিছু মানুষ রাস্তা অবরোধ করার পরে ডিএমপির তেজগাঁও ক্রাইম ডিভিশনের কর্মকর্তারা এবং সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে। আন্দোলনকারীরা ১০ মিনিট সময় নিলেও পরের এক ঘণ্টা তারা রাস্তা ধরে রাখেন। আমরা তাদের বলেছি, রমজান মাস, মানুষ রোজা আছে। আপনাদের কারণে রোজাদারদের অহেতুক ভোগান্তি হচ্ছে। তবুও তারা সরেনি।’

বৃহস্পতিবার ডিএইর প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক মাহবুবুর রশীদকে মেহেরপুরের বারাদি হর্টিকালচার সেন্টারে উপপরিচালক পদে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই মাহবুবুর রশীদের অনুসারীরা খামারবাড়িতে উত্তেজনা তৈরি করেন। মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হতে বাধা দেওয়া হয়। বিকেলে ১৫-২০ কর্মকর্তা ও বহিরাগত কিছু ব্যক্তি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিএইর প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক মুরাদুল হাসানের কক্ষে ঢুকে তাকে হুমকি দেন।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে তারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাইফুল আলমের অপসারণ দাবি করেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব ছাড়া শীর্ষ অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ম রব ড় কর মকর ত খ ম রব ড

এছাড়াও পড়ুন:

মেহেরপুরে থানায় ধর্ষণ মামলার সালিস, প্রতিবাদ করায় মারধর, পরে ঘেরাও করে বিক্ষোভ

মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমারকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতাকে তিনি মারধর করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

পরে গতকাল রাতে এ ঘটনায় এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মেহেরপুর সদর থানায় মামলা করেন তার মা। মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেন। পুলিশ ১২ সেপ্টেম্বর বায়েজিদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

মামলার বাদী ভুক্তভোগী শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের অবহেলায় তিন আসামি জামিন পেয়েছেন। এর পর থেকে তাঁরা আমাদের নানা কায়দায় হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। ধর্ষণের ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দিচ্ছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজয় কুমার উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন। এ সময় এসআই সুজয় কুমার আসামিদের পক্ষ থেকে মামলা প্রত্যাহার করতে চাপ দিতে থাকেন।’

ওই খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা তুষার আহমেদ ও সিয়াম হোসেন থানায় যান। তাঁরা ধর্ষণ মামলার মীমাংসা করার প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই সুজয় কুমার থানার মধ্যেই ওই দুজনকে লাঠিপেটা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেন। তাঁরা এসআই সুজয় কুমার ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এ সময় মামলার বাদীর ভাই সাংবাদিকদের জানান, এসআই সুজয় কুমার আসামিদের বাঁচাতে নানা ফন্দিফিকির শুরু করেন। তিনি টাকা নিয়ে মামলা মীমাংসা করার কথাও বলেন। তাঁরা বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের জানান। ছাত্রনেতারা থানায় এসে আসামিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দাবি জানান। এসআই সুজয় কুমার দুই ছাত্রনেতাকে মারধর করেন।

থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হলে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার মাকছুদা খানম। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাঁর কাছে তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো এক ঘণ্টার মধ্যে এসআই সুজয় কুমারকে বরখাস্ত, বাদীকে হুমকি দেওয়ায় ধর্ষণ মামলার আসামি ও তাঁদের পক্ষের লোকজনকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে। তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপার এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন, এসআই সুজয় কুমারকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে এবার খামারবাড়ির ডিজির অপসারণ দাবি
  • মেহেরপুরে থানায় ধর্ষণ মামলার সালিস, প্রতিবাদ করায় মারধর, পরে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
  • খামারবাড়িতে বদলি ঘিরে উত্তেজনা