সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে নয়ন সরকার নামে এক বিএনপি কর্মীর বাড়িতে গভীর রাতে তারা যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন বাইরে থেকে তালা দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নয়ন সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশীদের সহায়তা প্রাণে বেঁচে গেলেও পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে ঘরের সব জিনিসপত্র।

শনিবার (১৫ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সোনামুখী বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। 

সোনামুখী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ছিলেন নয়ন সরকার। তার বাবার বাচ্চু সরকার।

আরো পড়ুন:

মসজিদের চাঁদা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু

হবিগঞ্জের সাবেক এমপি আবু জাহিরসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নয়ন সরকার বলেছেন, “পরিবার ও পরিজন নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। গভীর রাতে মাদক ব্যবসায়ী শিবলু রেজা বাবু আমার পুরো পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।”

“ঘরের দরজার বাইরে থেকে তালা দেওয়ায় আমরা বের হতে পারছিলাম না। পরে আগুনের উত্তাপে আমি চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আমাদের রক্ষা করে। তবে বাড়ির সব কিছুই পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।

নয়ন সরকারের দাবি, আগুনে তার প্রায় ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলারসোনামুখী বাজার এলাকায় বিএনপি কর্মী নয়ন সরকারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করায় পুড়ে সব ভস্মীভূত হয়ে গেছে। শনিবার রাত দেড়টা দিকে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: রাইজিংবিডি ডটকম। 

প্রতিবেশী আরিফ সরকার বলেন, “শিবলু রেজা বাবু একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার কাজে বিভিন্ন সময় বাধা দেওয়ায় শত্রুতা করে তিনি নয়ন সরকারের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন বলে আমাদের ধারণা। এই ঘটনায় তার সঠিক বিচার চাই।”

কাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে ওই বাড়ির দুটি ঘরসহ সব কিছুই পুড়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলারসোনামুখী বাজার এলাকায় বিএনপি কর্মী নয়ন সরকারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করায় পুড়ে সব ভস্মীভূত হয়ে গেছে। শনিবার রাত দেড়টা দিকে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: রাইজিংবিডি ডটকম। 

কাজীপুর থানার ওসি নূরে আলম বলেন, সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার অভিযোগ দেবে বলে জানিয়েছে। অভিযোগটি পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে অভিযুক্ত শিবলু রেজার বক্তব্য নিতে পারেনি রাইজিংবিডি ডটকম।

ঢাকা/আদিত্য/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন নয়ন সরক র র পর ব র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ