দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের স্থলবেষ্টিত দেশ নর্থ মেসিডোনিয়ার কোচানি শহরের একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন এবং আরও প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাঞ্চে তোশকোভস্কি এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার স্থানীয় সময় রাত ২:৩৫ মিনিটে কোচানির একটি জনপ্রিয় নাইটক্লাবে পপ কনসার্ট চলাকালে হঠাৎ করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কনসার্টে আসা তরুণদের ব্যবহৃত আতশবাজির কারণে ছাদে আগুন ধরে যায়, যা মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ক্লাবে ছড়িয়ে পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আতঙ্কিত মানুষজন প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি করছে এবং ক্লাবের ভেতরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অনেকেই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েন, অনেকে পুড়ে গুরুতর আহত হন।

ঘটনার পরপরই দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল ও শহরের প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমিয়ে নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান করছেন।

নর্থ মেসিডোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তোশকোভস্কি জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। পুলিশ ও দমকল বাহিনী তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং ক্লাবটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নর্থ মেসিডোনিয়া সরকার শোক প্রকাশ করেছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিকে, স্থানীয় জনগণ ও নিহতদের স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং নাইটক্লাবের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত দিয়েছে আরও ৪ দল

সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে আরও চারটি রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের মতামত দিয়েছে। এ নিয়ে কমিশনের কাছে ১১টি দল তাদের মতামত দিল।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৬ মার্চ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ (ছক আকারে) পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যে সাতটি দল মতামত জানিয়েছিল।

আজ রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আরও চারটি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। আজ পর্যন্ত মোট ১১টি রাজনৈতিক দলের মতামত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১৮টি রাজনৈতিক দল পূর্ণাঙ্গ মতামতের জন্য অতিরিক্ত কয়েক দিন সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে কমিশন পুনরায় যোগাযোগ করছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, নতুন করে যে চারটি দল মতামত দিয়েছে সেগুলো হলো—রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এর আগে এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামা ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, এনডিএম ও আমজনতার দল মতামত জানিয়েছিল। যে দলগুলো ইতিমধ্যে মতামত দিয়েছে তাদের নিয়ে চলতি সপ্তাহ থেকে আলোচনা শুরু করার চিন্তা আছে। আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনা। এ লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছয়টি কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার। ঐকমত্য কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’ বা জুলাই সনদ।

পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো ছক আকারে দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল। প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল। প্রথমটি হলো সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে দলগুলো একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে।

দ্বিতীয়টি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ছয়টি ঘর রয়েছে। সেগুলো হলো সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়ন ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ