টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার
Published: 16th, March 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফিরোজকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাতে মির্জাপুর থানা পুুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আসামি ফিরোজ মির্জাপুুর উপজেলার কুড়িপাড়া গ্রামের আব্দুল রশিদ মিয়ার ছেলে। পেশায় অটোরিকশা চালক। এরআগে এ ঘটনায় ফিরোজের ছেলে সাব্বির হোসাইন (২১) কে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানাধীন রামনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রবিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে মির্জাপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন বলেন, “গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এ মামলার প্রধান আসামি ফিরোজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ফিরোজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।”
মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অটোরিকশাচালক ফিরোজ শিশুটির নানির বাড়ির পাশের জমিতে সার দিচ্ছিল। এ সময় ওই জমির সঙ্গেই শিশুটি বরই গাছ থেকে বরই কুড়াচ্ছিল। তখন ফিরোজ শিশুটিকে কৌশলে ডেকে একটি টয়লেটের ভেতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখানো হয় শিশুটিকে। ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে শিশুটি চুপচাপ থাকায় সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে বারবার জিজ্ঞেস করায় একপর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি পুরো ঘটনা মাকে খুলে বলে। ধীরে ধীরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
পরে ধর্ষণের ঘটনার ধামাচাপা দিতে স্থানীয় আব্দুল মালেক, ইউনূস, বাবলু, নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন মাতব্বর ঘটনার সপ্তাহখানেক পর গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গ্রাম্য মাতাব্বরদের চাপের মুখে সালিশটি মেনে নেয় অসহায় পরিবারটি। তবে জরিমানার টাকা ভুক্তভোগী পরিবারকে দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনায় গত ৮ মার্চ রাতে ভুক্তভোগী পরিবার ফিরোজকে প্রধান করে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা/কাওছার/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর পর ব র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের ফুটবলে প্রবাসী ফাইভস্টার
শুরুটা হয়েছিল জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে আবির্ভাব ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। দীর্ঘ ছয় বছর পর দ্বিতীয় প্রবাসী হিসেবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ান তারিক রায়হান কাজী। গত বছর কানাডা প্রবাসী সৈয়দ শাহ কাজেমের সঙ্গে বড় নাম ইংলিশ লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজার সঙ্গে পঞ্চম প্রবাসী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ইতালিতে বেড়ে ওঠা ফাহমিদুল ইসলাম। আজ ইংল্যান্ড থেকে সিলেটে আসছেন হামজা। বাংলাদেশের ফুটবলে একসঙ্গে পাঁচ প্রবাসী। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপনই বলা চলে। সেই পাঁচ প্রবাসী নিয়ে সমকালের আয়োজন…
ইংলিশ লিগ থেকে হামজা দেওয়ান চৌধুরী: বাবা: মোর্শেদ দেওয়ান চৌধুরী, মা: রাফিয়া চৌধুরী। চার-পাঁচ বছর ধরে প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে নিয়ে কাজ করে আসছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ইংলিশ ক্লাব লিস্টার সিটিতে খেলার সময় এ ডিফেন্ডার জড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ড যুব দলের জার্সি। বড় ক্লাবে খেলার সঙ্গে ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাঠ মাতানো হামজাকে পেতে সব চেষ্টায়ই করে আসছিল বাফুফে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে লিস্টার সিটি, ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন থেকে ছাড়পত্র মেলে তাঁর। কিন্তু মূল ছাড়পত্র বাকি ছিল ফিফার। অনেক চিঠি চালাচালির পর গত বছর বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি দেয়। সবকিছু ঠিক থাকলে হামজা চৌধুরীর মতো একজন গ্লোবাল স্টারের ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হবে। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এ ডিফেন্ডারের আজ সিলেটে আসার কথা। হামজার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি। তাঁর নানার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নে। হামজা একজন ক্যারিবিয়ানের সন্তান। মা রাফিয়া চৌধুরীর বিয়ে হয়েছিল একজন্য ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে। কিন্তু সেখানে তার সংসার করা হয়নি রাফিয়া চৌধুরীর। পরে দেওয়ান মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে হামজার মায়ের বিয়ে হয়। তাই তিনি হামজার বায়োলজিক্যাল সন্তান নয়। হামজা ছাড়াও দেওয়ান মোরশেদের ঘরে আরো তিন সন্তান রয়েছে।
শিকড়ের টানে জামাল ভূঁইয়া: বাবা: ইনসান ভূঁইয়া, মা: রাজিয়া আক্তার। ২০১৩ সালের আগে অনেক প্রবাসী বাফুফেতে ট্রায়াল দিয়েও পাস করতে পারেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়াও। ডেনমার্কে থাকা অবস্থায় লাল-সবুজের জার্সি গাঁয়ে জড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। ২০১১ সালে বাংলাদেশে ট্রায়াল দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ডেনমার্কে। কারণ মানিয়ে নিতে পারেননি বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে। ২০১৩ সালে আবার এসে ট্রায়ালে সবার মন জয় করে নেন। প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে লাল-সবুজের জার্সিতে খেলেছিলেন ওই বছরের ৩১ আগস্ট নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে। সেই যে শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ মিডফিল্ডারকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ফুটবলের পোস্টারবয়। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গোল করে এবং করিয়ে আলোচনায় এসেছেন জামাল।
ইতালি থেকে ফাহমিদুল ইসলাম: প্রবাসী হামজা চৌধুরীকে নিয়ে যখন আলোচনায় পুরো দেশ, তখন বড় চমক হয়ে আসে ইতালি প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামের নাম। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার প্রাথমিক দলে প্রবাসী ফাহমিদুলের অন্তর্ভুক্তিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে বাফুফে গোপনীয়তা অবলম্বন করে। ফাহমিদুলের বেড়ে ওঠা ফেনীতে। তিনি ইতালির সিরি’এ ডি লিগের ক্লাব ওলবিযা ক্যালসিওর হয়ে লেফট ব্যাক এবং লেফট উইং ব্যাক পজিশনে খেলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সৌদি আরবের ক্যাম্পে আছেন ফাহমিদুল। ইতোমধ্যে দলের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরেছেন।
ক্রিকেটার বাবার ছেলে সৈয়দ শাহ কাজেম: বাবা: হালিম শাহ। নব্বই দশকে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ হালিম শাহ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো করলেও কখনোই জাতীয় দলে খেলা হয়নি তাঁর। তবে ক্রিকেটার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন সৈয়দ শাহ কাজেম। তিনি ক্রিকেটার হননি, হয়েছেন ফুটবলার। এরই ধারাবাহিকতায় কানাডা প্রবাসী এই ফুটবলার বাংলাদেশের জার্সি গায়েও জড়িয়েছেন। ২০০৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান হালিম শাহ। সেই সময় কাজেমের বয়স ছিল ৭। প্রথমে ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন ছিল হালিম শাহর। কিন্তু কানাডার টরন্টোতে ফুটবলই ছিল প্রথম দর্শন। ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন কাজেম। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলে বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০২১ সালে ঢাকায় ফিরে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে ক্যারিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলেন। পাসপোর্টসহ অন্যান্য জটিলতায় তখন খেলা হয়নি। পরের মৌসুমে পুলিশ এফসির হয়ে খেলা শুরু কাজেম শাহর। ঘরোয়া লিগে পারফরম্যান্স করার পুরস্কার হিসেবে কাজেম এখন জাতীয় দলেরও গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।