বরগুনায় কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করার পর বাবাকে হত্যার ঘটনায় পরিবারটি শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। একদিকে কিশোরীটির দুর্দশা, অন্যদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আর্থিক অনিশ্চয়তা তাদের ঘিরে ধরেছে। ওই পরিবারের প্রবীণ নারী ছেলে হারিয়ে, নাতনির অবস্থা দেখে আক্ষেপ করে বলছিলন, ‘আমরা বাঁচমু ক্যামনে? পোলারে মাইর্যা ফালাইছে। নাতনিডার জীবনও শ্যাষ করলো। এহন আমাগো দ্যাখবে কেডা?’

পরিবারটির ভাষ্য, বরগুনা সদরের বাড়ি থেকে ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ওই কিশোরী (১৪)। পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিজিত রায় নামের এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন মুখে কাপড় গুঁজে কিশোরীকে অপহরণ করে। এরপর তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরের দিন ৫ মার্চ সকালে ওই কিশোরীকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুজনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। পরের দিন স্থানীয় জনতা দুজনকে ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশ সিজিতকে আটক করে এবং তার বন্ধুকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়। কিশোরীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে এবং ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাসাতে থাকে আসামিপক্ষ। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে মুঠোফোনের রিংটোনের সূত্র ধরে বাড়ির পাশের ঝোপ থেকে কিশোরীর বাবার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামির বাবাসহ চারজনকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল শনিবার কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এসব ঘটনার ধকলে সেই কিশোরী এখন নির্বাক। সে খাবার খাচ্ছে না, সারাক্ষণ চুপচাপ থাকছে, কারও সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলছে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর নীরবে চোখের পানি ফেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটির সবাই দিশাহারা। প্রতিবেশী ও অন্যরা সাময়িকভাবে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করলেও দীর্ঘ মেয়াদে কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। টাকার অভাবে কিশোরীকে চিকিৎসকের কাছেও নিতে পারছেন না বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

ছয়জনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন কিশোরীর বাবা। ছোট্ট কাঠ-টিনের জরাজীর্ণ ঘর ও তার চারপাশ দেখে দারিদ্র্য টের পাওয়া যায়। কিশোরীর মা বললেন, ‘আমাগো আর কী জিগাইবেন? এর চাইতে আমাগো মাইর্যা হালাইলেও বাঁইচ্চা যাইতাম।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল দুপুরে কিশোরীর বাড়িতে যান। তিনি পরিবারটির খোঁজখবর নেন। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, হত্যা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ধর্ষণ মামলার আসামিরা কারাগারে আছে। পরিবারটি কঠিন সময় পার করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ও তার এক বন্ধুকে আটক করা হয়েছিল। এরপর তাদের ওই কিশোরীর মুখোমুখি করা হয়। তখন একজনকে কিশোরী শনাক্ত করেনি। তাই মুচলেকা রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিশোরীর বাবা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে একজনের ব্যাপারে তদন্ত করে এই ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দল তদন্ত করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র বরগ ন ঘটন য় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, সন্ধ্যায় মৃত্যু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় মোহাম্মদপুরে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার এজাজ আহমেদ (৩২) নামের এক আসামি মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ শনিবার সন্ধ্যার সময় তিনি মারা যান। এজাজ আহমেদের মরদেহ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর এজাজ আহমেদের বার এট ল করার জন্য লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল।

এজাজ আহমেদের বাবা শাহ আলমের অভিযোগ, গত ১০ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে তাঁর ছেলেকে হাজারীবাগ থেকে আটক করে নেওয়া হয়। এরপর তাঁকে মোহাম্মদপুর থানার একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় তাঁকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। তখন এজাজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তিনি জামিনে ছাড়া পেলে তাঁকে ধানমন্ডির জাপান–ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পুলিশ গতকাল শুক্রবার ভোরে তাঁকে আবার ধরে নিয়ে যায়। আজ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এজাজের মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে এজাজের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে। সেই মামলায় গতকাল রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে এজাজের বাবা শাহ আলম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, আগের দফায় তাঁর ছেলেকে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করে। এ জন্য তাঁর ছেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আজ মারা গেলেন।

তবে এজাজের বাবার এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এজাজ আহমেদ ধানমন্ডি এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সহযোগী ছিলেন। ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনী এজাজকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। থানায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। এজাজ আহমেদকে কোনো ধরনের নির্যাতন করেনি পুলিশ। বরং গতকাল ডিবির সহযোগিতায় জাপান–ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে আজ ভোরে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আগে থেকে কিডনির রোগে আক্রান্ত ছিলেন এজাজ। সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেদিন রানার জন্যই খেলেছিল বাংলাদেশ
  • ধর্ষণের দায় একাই নিচ্ছেন মাগুরার সেই শিশুর বোনের শ্বশুর
  • বরগুনার সেই পরিবারটির সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান, পাশে থাকার আশ্বাস
  • মাগুরার শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা, বোন ছিলেন রান্নাঘরে
  • কখন আসছেন হামজা, গন্তব্য কোথায়?
  • দেশে বয়ে চলেছে বছরের প্রথম তাপপ্রবাহ
  • দুর্নীতি মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের জামিন নামঞ্জুর 
  • ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পি‌টিয়ে হত্যা, প‌রিবা‌রের দাবি পূর্বশত্রুতা
  • বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, সন্ধ্যায় মৃত্যু