রংপুরে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ করা সেই ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার
Published: 16th, March 2025 GMT
রংপুর মহানগর পুলিশের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ করা ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, লিপি খান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। তিনি পলাতক ছিলেন।
আরও পড়ুনঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ, রংপুরের সেই উপপুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছার ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান। অভিযোগ করার সময় লিপি খান দাবি করেন, তিনি বিড়ি ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
অভিযোগের পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) মারতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা হলেও এতে শুধু অমিত বণিককে আসামি করা হয়। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘুষ-বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর উপকমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে গতকাল শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তাঁকে আজ সদর দপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনরংপুরে উপপুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ, থানায় বাদীকে পিটুনি১৪ মার্চ ২০২৫এদিকে লিপি খানের বিরুদ্ধে মামলা বিবরণীতে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রংপুর নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে সিটি বাজারের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর গুলি করেন। এ ঘটনায় গত ১৩ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন আহত মামুনুর রশিদ। লিপি খান মামলার এজাহারনামীয় ১৭৯ নম্বর আসামি।
ওসি আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি লিপি খানকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে রংপুরে এনে আদালতে তোলা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় ‘ডিবি হেফাজতে’ যুবকের মৃত্যুতে এমএসএফের উদ্বেগ
ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে এর নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমএসএফ বলেছে, গত শনিবার হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজকে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারের দাবি, জামিনে থাকা সত্ত্বেও ডিবি পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের হেফাজতেই এজাজের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে ডিবি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান।
বিজপ্তিতে এজাজের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, তিনি (তালেবুর রহমান) বলেছেন, এজাজ ডিবি হেফাজতে মারা যাননি। কিছুদিন আগে গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হন এজাজ। এর পর থেকে তিনি ধানমন্ডির জাপান–বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। শনিবার ভোররাত ৪টা ৪০ মিনিটে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান এজাজ। যেহেতু তাঁর নামে মামলা রয়েছে, তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে থানা-পুলিশ ও ডিবি পুলিশ উপস্থিত ছিল।
এমএসএফ মনে করে, ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি রাখে, কারণ রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা যেকোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশের আইনি দায়িত্ব।
এমন অবস্থায় এজাজের মৃত্যু নিয়ে পরিবার থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।