এ লেখার শুরুটা করতে চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ফরিদ খানের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ‘একাই রাস্তায়’ নেমে প্রতিবাদ করা এই অধ্যাপক ১৩ মার্চ তাঁর টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘যেখানে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি সীমিত বা নিষিদ্ধ হচ্ছে, সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মকাণ্ড যেন দিনে দিনে আরও ব্যাপকতা লাভ করছে। ক্যাম্পাসে, হলে সর্বত্র এর সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়! অথচ এ ক্যাম্পাস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার ছিল, যাদের অন্যতম দাবি ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

আমরা সেই পুরোনো চেহারা দেখতে চাই না। এ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী আন্তসংঘাতের ইতিহাস বড়ই হৃদয়বিদারক এবং কলঙ্কের!

একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন। অন্তত হলে হলে ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি সে যে নামেই হোক, যে উদ্দেশ্য নিয়েই হোক নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের’ এমন জোরালো কথা অধ্যাপক ফরিদ খান ব্যতীত অন্য কোনো শিক্ষক এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বলতে পেরেছেন বলে আমি জানি না।

তবে শুধু এই শিক্ষক নন, ৫ আগস্ট–পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির পুরোনো খোলনলচে দেখার পর ‘বিবেকবান’ শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ অভিভাবক—সবাই উদ্বিগ্ন, হতাশ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না। সংগত কারণে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে অধ্যাপক ফরিদরা ‘সেকেলে ছাত্ররাজনীতি’র ভয়ার্ত চেহারা অনুধাবন করতে পেরেছেন বিধায় ‘ছাত্ররাজনীতি’ নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিচ্ছেন।

যদিও অধ্যাপক ফরিদ খান তাঁর সেই লেখায় কেবল ছাত্ররাজনীতির কথাই বলেছেন, তবে এই ছাত্ররাজনীতির ওপিঠে থাকা ‘শিক্ষক রাজনীতি’ যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক শিক্ষার বিকাশে পাহাড়সম বাধা, তা হয়তো তিনি বলতে পারেননি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই পেশিশক্তির রাজনীতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। এ কারণে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১৯ জুলাই যে ৯ দফা দাবি নিয়ে পুরো দেশ সরব অবস্থানে গিয়েছিল, তার মধ্যে সাত নম্বর দাবিটি উঠেছিল ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা’। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে দখলবাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিষিয়ে তোলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হাজার হাজার শিক্ষার্থী একই মোহনায় গিয়ে মিশেছিলেন। সবার দাবি ছিল, শিক্ষাঙ্গন হবে রাজনীতিমুক্ত। শিক্ষাঙ্গনে থাকবে নাকো কোনো অস্ত্রের ঝনঝনানি।

এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করা গেলেও শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা গেল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক ডেকেও লাগাম টানা গেল না লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির।

আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অচিরেই সব ক্যাম্পাস থেকে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করবে, পাশাপাশি শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত করবে। তাহলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবিক, সুন্দর এবং মেধাবীদের প্রজ্ঞায় পরিচালিত হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান।

ফলে অল্প কিছুদিন সহাবস্থানে থাকার পর শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সেই ‘আধিপত্য ও দখলদারি’র পুরোনো চেহারা আমরা দেখতে পাচ্ছি। গুপ্ত-সুপ্ত তর্কে পাল্টাপাল্টি শোডাউন-হাঙ্গামা আমরা দেখলাম খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকটাই ছাত্রলীগ স্টাইলে ছাত্ররাজনীতিতে ফিরছে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকা সংগঠনগুলো।

প্রশ্ন হলো, কেন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা গেল না? কেন জুলাইয়ে শপথ নেওয়া ৯ দফার দাবির মধ্যে থাকা এ দাবিকে বাস্তবরূপ দেওয়া গেল না?

এর মূল কারণ হিসেবে ধারণা করছি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের’ জাতীয় রাজনীতিতে রূপান্তরের বিষয়টি। তাঁরা যখন জুলাই-আগস্ট লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিটি তুলেছিল, সম্ভবত সেই সময় তাদের চিন্তা বা কল্পনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মূলধারায় জাতীয় রাজনীতিতে অবস্থানের বিষয়টা ছিল না।

ফলে তরুণদের দ্বারা গঠিত ‘রাজনৈতিক দল’টির অভিপ্রায়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয়তো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে যায়। কারণ, দলটির নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে অধিকাংশই ছাত্র। আর ছাত্রদের দ্বারা গঠিত দলটি পরিচালনা করার জন্য ‘অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি’ জিইয়ে রাখা প্রয়োজন ছিল। এ কারণে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানার থেকে সেভাবে ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি’ বন্ধের জোরালো কোনো আওয়াজ আমরা শুনতে পাইনি।

অথচ এই তরুণেরা আগের সরকারের ছাত্রসংগঠন দ্বারা একটি সীমাহীন লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে সময় পার করেছেন। তাঁদের এই পিছিয়ে আসার কারণে আমাদের উচ্চশিক্ষার যে বিকাশের সম্ভাবনার দ্বার রচিত হয়েছিল, সবার মনে যে আশার সঞ্চার ঘটেছিল, সেখানে জল ঢালা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে শরিক হওয়া সেসব সাধারণ শিক্ষার্থী, যাঁরা আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি পছন্দ করতেন না, সেই শিক্ষার্থীদের আরেক দফা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলো বৈকি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার চার দিনের মাথায় গত ১২ আগস্ট আমি প্রথম আলোতে লিখেছিলাম ‘ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি’ কেন বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রাস করছে, তার বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। এ লেখায় সেগুলো পুনরাবৃত্তি করে লেখাটি দীর্ঘায়িত করতে চাই না।

শুধু এটুকু বলতে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি বড় সুযোগ ছিল, আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো। যুগের পর যুগ চলে আসা শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানসপটে বিশ্ববিদ্যালয়কে তার নিজস্ব রূপে ফেরানো। কিন্তু আমরা সম্ভবত সেই পথকে আলিঙ্গন করতে পারলাম না। আমাদের বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারলাম না।

অথচ সরকার জানে, এই লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতির কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমরা বিশ্ব পরিমণ্ডলে মানসম্মত উচ্চশিক্ষালয় গড়তে পারিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর ‘দাসত্বের’ কাছে বলি দেওয়া শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরব হয়ে উঠছেন। সামনের দিনগুলোতে এই মহালয়া আরও প্রকট হবে, প্রাণ যাবে, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে দিনের পর দিন। শিক্ষক হওয়ার জন্য ধরনা দিতে হবে ছাত্রনেতাদের দরজায়, শিক্ষকনেতাদের বাসায়।

যাঁরা বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি বেঁচে থাকা প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষকে সচল রাখতে, দুর্নীতি ঠেকাতে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন; তাঁরা কেউ স্বীকার করেন না, এই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া মানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা বন্ধ হওয়া নয়। শিক্ষার্থীদের বড় প্ল্যাটফর্ম আছে—‘ছাত্র সংসদ’। সেখানে নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ যেমন তৈরি থাকবে, তেমনি পছন্দের নেতাদের বাছাই করার সুযোগও থাকবে।

কিন্তু এসব না করায়, ছাত্র সংসদ উজ্জীবিত না করায় আত্মসিদ্ধির জন্য ‘দলীয় মতাদর্শিক’ রাজনীতির বিস্তার ঘটেই চলছে। অথচ দেখেন, এবারের অভ্যুত্থান কিন্তু কোনো দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে হয়নি, করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যে ছেলে বা মেয়েটি জীবনে একটি স্লোগানও দেননি, তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন কোটা বাতিলের দাবিতে। শিক্ষার্থীদের উপকার হয় এমন যৌক্তিক দাবিগুলো কখনোই ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে হয় না, বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বিভিন্ন সময়ে নিজেদের দাবি আদায় করেছেন।

এরপরও যদি আপনারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে দয়া করে তিনটি কাজ করুন। এক.

জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ছাত্রসংগঠন’ থাকলেও তাঁরা কখনোই দলীয় কোনো মিছিল-সমাবেশ অথবা দলীয় এজেন্ডার আলোকে কোনো কর্মসূচি ক্যাম্পাসগুলোতে করতে পারবে না। দুই. কোনো ছাত্রসংগঠন আবাসিক দল দখল, আধিপত্য কিংবা সংঘর্ষ কিংবা মারামারির ঘটনা ঘটলে সেসব সংগঠন ক্যাম্পাসে দুই বছর নিষিদ্ধ থাকবে এবং জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। তিন. শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া কোনো ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে শোডাউন, মিছিল-সমাবেশ করতে পারবে না।

এই তিনটি বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারলে দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির যে ধারালো বিষাক্ত দাঁত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বসত, তা আপনাআপনি স্তিমিত হয়ে আসবে। ক্যাম্পাসগুলো অশান্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে।

এটা করতে না পারলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা সত্যিই হুমকির মুখে পড়বে। ক্রমেই মেধাশূন্য প্রজন্ম তৈরি হবে। চিন্তাশীলতায় বাগড়া আসবে, দেশের স্বপ্ন ভূলুণ্ঠিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অচিরেই সব ক্যাম্পাস থেকে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করবে, পাশাপাশি শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত করবে। তাহলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবিক, সুন্দর এবং মেধাবীদের প্রজ্ঞায় পরিচালিত হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান।

ড. নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: [email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর স গঠনগ ল র জন ত র র র জন ত সরক র র স গঠন র ত ক দল আম দ র য় র জন র জন য আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে ২০ সংগঠনকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমঞ্চে তুলতে প্রশাসনের নিষেধ

‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ অভিযোগ তুলে প্রায় ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ডিসি হিলের পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মঞ্চে তুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের সংগঠকদের কাছে এই তালিকা পাঠানো হয়। পরে ফোন করে তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলোকে আগামীকাল সোমবারের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার জন্য বলা হয়।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন আয়োজনের প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মূলত জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস), বিএনপির সহযোগী সংগঠন মিলে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া স্মারকলিপিতে এই সংগঠনগুলোকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনের বিষয়ে জাসাস চট্টগ্রামের সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ (শিপন) প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসররা নববর্ষ অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি। ডিসিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা নববর্ষের অনুষ্ঠান করতে পারবে না।’

সংগঠনগুলোর মধ্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, নরেন আবৃত্তি একাডেমি, খেলাঘর, রক্তকরবী, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ড্যান্স, ঘুঙুর নৃত্য একাডেমি অন্যতম।

ডিসি হিলে আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখানে প্রায় ৫৫টি সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য নাম নিবন্ধন করেছে। শুরু থেকে ডিসি হিলে অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়েও দেনদরবার করতে হয় অনেক। এখন নতুন করে ২০টি সংগঠনকে বাদ দিতে বলায় বিপাকে পড়েছেন আয়োজকেরা।

সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার আমাকে একটা তালিকা পাঠান। পরে ফোন দিয়ে বলা হয় এই সংগঠনগুলোকে মঞ্চে তোলা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তারা নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর।’

সুচরিত দাশ আরও বলেন, ‘স্টাফ অফিসারকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি কোনো সংগঠনকে বাদ দিতে আমরা পারব না। প্রয়োজনে ডিসি হিলের অনুমতি বাতিল করে চিঠি দিয়ে দিক আমাদের। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে মঞ্চে তুলব না। কিন্তু সংগঠন বাদ দিতে পারব না।’

জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার মো. ইস্রাফিল জাহান তালিকা পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার শাহীদ ইশরাক ভালো বলতে পারবেন।

সহকারী কমিশনার শাহীদ ইশরাক প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিক কমিটি, রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজ থেকে কিছু সংগঠনের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। তাদের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনও হয়েছে। তাদের একটি তালিকা আয়োজকদের দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা উদীচী কীভাবে ফ্যাসিস্টের দোসর হলো এমন এক প্রশ্নে শাহীদ ইশরাক বলেন, ‘আসলে বিষয়টা বিব্রতকর। আমরা নানামুখী ঝামেলায় আছি।’

তবে বর্ষবরণের অপর অনুষ্ঠান সিআরবির শিরীষতলার আয়োজকদের কাছে কোনো সংগঠনের তালিকা পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে। এই সংগঠনগুলোর অনেকে ওখানেও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে ২০ সংগঠনকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমঞ্চে তুলতে প্রশাসনের নিষেধ