ছাত্ররাজনীতি কেন বন্ধ করা গেল না
Published: 16th, March 2025 GMT
এ লেখার শুরুটা করতে চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ফরিদ খানের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে। শেখ হাসিনা সরকারের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ‘একাই রাস্তায়’ নেমে প্রতিবাদ করা এই অধ্যাপক ১৩ মার্চ তাঁর টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘যেখানে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি সীমিত বা নিষিদ্ধ হচ্ছে, সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মকাণ্ড যেন দিনে দিনে আরও ব্যাপকতা লাভ করছে। ক্যাম্পাসে, হলে সর্বত্র এর সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়! অথচ এ ক্যাম্পাস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার ছিল, যাদের অন্যতম দাবি ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
আমরা সেই পুরোনো চেহারা দেখতে চাই না। এ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী আন্তসংঘাতের ইতিহাস বড়ই হৃদয়বিদারক এবং কলঙ্কের!
একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন। অন্তত হলে হলে ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি সে যে নামেই হোক, যে উদ্দেশ্য নিয়েই হোক নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়ে ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের’ এমন জোরালো কথা অধ্যাপক ফরিদ খান ব্যতীত অন্য কোনো শিক্ষক এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বলতে পেরেছেন বলে আমি জানি না।
তবে শুধু এই শিক্ষক নন, ৫ আগস্ট–পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির পুরোনো খোলনলচে দেখার পর ‘বিবেকবান’ শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ অভিভাবক—সবাই উদ্বিগ্ন, হতাশ। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না। সংগত কারণে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে অধ্যাপক ফরিদরা ‘সেকেলে ছাত্ররাজনীতি’র ভয়ার্ত চেহারা অনুধাবন করতে পেরেছেন বিধায় ‘ছাত্ররাজনীতি’ নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিচ্ছেন।
যদিও অধ্যাপক ফরিদ খান তাঁর সেই লেখায় কেবল ছাত্ররাজনীতির কথাই বলেছেন, তবে এই ছাত্ররাজনীতির ওপিঠে থাকা ‘শিক্ষক রাজনীতি’ যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক শিক্ষার বিকাশে পাহাড়সম বাধা, তা হয়তো তিনি বলতে পারেননি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই পেশিশক্তির রাজনীতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। এ কারণে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১৯ জুলাই যে ৯ দফা দাবি নিয়ে পুরো দেশ সরব অবস্থানে গিয়েছিল, তার মধ্যে সাত নম্বর দাবিটি উঠেছিল ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা’। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে দখলবাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিষিয়ে তোলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হাজার হাজার শিক্ষার্থী একই মোহনায় গিয়ে মিশেছিলেন। সবার দাবি ছিল, শিক্ষাঙ্গন হবে রাজনীতিমুক্ত। শিক্ষাঙ্গনে থাকবে নাকো কোনো অস্ত্রের ঝনঝনানি।
এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করা গেলেও শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা গেল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক ডেকেও লাগাম টানা গেল না লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির।
আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অচিরেই সব ক্যাম্পাস থেকে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করবে, পাশাপাশি শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত করবে। তাহলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবিক, সুন্দর এবং মেধাবীদের প্রজ্ঞায় পরিচালিত হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান।ফলে অল্প কিছুদিন সহাবস্থানে থাকার পর শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সেই ‘আধিপত্য ও দখলদারি’র পুরোনো চেহারা আমরা দেখতে পাচ্ছি। গুপ্ত-সুপ্ত তর্কে পাল্টাপাল্টি শোডাউন-হাঙ্গামা আমরা দেখলাম খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেকটাই ছাত্রলীগ স্টাইলে ছাত্ররাজনীতিতে ফিরছে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকা সংগঠনগুলো।
প্রশ্ন হলো, কেন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা গেল না? কেন জুলাইয়ে শপথ নেওয়া ৯ দফার দাবির মধ্যে থাকা এ দাবিকে বাস্তবরূপ দেওয়া গেল না?
এর মূল কারণ হিসেবে ধারণা করছি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের’ জাতীয় রাজনীতিতে রূপান্তরের বিষয়টি। তাঁরা যখন জুলাই-আগস্ট লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিটি তুলেছিল, সম্ভবত সেই সময় তাদের চিন্তা বা কল্পনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মূলধারায় জাতীয় রাজনীতিতে অবস্থানের বিষয়টা ছিল না।
ফলে তরুণদের দ্বারা গঠিত ‘রাজনৈতিক দল’টির অভিপ্রায়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয়তো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে যায়। কারণ, দলটির নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে অধিকাংশই ছাত্র। আর ছাত্রদের দ্বারা গঠিত দলটি পরিচালনা করার জন্য ‘অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি’ জিইয়ে রাখা প্রয়োজন ছিল। এ কারণে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানার থেকে সেভাবে ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি’ বন্ধের জোরালো কোনো আওয়াজ আমরা শুনতে পাইনি।
অথচ এই তরুণেরা আগের সরকারের ছাত্রসংগঠন দ্বারা একটি সীমাহীন লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে সময় পার করেছেন। তাঁদের এই পিছিয়ে আসার কারণে আমাদের উচ্চশিক্ষার যে বিকাশের সম্ভাবনার দ্বার রচিত হয়েছিল, সবার মনে যে আশার সঞ্চার ঘটেছিল, সেখানে জল ঢালা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে শরিক হওয়া সেসব সাধারণ শিক্ষার্থী, যাঁরা আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি পছন্দ করতেন না, সেই শিক্ষার্থীদের আরেক দফা হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলো বৈকি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার চার দিনের মাথায় গত ১২ আগস্ট আমি প্রথম আলোতে লিখেছিলাম ‘ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি’ কেন বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রাস করছে, তার বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। এ লেখায় সেগুলো পুনরাবৃত্তি করে লেখাটি দীর্ঘায়িত করতে চাই না।
শুধু এটুকু বলতে চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি বড় সুযোগ ছিল, আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানো। যুগের পর যুগ চলে আসা শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানসপটে বিশ্ববিদ্যালয়কে তার নিজস্ব রূপে ফেরানো। কিন্তু আমরা সম্ভবত সেই পথকে আলিঙ্গন করতে পারলাম না। আমাদের বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারলাম না।
অথচ সরকার জানে, এই লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতির কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমরা বিশ্ব পরিমণ্ডলে মানসম্মত উচ্চশিক্ষালয় গড়তে পারিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর ‘দাসত্বের’ কাছে বলি দেওয়া শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরব হয়ে উঠছেন। সামনের দিনগুলোতে এই মহালয়া আরও প্রকট হবে, প্রাণ যাবে, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে দিনের পর দিন। শিক্ষক হওয়ার জন্য ধরনা দিতে হবে ছাত্রনেতাদের দরজায়, শিক্ষকনেতাদের বাসায়।
যাঁরা বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি বেঁচে থাকা প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষকে সচল রাখতে, দুর্নীতি ঠেকাতে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন; তাঁরা কেউ স্বীকার করেন না, এই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়া মানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা বন্ধ হওয়া নয়। শিক্ষার্থীদের বড় প্ল্যাটফর্ম আছে—‘ছাত্র সংসদ’। সেখানে নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ যেমন তৈরি থাকবে, তেমনি পছন্দের নেতাদের বাছাই করার সুযোগও থাকবে।
কিন্তু এসব না করায়, ছাত্র সংসদ উজ্জীবিত না করায় আত্মসিদ্ধির জন্য ‘দলীয় মতাদর্শিক’ রাজনীতির বিস্তার ঘটেই চলছে। অথচ দেখেন, এবারের অভ্যুত্থান কিন্তু কোনো দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে হয়নি, করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যে ছেলে বা মেয়েটি জীবনে একটি স্লোগানও দেননি, তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন কোটা বাতিলের দাবিতে। শিক্ষার্থীদের উপকার হয় এমন যৌক্তিক দাবিগুলো কখনোই ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে হয় না, বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরাই বিভিন্ন সময়ে নিজেদের দাবি আদায় করেছেন।
এরপরও যদি আপনারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে দয়া করে তিনটি কাজ করুন। এক.
এই তিনটি বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারলে দেখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির যে ধারালো বিষাক্ত দাঁত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বসত, তা আপনাআপনি স্তিমিত হয়ে আসবে। ক্যাম্পাসগুলো অশান্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে।
এটা করতে না পারলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা সত্যিই হুমকির মুখে পড়বে। ক্রমেই মেধাশূন্য প্রজন্ম তৈরি হবে। চিন্তাশীলতায় বাগড়া আসবে, দেশের স্বপ্ন ভূলুণ্ঠিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অচিরেই সব ক্যাম্পাস থেকে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করবে, পাশাপাশি শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত করবে। তাহলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবিক, সুন্দর এবং মেধাবীদের প্রজ্ঞায় পরিচালিত হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান।
ড. নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর স গঠনগ ল র জন ত র র র জন ত সরক র র স গঠন র ত ক দল আম দ র য় র জন র জন য আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণমিছিল স্থগিত, শহীদ মিনারে সমাবেশ
পূর্বঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। গণমিছিল না করলেও সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশ থেকেই গণমিছিল স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পরে শহীদ মিনারের পাদদেশে সমাবেশ শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শেষ হয়। হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিতে আজ দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বামপন্থী ছাত্র, শ্রমিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গণমিছিল করার কথা ছিল। গণমিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর ঘুরে টিএসসিতে শেষ করার কথা ছিল।
কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ (বিসিএল), বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক সংসদ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহিদ শাহরিয়ার রেজা সমাবেশে বলেন, ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠী আমাদের এ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নানা ধরনের চক্রান্ত করে আসছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারও এ ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখছে। তাদের মনোবাসনা প্রগতিশীল ছাত্র-যুবসমাজ পূরণ হতে দেবে না।’
সমাবেশ থেকে নারী ও শিশু নিপীড়ন, ধর্ষণ, খুনের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন। এতে বলা হয়, মাগুরার শিশুটির মৃত্যুতে সারা দেশ শোকাহত। কিন্তু ওই শিশুর মতো ঘটনা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণ, বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ওপর খড়্গহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তী সময়ে তাদের নামেই মামলা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে ৭টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে, ১. সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে। ২. ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে। ৩. জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ৪. মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে। ৫ . চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ ও যৌথ বাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে। ৬. সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে সংগঠিত হত্যার বিচার করতে হবে। ৭. হিন্দু ও ক্ষদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঘরবাড়িতে হামলা—লুটপাটের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সমাজতন্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ই, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল, যুব ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বেলা ১১টায় জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ দুই দফা দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ‘প্রতিবাদী জুলাই জমায়েত’ শুরু হয়। পরে তাঁরা শহীদ মিনার অভিমুখে একটি মিছিল নিয়ে রওনা হন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের কাছে যাওয়ার আগেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে পুলিশের অনুরোধে তাঁরা মিছিলটি নিয়ে আবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে ফিরে এসে তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।