মাদারীপুরে অচেতন করে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুজনকে পিটুনি দিয়েছেন লোকজন। আজ রোববার ভোরে সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পরে পুলিশ পিটুনিতে আহত দুজনকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় অসুস্থ অবস্থায় গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রীকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে সদর উপজেলার পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামের গোলাম রহমান ফকিরের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজে আসেন কয়েকজন শ্রমিক। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ইফতারির সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন তাঁরা। খাবার খেয়ে বাড়ির লোকজন অচেতন হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আজ ভোরে ঘর থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। সাহ্‌রি শেষে নামাজ পড়তে বের হয়ে প্রতিবেশীরা গোলাম রহমানের ফকিরের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পান। তাঁরা ভেতরে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকদের দেখতে না পেয়ে তাঁরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে বের হন। পাশের হাজমকান্দি এলাকায় ইজিবাইকে রাজমিস্ত্রি ও এক শ্রমিককে আটক করে পিটুনি দেন তাঁরা।

পিটুনিতে আহত দুজন হলেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা হাসানপুর গ্রামের আক্কাস খাঁর ছেলে আমিন খাঁ (২৫) ও দিঘলিয়া এলাকার রুবেল মিয়াকে (৩৫)। তাঁদের কাছ থেকে লুট হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার জব্দ করে পুলিশ। আহত দুজন এবং গৃহকর্তা ও তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করা হয় মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে।

গোলাম রহমান ফকিরের মেয়ে তানিয়া আফরোজ বলেন, ‘এরা মুখোশধারী ডাকাত। এদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত। যারা ছদ্মবেশে এই জঘন্য কাজটি করেছে, তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ভোরে গণপিটুনিতে আহত দুজনসহ চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবাই শঙ্কামুক্ত। তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান বলেন, লুট হওয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। আটক দুজন পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি।। ঘটনাস্থল থেকে ইরান নামে আরও একজন পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র আহত দ রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাদা কাপড় বাটিকে রঙিন হয় যে গ্রামে

কমলপুর কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম। আয়তনে ছোট হলেও দেশজুড়ে কমলপুর গ্রামের বেশ পরিচিতি। কারণ, বাটিক পোশাকের গ্রাম বা বাটিকপল্লি হিসেবে নাম কুড়িয়েছে এটি। এখানকার বাসিন্দারা সারা বছরই বাহারি বাটিকের পোশাক তৈরি করেন। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এই বাটিকপল্লিতে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণে।

কমলপুর গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল বাটিকপল্লির কর্মব্যস্ততা। তৈরি হচ্ছে রংবেরঙের বাটিকের পোশাক। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে এ বছর নানা ধরনের নকশায় তৈরি করা হচ্ছে বাটিক শাড়ি ও থ্রি-পিস। সাদা কাপড়ের মধ্যে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আর ক্রেতার চাহিদার কথা ভেবে নিত্যনতুন নকশা ফুটিয়ে তুলছেন কারিগরেরা।

কমলপুর বাটিকপল্লির তিনটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রথমে প্রিন্ট করার জন্য কাপড় কেটে প্রস্তুত করা হয়। এরপর মোম দিয়ে সেই কাপড়ে নানা ধরনের নকশা করেন কারিগরেরা। রঙের স্থায়িত্ব বাড়াতে রং করার পর কাপড় সেদ্ধ করে একটি দল। সেখান থেকে তুলে কাপড়ে মাড় দিচ্ছে আরেক দল। এরপর সেই কাপড় কয়েক দফা পানিতে ধুয়ে মাঠে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানোর পর কাপড় ইস্তিরি করে বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়।

বাটিকের সিল্ক ও সুতি শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, লুঙ্গি, বেডশিট, গজ কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির জন্য এই গ্রামে অন্তত ১০টি কারখানা আছে। শুরুটা কমলপুর থেকে হলেও এখন আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও বাটিকের পোশাক তৈরি হচ্ছে। তবে গুণে ও মানে এখনো সেরা বলে ক্রেতার পছন্দের শীর্ষে কমলপুরের বাটিকের পণ্য।

কমলপুর বাটিকপল্লির একটি কারখানার মালিক মো. রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের দিকে আমার চাচা লাল মিয়া মেম্বার এই গ্রামে বাটিক শিল্পের যাত্রা শুরু করেন। তাঁর হাত ধরেই বাটিক কুমিল্লার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। চাচা ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরা রাজ্যে কাপড়ে মোম ও রং দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শেখেন। এরপর গ্রামে এসে তিনি বাটিক তৈরির কাজ ছোট আকারে শুরু করেন। কালের পরিক্রমায় বাটিকের চাহিদা বাড়তেই থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের বাটিকের পোশাক। আমাদের তৈরি এই বাটিকের পোশাক গুণে ও মানে অনন্য এবং পরতেও আরামদায়ক।’

বাটিক করার জন্য প্রথমে সাদা কাপড় সংগ্রহ করা হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ