কেমন হলো বাংলাদেশ ফুটবল দলের অ্যাওয়ে জার্সি?
Published: 16th, March 2025 GMT
প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক কিট স্পন্সর পেল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। দেশীয় স্পোর্টস ব্র্যান্ড ‘দৌড়’ এবার থেকে জাতীয় দলের কিট স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়েছে। বাফুফের নতুন কমিটির চার মাসের মাথায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। আর এই চুক্তির পরই প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশ দলের নতুন অ্যাওয়ে জার্সি।
বিদেশের মাঠে, অর্থাৎ অ্যাওয়ে ম্যাচে এই জার্সিতে দেখা যাবে জামাল ভূঁইয়াদের। সম্পূর্ণ লাল রঙের জার্সিটিতে দেশের প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দারুণ নান্দনিকভাবে। জার্সির মাঝে রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র, নদী, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় ফুল শাপলার ছাপ। বুকের অংশে আঁকা নদীর রেখা যেন বাংলাদেশের নদীমাতৃক বৈশিষ্ট্যের প্রতিচ্ছবি।
নদীগুলোকে তুলে ধরতে ব্যবহৃত হয়েছে হালকা লাল রঙ, যার মাঝে সূর্যের আভাও স্পষ্ট। সেই আভা যেন নতুন দিনের প্রতীক। পাশাপাশি তিন নদীর অববাহিকা এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যা অনেকটা বিজয়ের প্রতীক ‘ভি’-এর মতো। জার্সির হাতায় রয়েছে শাপলার প্রতীকী নকশা, যা শুধু জাতীয় ফুলের প্রতিনিধিত্বই নয়, বরং ফুটবলারের দৃঢ়তা, স্বচ্ছতা ও আত্মবিশ্বাসকেও প্রকাশ করছে।
হাতার ডিজাইনে ডায়মন্ডের আকৃতিও সংযুক্ত করা হয়েছে, যা জার্সির সৌন্দর্যে যোগ করেছে আরও আধুনিকতা। সবমিলিয়ে জার্সিটি ফুটিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, পরিচয় ও ফুটবল দলের অদম্য স্পিরিট। জার্সির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৪০০ টাকা। অ্যাওয়ে জার্সিটি অফিসিয়ালি কেনা যাবে এই ঠিকানায়। এই জার্সির ডিজাইন করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার তাসমিত আফিয়াত, যিনি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী এবং দেশের মানচিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই শিল্পকর্মটি গড়েছেন।
উল্লেখ্য, গত মাসে নারী দলের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের মাধ্যমেই বাফুফের সঙ্গে ‘দৌড়’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে সেবার কোনো জার্সি বা ট্র্যাকসুট সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এবার পুরুষ দলের নতুন অ্যাওয়ে জার্সি প্রকাশের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল এই স্পন্সরশিপ। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচেই জামাল-হামজাদের এই নতুন জার্সিতে দেখা যেতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
এত সয়াবিন আমদানি, তবু সংকট কেন
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস হচ্ছে সয়াবিন তেলের কাঁচামাল। খালাসের পর এসব কাঁচামাল কারখানায় নেওয়া হচ্ছে। এত আমদানির রেকর্ড অতীতে কখনো হয়নি। আমদানি বৃদ্ধিতে বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও সংকট কাটছে না।
এদিকে বাজারে সংকটের সুযোগে খুচরায় নির্ধারিত দামের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ–দশ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দাম দিতে। আমদানি বেশি হওয়ার পরও বাজারে তেলের সংকটের জন্য আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতারা একে অপরকে দুষছেন।
বাজারে সয়াবিনের চলমান সংকটের মধ্যে সরকারের দেওয়া শুল্কছাড়ের সুবিধা ৩১ মার্চ শেষ হচ্ছে। শুল্কছাড়ের এই সুবিধা উঠে গেলে লিটারপ্রতি সয়াবিন আমদানি ও বাজারজাতে ১৪–১৫ টাকার মতো বাড়তি শুল্ক–কর দিতে হবে। তাতে সয়াবিন তেলের দামও আরেক দফা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কায় সয়াবিন মজুতপ্রবণতাও বাড়ছে।
১৭ দিনে আমদানি ১ লাখ ৩৬ হাজার টনজাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত ১৭ দিনে বন্দর থেকে এক লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস করেছে সাতটি শিল্প গ্রুপ। একই সময়ে খালাস হয়েছে দুই লাখ টন সয়াবিনবীজ, যা মাড়াই করে পাওয়া যাবে ৩৬ হাজার টন সয়াবিন তেল।
আমদানি করা অপরিশোধিত তেল কারখানায় নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধন শেষে তা বাজারজাত করা হয়। পরিশোধের পর কোম্পানিগুলো বাজারে সরবরাহও করছে। এরপরও বাজারে সংকট কাটছে না।
জানতে চাইলে সয়াবিন তেলের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি বাড়ছে এটা ঠিক। আমরাও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তেল বাজারে দিচ্ছি। এখন সংকট হওয়ার কথা নয়।’
এবার রোজার আগে জানুয়ারিতে ১ লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছিল। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম তিন সপ্তাহে সেই ধারাবাহিকতা ছিল না। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও আমদানি বাড়তে থাকে। আমদানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
বাজারের চিত্র ভিন্নবাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহের খোঁজে চট্টগ্রামের খুচরা বাজার চকবাজার ও বহদ্দারহাটে যান প্রথম আলোর প্রতিবেদক। এই দুই বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০টি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করা হয়। গত শনিবার এসব দোকানে এক বা দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের মজুত ছিল কম। অবশ্য দুই বাজার ঘুরে অধিকাংশ দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। তবে বোতলের গায়ে ৮৫০ টাকা দাম লেখা থাকলেও দোকানিরা বিক্রি করছেন ৯০০ টাকার বেশি দামে। আবার এক লিটারের বোতলের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮৫ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে বাজারে সয়াবিনের সংকট ছিল। এ সংকট এখন কমে এলেও চাহিদা অনুযায়ী তেল নেই বাজারে। তাই বাজারে এখনো তেলের দাম বাড়তি। কারণ পরিবেশকেরা (ডিলার) পর্যাপ্ত তেল বাজারে ছাড়ছেন না। চকবাজারে নাজমুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে, ব্যবসায়ীরা মানে না। দিন শেষে ভোগান্তি হয় মানুষের। দুই দিন আগেও ১৯০ টাকায় এক লিটার তেল কিনেছি। বোতলের গায়ে লেখা দাম মুছে দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
নাজমুলের বক্তব্য যাচাই করতে চকবাজারের কয়েকটি মুদিদোকানে খোঁজ নিয়ে একটি দোকানে এমন বোতল পাওয়া গেল। তবে ছবি তুলতে চাইলে ওই বিক্রেতা তা দেননি। মাসুম নামের ওই বিক্রেতা বলেন, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ১৭৫ টাকার বেশি দামে। তাই ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ক্রেতারা যাতে ঝামেলা না করে, তাই দাম মুছে দিয়েছে পরিবেশক।
যদিও পরিবেশকেরা বলছেন, তাঁরা এ কাজ করেন না। একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি নিউটন মল্লিক বলেন, তাঁরা আগের তুলনায় বেশি তেল সরবরাহ করছে। এরপরও দোকানিরা কেন তেল নেই বলছেন, তা জানা নেই।
বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমদানি-রপ্তানির হিসাব খবরে দেখি। সাধারণ মানুষ তো আমদানি-রপ্তানি বোঝে না। মানুষ বোঝে বাজারে গিয়ে স্বাভাবিক দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে কি না। যেহেতু আমদানি হয়েছে বলে শুনেছি, তাহলে এত সয়াবিন তো দেশেই আছে। তাহলে দাম বেশি কেন?
শুল্কছাড়ের মেয়াদ শেষ, মজুতের প্রবণতা?ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত বছরের শেষ দিকে তিন দফায় সয়াবিন তেলের শুল্ক–কর কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তাতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিনে শুল্ক–কর ১৭-১৮ টাকা থেকে কমে ৭ টাকায় নেমে এসেছে। যেমন মার্চে খালাস হওয়া সয়াবিন তেলে শুল্ক–কর ছিল কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা। এই সুবিধা রয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এরপর স্বাভাবিক শুল্ক–কর কার্যকর হবে।
৩১ মার্চের পর শুল্কছাড় সুবিধা বাড়ানোর আবেদন করেছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। এ সময় বাড়ানো না হলে প্রতি লিটার সয়াবিন আমদানি ও বাজারজাতে ১৪ থেকে ১৫ টাকা বাড়তি শুল্ক–কর দিতে হবে বলে আবেদনে বলা হয়। তাতে সয়াবিনের দাম আরও বাড়তে পারে। শুল্কছাড়ের বিষয়টি সামনে রেখে সয়াবিন মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। যেমন গত সপ্তাহে নগরের খতিবের হাট এলাকায় এক দোকান থেকে ৬ হাজার ৭০০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে আমরা সয়াবিনের মজুত পেয়েছি। বিশেষ করে ডিলারদের কাছে সয়াবিনের মজুত পাওয়া গেছে। অভিযানের কারণে বাজারে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি বিক্রি হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’