আবরার হত্যার আসামি পালানোর ছয় মাস পর কেন জানানো হলো বোধগম্য নয়, বললেন ছোট ভাই
Published: 16th, March 2025 GMT
আবরার ফাহাদ হত্যার রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ। যত দ্রুত সম্ভব রায় বাস্তবায়ন করে এটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করার জন্য আদালতের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
আবরার ফাহাদ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত বছরের ৬ আগস্ট কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন আবরার ফাইয়াজ । তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকে পালিয়েছে। কিন্তু এমন একজন আসামি, যিনি আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছয় মাস পরে কেন জানানো হলো, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এই রায় দেন।
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে এত বড় একটি রায় আসবে গত এক বছর আগে এমনটি আমরা কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। ’
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রসঙ্গে আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ছাত্রসংগঠন গুলো কথা বলতে পারবে। কিন্তু আমরা চাই, যে পরিণতি আবরার ফাহাদের হয়েছে, সেটা যেন অন্য কাউকে বরণ করতে না হয়।’ বিষয়টি নিয়ে সরকার ও ছাত্রসংগঠনগুলোকে ভূমিকা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
আবরার ফাহাদের বাবা বরকতউল্লাহ বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ভবিষ্যতে যেন আর কোনো আবরারকে জীবন দিতে না হয় সেই পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে র্যাগিং মুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই৷ যাতে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করতে পারেন।
দুপুরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে রায় ঘোষণার পর এসব কথা বলেন বরকতউল্লাহ। আবরার ফাহাদকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরও পড়ুনবুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন হাইকোর্টে বহাল২ ঘণ্টা আগেএদিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের নিজ বাড়ি থেকে আবরার ফাহাদ হত্যার রায়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর মা রোকেয়া খাতুন। দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন,‘আমার মতো কোনো মায়ের যেন সন্তান হারাতে না হয়। আর কোনো ছেলেকে যেন অল্প বয়সে নির্মমভাবে জীবন দিতে না হয়। এ জন্য সবার কাছে চাই যে, রায়টা দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর হলে আর কেউ হয়তো এমন কাজ করতে সাহস পাবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাদা কাপড় বাটিকে রঙিন হয় যে গ্রামে
কমলপুর কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম। আয়তনে ছোট হলেও দেশজুড়ে কমলপুর গ্রামের বেশ পরিচিতি। কারণ, বাটিক পোশাকের গ্রাম বা বাটিকপল্লি হিসেবে নাম কুড়িয়েছে এটি। এখানকার বাসিন্দারা সারা বছরই বাহারি বাটিকের পোশাক তৈরি করেন। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে এই বাটিকপল্লিতে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণে।
কমলপুর গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল বাটিকপল্লির কর্মব্যস্ততা। তৈরি হচ্ছে রংবেরঙের বাটিকের পোশাক। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে এ বছর নানা ধরনের নকশায় তৈরি করা হচ্ছে বাটিক শাড়ি ও থ্রি-পিস। সাদা কাপড়ের মধ্যে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আর ক্রেতার চাহিদার কথা ভেবে নিত্যনতুন নকশা ফুটিয়ে তুলছেন কারিগরেরা।
কমলপুর বাটিকপল্লির তিনটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রথমে প্রিন্ট করার জন্য কাপড় কেটে প্রস্তুত করা হয়। এরপর মোম দিয়ে সেই কাপড়ে নানা ধরনের নকশা করেন কারিগরেরা। রঙের স্থায়িত্ব বাড়াতে রং করার পর কাপড় সেদ্ধ করে একটি দল। সেখান থেকে তুলে কাপড়ে মাড় দিচ্ছে আরেক দল। এরপর সেই কাপড় কয়েক দফা পানিতে ধুয়ে মাঠে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানোর পর কাপড় ইস্তিরি করে বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়।
বাটিকের সিল্ক ও সুতি শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, লুঙ্গি, বেডশিট, গজ কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির জন্য এই গ্রামে অন্তত ১০টি কারখানা আছে। শুরুটা কমলপুর থেকে হলেও এখন আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও বাটিকের পোশাক তৈরি হচ্ছে। তবে গুণে ও মানে এখনো সেরা বলে ক্রেতার পছন্দের শীর্ষে কমলপুরের বাটিকের পণ্য।
কমলপুর বাটিকপল্লির একটি কারখানার মালিক মো. রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের দিকে আমার চাচা লাল মিয়া মেম্বার এই গ্রামে বাটিক শিল্পের যাত্রা শুরু করেন। তাঁর হাত ধরেই বাটিক কুমিল্লার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। চাচা ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরা রাজ্যে কাপড়ে মোম ও রং দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শেখেন। এরপর গ্রামে এসে তিনি বাটিক তৈরির কাজ ছোট আকারে শুরু করেন। কালের পরিক্রমায় বাটিকের চাহিদা বাড়তেই থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের বাটিকের পোশাক। আমাদের তৈরি এই বাটিকের পোশাক গুণে ও মানে অনন্য এবং পরতেও আরামদায়ক।’
বাটিক করার জন্য প্রথমে সাদা কাপড় সংগ্রহ করা হয়