আম্বানি পরিবারের ট্রফি ক্যাবিনেটে যুক্ত হলো আরও একটি ট্রফি। কাল মেয়েদের আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ডব্লুপিএলের শিরোপা জিতেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এটি নিয়ে আম্বানি পরিবারের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের ট্রফি দাঁড়াল ১২টিতে।

আম্বানি পরিবারের রিলায়েন্স গ্রুপ ক্রিকেটে বিনিয়োগ করেছে ইন্ডিয়াউইন স্পোর্টস লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে। এই কোম্পানি ভারতের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার লিগে দল কিনেছে।

এসব লিগেও দারুণ সফল তাদের দলগুলো। সে কারণেই তাদের শিরোপাসংখ্যা ১২। আর কোনো দল শিরোপা জেতার তালিকায় মুম্বাইয়ের ধারেকাছেও নেই।

আইপিএলে মুম্বাইয়ের সমান ৫টি শিরোপা আছে চেন্নাই সুপার কিংসের। চেন্নাই ফ্র্যাঞ্চাইজির মোট শিরোপা ৭টি, শিরোপা জয়ের তালিকায় তৃতীয় সর্বোচ্চ। তাদেরও দক্ষিণ আফ্রিকার এসএটোয়েন্টি ও যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে দল আছে। তবে সেখানে এখনো শিরোপার স্বাদ পায়নি সুপার কিংসরা।

আইপিএলের বাইরে তারা দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টিতে। বিভিন্ন দেশের লিগের শীর্ষ দলগুলো নিয়ে হওয়া এই টুর্নামেন্ট সর্বশেষ হয়েছে ২০১৪ সালে।

৮টি শিরোপা নিয়ে তালিকার দুইয়ে থাকা দলটির নাম কলকাতা নাইট রাইডার্স। এসএটোয়েন্টি ও মেজর লিগ ক্রিকেটের বাইরে সিপিএলে দল আছে নাইট রাইডার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির।

ক্যারিবিয়ান লিগে আইপিএলের চেয়েও সফল নাইট রাইডার্সরা। ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮, ২০২০ ও ২০২২—এই ৫ মৌসুমে সিপিএলের শিরোপা জিতেছে দলটি। এর মধ্যে ২০২২ সালের শিরোপাটি ছিল মেয়েদের। আর আইপিএলে সর্বশেষ আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে দলটি শিরোপা জেতে ২০১২ ও ২০১৪ সালে।

তালিকায় এর পরে থাকবে ৫টি করে শিরোপা জেতা বিগ ব্যাশের ফ্র্যাঞ্চাইজি পার্থ স্করচার্স ও সুপার স্ম্যাশের অকল্যান্ড এইসেস। ৪টি করে শিরোপা আছে বিপিএলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের জাফনা ও সুপার স্ম্যাশের সেন্ট্রাল স্টেজ ফ্র্যাঞ্চাইজির।

এই সব দলের চেয়ে মুম্বাই ফ্র্যাঞ্চাইজি একটা জায়গায় আলাদা। মুম্বাই ১২টি শিরোপা জিতেছে তাদের খেলা সর্বশেষ ১২টি ফাইনালে। মানে টানা ১২টি ফাইনালে হারের স্বাদ পায়নি দলটি। ফাইনাল জিততে জানে বলেই দলটির ট্রফি ক্যাবিনেটরে এত এত ট্রফি!

আইপিএলে দলটির কাছে আছে সর্বোচ্চ ৫টি শিরোপা। চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টিতে আছে ২টি। মেয়েদের আইপিএলে আছে আরও ২টি। মুম্বাই ইন্ডিয়ানস নামে দলটির শিরোপা এই ৯টি।

এর বাইরে তাদের শিরোপা আছে মুম্বাই নিউইয়র্ক (এমএলসি ২০২৩), মুম্বাই এমিরাটস (আইএলটি২০ ২০২৪), মুম্বাই কেপটাউনের (এসএ২০) হয়ে।

অথচ আম্বানি পরিবারকে প্রথম শিরোপার স্বাদ পেতে ৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ২০০৮ সালে আইপিএল দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস প্রথম ট্রফির দেখা পেয়েছিল ২০১১ সালে, চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টি দিয়ে। দলটি ফাইনাল হারের একমাত্র স্বাদ পায় ২০১০ সালে, আইপিএল ফাইনালে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ পর ব র র আম ব ন ফ ইন ল ইন ড য় প এল র দলট র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষুধার ওপর কর, চাপ বাড়ছে গরিবের জীবনে 

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে চরম সংকটে পড়েছেন দেশের রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নাগরিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ‍মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর অন্যতম কারণ।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন এক বেলা খাবার বাদ দিচ্ছেন, বোতলজাত পানি কিনতে পারছেন না, রুটি-বিস্কুটেই পেট চালিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর রয়েছে ৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। এই করনীতি গরিবের জীবনে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে তরুণদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ‘ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক’।

দেশের ১,০২২ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কেবল অর্থাভাবে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, এবং এর নিচেও আয়ের সংখ্যা কম নয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা বাদ দেন। দুপুর বা বিকেলের খাবারও বাদ দিতে হয় অনেক সময়। কারণ খাবার কেনার সামর্থ্য অনেক সময় তাদের থাকে না।
ভাতের বিকল্প সস্তা ও পেট ভরানো খাবারের মধ্যে বিস্কুট, কলা, পরোটা, ডিম এগিয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিস্কুট। ৫২৩ জন উত্তরদাতা এটিকে তাদের প্রিয় ও সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিস্কুটের ওপরও রয়েছে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাট কার্যত গরিবের খাবার থেকে কর আদায় করার শামিল। খাদ্যপণ্য হিসেবে যেসব আইটেম গরিব মানুষের নিত্যদিনের রসদ, তাদের ওপর ভ্যাট বসিয়ে বাজেট ভারসাম্য আনা সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থি। 

জরিপে ৯০৪ জন বলেছেন, তারা বোতলজাত পানি কিনতেই পারেন না। বোতলজাত পানিকে তারা বিলাসদ্রব্য বিবেচনা করেন।

জরিপ বলছে, ৮৯৭ জন মনে করেন আগের বাজেট তাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়নি। ৭০১ জন সরাসরি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিবেচনায় এখানে ভ্যাটের হার অনেক বেশি। এই শ্রেণির মানুষের জন্য একটি টাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতিতে সামান্যতম পরিবর্তনই দরিদ্র এই শ্রেণির জন্য একবেলার খাবার পাওয়া না পাওয়ার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

তবে হতাশার মাঝেও এবার নতুন সরকারের কাছে আশাবাদী হয়েছেন অনেকে। জরিপে ৭১২ জন অংশগ্রহণকারী বলেছেন—তারা আশা করছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার এবারের বাজেটে তাদের কথা শুনবে। তাদের দাবি, ‘সহানুভূতির দরকার নেই, দরকার ন্যায্যতার।’

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০৫ জন বলেছেন—নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কর কমানো উচিত। ১৯৫ জন বলছেন, ভর্তুকি ও সহায়তা বাড়ানো দরকার। ১৯৩ জন চান—ধনীদের ওপর কর বাড়ানো হোক।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, পণ্যের দাম কমানো, জনবান্ধব বাজেট, ভ্যাট হ্রাস এবং বাজারদর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই যেন বাজেটের মূল লক্ষ্য হয়। তবে অনেকেই কোনো প্রত্যাশা করেননি সংশয় বা নিরাশার কারণে।

চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওই তালিকায় বেকারিপণ্য, বিস্কুট ও কেকও ছিল। এসব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়। গত রমজানে নিত্যপণ্য বিবেচনায় নিয়ে এক মাসের জন্য কর ছাড় দেওয়া হলেও, এসব পণ্যে ৭.৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রমজানে যখন এই খাদ্যপণ্যগুলোকে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়, তখন বছরের বাকি সময়ে তা আবার কীভাবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ পণ্য হয়ে পড়ে? 

গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট দরিদ্রদের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের সাশ্রয়ী খাবার পাওয়ার সুযোগ আরও সীমিত করে তুলছে। সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল করা অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে এবং মৌলিক পুষ্টি নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে বিলাসপণ্যের ওপর কর বাড়িয়ে একটি ন্যায্য অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ