সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে বিজিবির ওপর হামলা করে গরু ছিনিয়ে নিয়েছে চোরাকারবারীরা। হামলায় বিজিবির দুই সদস্য আহত হয়েছেন। এরা হলেন- লেন্সনায়েক হারুনুর রশিদ ও জামশেদ হোসেন।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার টিপরাখলা সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।

বিজিবি সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী বিওপির সদস্যরা সীমান্তের ১২৮৭-৮৮ মেইন পিলারের মধ্যবর্তী এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। ওই সময় সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারতীয় কয়েকটি গরু নিয়ে আসছিল। এ সময় বিজিবির অবস্থান টের পেয়ে তাদের ওপর হামলায় চালায় চোরাকারবারীরা। বিজিবি একটি গরু ধরে রাখলেও অন্যগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।

জৈন্তাপুর বিওপি’র ক্যাম্প কমান্ডার জানিয়েছেন, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ র ক রব র

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে

দেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এই সংকট শুধু ভুক্তভোগীর জীবন নয়, সমাজের মূল ভিত্তিকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন বলতে নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণসহ সব ধরনের নির্যাতনই রয়েছে। তাই আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়।

‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের (বেসরকারি সংস্থা) প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বক্তারা। শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাগুরার শিশুটিসহ ৬ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ২৫টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা এই সহিংসতা জাতিকে হতবাক করেছে এবং সারা দেশে প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদে একাত্মতা ঘোষণা করে আজ আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এ সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে ধর্ষণের ভয়াবহতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণ বলার আহ্বান জানান বক্তারা।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার (১৫ মার্চ) গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দুটো শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা “নারী নির্যাতন” বা “নিপীড়ন” বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।’

ডিএমপি কমিশনার এমন মন্তব্য করলেও আইনে ধর্ষণের আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ ভুক্তভোগীর বয়স ও বৈবাহিক ধর্ষণ ছাড়া ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধিতে দেওয়া ধর্ষণের সংজ্ঞা অনুসরণ করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় ধর্ষণ, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যা, অপহরণ, যৌন পীড়ন, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, দহনকারী পদার্থ দিয়ে ক্ষতি করা, ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুর অঙ্গহানি–সংক্রান্ত আলাদা আলাদা ধারা রয়েছে, সে অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছর সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি। ফেব্রুয়ারি মাসে শুধু ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, গত বছর নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ২ হাজার ৫২৫টি খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৫ জন ধর্ষণ, ১৪২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২৩ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেন ৬ জন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রসঙ্গে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন,‘ডিএমপি কমিশনার ধর্ষণ শব্দটি সংবাদমাধ্যমে ব্যবহার না করতে বলেছেন। কারণ, তাঁর কাছে শব্দটি ভালো লাগে না। এতে খুবই অবাক হয়েছি। কারণ, এ ঘটনাটাই ভালো না লাগার। যৌন নিপীড়ন বা যৌন নির্যাতন বললে অন্যান্য নিপীড়নের কথাও চলে আসে। ধর্ষণের ভয়াবহতা এতে হালকা হয়ে যায়। এটা মানতে পারছি না।’

এ প্রসঙ্গে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (প্রভাব, প্রচারাভিযান ও যোগাযোগ) নিশাত সুলতানা বলেন, ধর্ষণের ঘটনাকে ধর্ষণই বলতে হবে। এটাকে নমনীয় করে বলার কোনো সুযোগ নেই।

সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকারবিষয়ক সুশাসন বিভাগ) আবদুল্লা আল মামুন বলেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে যেটা ধর্ষণ, সেটাকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণ জঘন্য একটি অপরাধ। ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগামকে রাজস্ব বাজেটে নিয়ে এর কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে। শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও কল্যাণের জন্য পৃথক শিশু অধিদপ্তর স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পরিচালক (কর্মসূচি ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণের মামলার বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়েছে সরকার। দিনক্ষণ নিয়ে আমাদের বিরোধ নেই। নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক রাখা উচিত। তা না হলে হয়রানিমূলক মামলা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ডিএনএ প্রতিবেদন যেন যথাসময়ে দেওয়া যায়, সে উদ্যোগ বাড়ানো উচিত।’ তিনি বলেন, শিশুরা কোনো অভিযোগ করলে, পরিবারকে তা গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে, শিশুর কথা বিশ্বাস করতে হবে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেশিশুরাও যৌন সহিংসতা, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সমন্বয়ক তামান্না হক (রীতি) সংগঠনের সংকলিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০২৪ সালে ৩৬ জন এবং এ বছরের প্রথম দুই মাসে ৪ জন ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় নৃশংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এর মানে হচ্ছে ধর্ষণ-নির্যাতন প্রতিরোধে যা ব্যবস্থা আছে, তাতে ঘাটতি রয়েছে। অভিযোগের তদন্ত, বিচারপ্রক্রিয়া, সাক্ষী ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা ইত্যাদি যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা মোকাবিলায় নিয়মিত কাজ করতে হবে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, সমাজে ধর্ষণ-নির্যাতনের যত ঘটনা ঘটছে, তত প্রকাশ পাচ্ছে না। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে প্রকাশ করতে চান না। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ভুক্তভোগী নারী ও শিশু পরিবার থেকেই সুরক্ষা পাচ্ছে না। ধর্ষককে ঘৃণা করতে হবে, ভুক্তভোগীকে নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ