একবার খলিফা উমর (রা.) এক নারীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কী হয়েছে?’ নারীটি বললেন, ‘কয়েক মাস ধরে আমার স্বামী আমার কাছ থেকে দূরে আছে। তাঁকে আমার কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠেছে।’

উমর (রা.) তখন তাঁর মেয়ে হাফসা (রা.)–র কাছে গিয়ে বললেন, ‘আমি তোমার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চাই। আমাকে সাহায্য করো। স্বামী কত দিন দূরে থাকলে স্বামীকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মেয়েদের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে?’

হাফসা (রা.

) লজ্জায় মাথা নত করে ফেলেন। উমর (রা.) তখন বললেন, ‘আল্লাহ সত্য প্রকাশের ব্যাপারে লজ্জা করেন না।’

হাফসা (রা.) তখন হাতে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন তিন বা চার মাস।

উমর (রা.) নির্দেশ দিলেন, কোনো সৈনিককে যেন চার মাসের বেশি সময় আটকে রাখা না হয়।

হাফসা (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)–র কন্যা। তাঁর ভাই সাহাবি আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.)। হাফসা (রা.) আবদুল্লাহর চেয়ে ছয় বছরের বড় ছিলেন।

আরও পড়ুনসিজদার যত উপকারিতা১৪ জানুয়ারি ২০২৪

বিয়ের বয়স হলে উমর (রা.) বনু সাহম গোত্রের খুনাইস ইবনে হুজাফার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। খুনাইস (রা.) মক্কায় প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। স্বামীর সঙ্গে হাফসা (রা.) মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় যাওয়ার কিছুদিন পরই খুনাইস (রা.) ইন্তেকাল করেন। হাফসা (রা.) বিধবা হয়ে যান। তাঁর বয়স তখন ২০ বছরেরও কম। উমর (রা.) তাঁর মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবতে লাগলেন। রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। হাফসাকে ৪০০ দিরহাম মোহরানা দেওয়া হয়।

হাফসা (রা.) ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। তাঁর মধ্যে শেখার প্রবল আগ্রহ লক্ষ করে রাসুল (সা.) তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। নারী সাহাবি শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) লিখতে ও পড়তে জানতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর নির্দেশে তিনি হজরত হাফসা (রা.)–কে লেখাপড়া ও রোগ নিরাময়ের উপায় শেখান।

হাফসা (রা.) ৬০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসগুলো তিনি রাসুল (সা.) এবং উমর (রা.)–এর কাছে শুনেছিলেন।

আরও পড়ুনহারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার নাম০৫ এপ্রিল ২০২৪

আয়েশা (রা.) আর হাফসা (রা.)–এর সম্পর্ক ছিল বোনের মতো। তাঁরা একে অপরের সহযোগী ছিলেন। আয়েশা (রা.) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, হাফসার বাবা যেমন প্রতিটি কথা ও কাজে দৃঢ়সংকল্প, হাফসাও তেমন। (আবু দাউদ)

রাসুল (সা.)–এর ইন্তেকালের আগে কোরআন একত্রে সংকলনবদ্ধ হয়নি। কোরআন ছিল সাহাবিদের অন্তরে খোদিত। আবু বকর (রা.)–এর খিলাফতের সময় সাহাবি যায়িদ ইবনে সাবিত (রা.)–কে কোরআন সংকলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংকলিত সেই কোরআন হাফসা (রা.)–র কাছে সংরক্ষিত ছিল। উসমান (রা.) খিলাফতকালে হাফসা (রা.)–র কাছে রক্ষিত কোরআনের কপিকে প্রামাণ্য ধরে আরও কপি তৈরি করা হয়।

হাফসা (রা.) ৪৫ হিজরিতে রোজা রাখা অবস্থায় মদিনায় ইন্তেকাল করেন। জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কেন পড়ব২৪ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

রমজানে তাকওয়ার শিক্ষা

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আগমন পবিত্র রমজান মাসের, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। রহমতের ১০ দিন শেষ; শুরু হয়েছে মাগফেরাতের দিন। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস, ধৈর্যের মাস ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যে মাস থেকে আমরা অনেকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। 

তাকওয়া বা আল্লাহভীতি: আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সব ধরনের অবাধ্যতা ও পাপাচার থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া। আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ব উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’

কোরআনের আলোকে জীবন গঠন: কোরআন নাজিলের মাসে রোজা কোরআনের আলোকে জীবন গঠনের শিক্ষা দেয়। আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘রমজান মাস, ইহাতেই কোরআন নাজিল হয়েছে। যা গোটা মানব জাতির জীবনযাপনের বিধান এবং তা এমন সুস্পষ্ট উপদেশাবলিতে পরিপূর্ণ, যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কাররূপে তুলে ধরে।’

সুন্দর আচরণ: রোজা মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে শেখায়।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত– রাসুল (স.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন রোজা রাখলে তার মুখ থেকে যেন খারাপ কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে বা বিবাদে প্ররোচিত করতে চায়, সে যেন বলে– আমি রোজাদার।’ (বুখারি: ১৮৯৪)
মিথ্যা পরিত্যাগ: মিথ্যা সব পাপের মূল। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত– রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারল না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি-১৯০৩)

সংযম: রমজান মানুষকে অশ্লীল ও অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার মধ্য দিয়ে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়।
হালাল রুজি: রমজান হালাল রুজি অর্জনের শিক্ষা দেয়। কারণ বৈধ উপার্জনে আহার ব্যতীত জান্নাত পাওয়া সম্ভব নয়।
ধৈর্য ধারণ: হাদিসে রমজান মাসকে ধৈর্য ধারণের মাস বলা হয়েছে। আর কোরআনে আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
ইখলাস বা একনিষ্ঠতা: রোজা রাখা হয় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই। সে জন্য ইসলামে ইখলাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব: রমজানে ধনী-গরিব, সাদা-কালো একসঙ্গে তারাবির নামাজ, একই সঙ্গে ইফতার, জাকাত ও ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে এই ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধ তৈরি হয়। 
সহমর্মিতা: রমজান মানুষকে অসহায় ও গরিবদের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার শিক্ষা দেয়।

এগুলো ছাড়াও রমজান থেকে আমরা আরও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। পরনিন্দা পরিহার, পাপমুক্ত জীবনযাপন, দোয়া কবুলের ক্ষেত্র, অহেতুক কাজ বর্জন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত ইত্যাদি। যদি আমরা এগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারি তাহলে আমাদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত– রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশা নিয়ে রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (বুখারি-৩৭, মুসলিম-১৮১৭)।
তাই কোরআন নাজিলের এ মাসে আল্লাহর কাছে কোরআনকে অনুধাবন করে তা থেকে হেদায়েত নিয়ে রমজানের শিক্ষার আলোকে জীবন গঠন করে সব কল্যাণ অর্জন করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির তৌফিক কামনা করি।

কেরামত আলী: প্রভাষক, রোভারপল্লী ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
keramotali2004@gmail.com 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটি জানালার শাশ্বত স্মৃতি
  • রমজানে তাকওয়ার শিক্ষা
  • আল্লাহকে যে পাইতে চায়
  • ঈদের ফিতরা কাকে দেব, কীভাবে দেব