Prothomalo:
2025-03-16@09:57:55 GMT

সিলেটের গোয়ালগাদ্দা শিম 

Published: 16th, March 2025 GMT

ফাগুনের হাওয়া বইছে। তারিখটা ১৭ ফেব্রুয়ারি। হাওয়ার সঙ্গে উড়ছে ধুলো। সেসব ধূলিকণার আবরণে ঢাকা পড়েছে গাছপালার সবুজ পাতা, পথপ্রান্তর। সিলেট শহর থেকে চলেছি গোলাপগঞ্জের দিকে। পথের দুপাশে মাঠের শর্ষেগুলো সব কাটা হয়ে গেছে। বেশির ভাগ মাঠই ফাঁকা—ধূলি, কুয়াশা, ঘোলাটে রোদ, মেঘের ছায়া সব মিলিয়ে শূন্য মাঠগুলো যেন খাঁ খাঁ করছে। এর মধ্যে কিছু মাঠে, পথের কোলে মাচায় চলছে সবুজের ফালি ফালি ছোঁয়া। কোনো কোনো মাঠে সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে। তবে সবুজের বেশির ভাগই শিমখেত। দেখতে দেখতে গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মণাবাদ ইউনিয়নের চৌধুরী বাজারে গিয়ে হাজির হলাম। রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় বসে গাদা করে রাখা শিমগুলোকে বাছাই করছে কয়েকজন লোক, ঝুড়ি বোঝাই করে কেউ কেউ শিম ও শিমের বিচি বেচছে। গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের কাছে এগিয়ে গেলাম। 

পঞ্চাশোর্ধ্ব সিরাজউদ্দিন, তিনি খেতের শিম তুলে নিয়ে এসেছেন বাজারে বিক্রি করতে। বললেন, ‘এ শিমের খুব চাহিদা। বিশেষ করে বিদেশে। বাছাই করে আমরা ভালো ভালো শিমগুলো বিদেশে পাঠিয়ে দিই। আমাদের লন্ডনি ভাইয়েরা এসব শিম খেতে খুব পছন্দ করেন। শিমের নাম গোয়ালগাদ্দা।’ তিনি জানালেন, ১৯৮০ সাল থেকে তিনি এ শিমের চাষ করে আসছেন। তবে তিনি তাঁর বাপ-দাদাদেরও এ শিম চাষ করতে দেখেছেন। তখন খুব অল্প আকারে বাড়ির আশপাশে এ শিমের চাষ হতো। এখন অনেক মাঠেই এ শিমের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে তিনি তিন বিঘা জমিতে এ শিমের চাষ করেছেন। অগ্রহায়ণের প্রথম থেকে শিম তুলছেন, তুলবেন এপ্রিল পর্যন্ত। বৃষ্টি নামলেই বন্ধ হবে শিম তোলা। প্রায় ছয় মাস ধরে ফলন দেয়, এমন আর কোনো শিমের জাত এ দেশে নেই। প্রতি সপ্তাহে তিনি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কেজি শিম তোলেন। নিজেরাই বীজ রাখেন এবং সে বীজ দিয়ে আবার পরের মৌসুমে চাষ করেন। 

গোলাপগঞ্জের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

মাশরেফুল আলম বললেন, সব জাতের শিমের মধ্যে সিলেটের গোয়ালগাদ্দা শিম সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ বছর গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৮৮৯ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিমের চাষ হয়েছে। দিন দিনই এর চাহিদা, বাজার ও চাষ বাড়ছে। কেননা, এ শিম অতীতে বোয়াল মাছের সঙ্গে সিলেটের লোকেরা রেঁধে খেত, স্বাদ হতো চমৎকার। এ শিমের ফলন যেকোনো শিমের চেয়ে বেশি। হেক্টরে এ শিমের ফলন ৩০ থেকে ৩৫ টন, সেখানে অন্য শিমের ফলন ২০ থেকে ২২ টন। বেশি হওয়ার প্রধান কারণ, প্রায় ছয় মাস ধরে এ শিম তোলা যায়। সেখানে অন্য শিম তোলা যায় প্রায় তিন মাস। গোয়ালগাদ্দা শিমে মোজাইক ভাইরাস রোগ হয় না। কিন্তু আর এমন কোনো জাতের শিম নেই, যাতে এ রোগ হয় না। সাধারণত কচি শিম ছোট বিচি অবস্থায় খাওয়া হয়। বিচি বড় হয়ে গেলে সেসব শিম আর সবজি হিসেবে খাওয়া যায় না। তখন বীজ রাখা হয়। পরিপক্ব সেসব বীজ ডাল হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয় এবং চাষের জন্য রেখে দেওয়া হয়।

এ দেশে যেসব সবজি চাষ হয়, তার প্রায় সবই হাইব্রিড জাতের। কিন্তু শিমের কোনো হাইব্রিড জাত নেই। এ দেশে কত জাতের শিম আছে, তার কোনো সঠিক গবেষণা বা সমীক্ষা নেই। নলডক, নলি, হাতিকান, চিটাগং, রূপবান, আউশা, রঙ্গিমা, পুঁটি, খিরনলী, তক্তা, ঘিকাঞ্চন, ছেই, কাইকা, মটর, সিরা, বাইমা, বাইন, নরসিংদী, চটকা, সিন্দুর, কার্তিকা, আশ্বিনা, বৌকানী, সূর্যমুখী ইত্যাদি নানা জাতের দেশি শিম এ দেশে রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও ইপসা ১০টি আধুনিক উচ্চফলা জাতের শিম উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু সিলেটের গোয়ালগাদ্দা শিমটা যেন সব জাতের মধ্যে সেরা। এ জাতের শিম ১২ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, চওড়া হয় ৪-৫ সেন্টিমিটার, চ্যাপটা ও পাতলা, কিছুটা ঢেউখেলানো, সবুজ ত্বক ও কালচে বেগুনি শিরবিশিষ্ট, কচি শিম নরম ও সুস্বাদু, বীজের রং কালো। গাদা করে শিম ধরে বলে মনে হয় তা থেকে নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাদ্দা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘গোয়ালগাদ্দা শিমের স্বাদ ও অধিক ফলনে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই সিলেটের বাইরে নিয়ে এর বীজ দিয়ে চাষের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন রহস্য জানি না, সিলেটের মতো সেখানে এ শিমের স্বাদ হয় না। এ শিমকে তাই সিলেটের জিআই কৃষিপণ্য হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে। দেশের অন্য স্থানে চাষ সম্প্রসারণেও পরীক্ষা করা যায়। যেহেতু বিদেশেও এ শিমের চাহিদা রয়েছে, তাই উত্তম কৃষিচর্চা বা জিএপি প্রটোকল ঠিক করে শতভাগ নিরাপদ সবজি হিসেবে এ জাতের শিম উৎপাদন ও রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল পগঞ জ চ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এআই ব্যবহার করে লোডশেডিং কমাতে চান আইইউবির শিক্ষার্থী হালিমা

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কিত নিবন্ধ