বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো ভয়েস অব আমেরিকার ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি কর্মীকে। শনিবার থেকে তাদেরকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি সংবাদমাধ্যমের তহবিলও বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। খবর রয়টার্সের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার সরকারি তহবিলে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান এবং আরও ছয়টি ফেডারেল সংস্থাকে কর্মী হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিচস বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ৩০০ সাংবাদিক, প্রযোজক ও সহযোগীদের প্রায় সবাইকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০টি ভাষায় পরিচালিত এই সম্প্রচারমাধ্যমকে প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে এক পোস্টে আব্রামোভিচ লেখেন, ‘৮৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার বহু ভাষাভাষীর ভয়েস অব আমেরিকা নীরব হয়ে যাচ্ছে, এ জন্য আমি গভীরভাবে ব্যথিত। বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছিল।’

ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান দ্য ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) তাদের আরও দুই সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি ও রেডিও ফ্রি এশিয়ার বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে রেডিও ফ্রি ইউরোপ সম্প্রচারিত হয়। এ ছাড়া ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেও এটি শোনা যায়। রেডিও ফ্রি এশিয়া চীন ও উত্তর কোরিয়ায় সম্প্রচারিত হয়।

ট্রাম্পের এই নির্দেশে জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতেও ভয়েস অব আমেরিকা নির্ভরযোগ্য সংবাদের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়।

গত শুক্রবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। ওই আদেশে ইউএসএজিএম এবং আরও ছয়টি স্বল্প পরিচিত সংস্থাকে তাদের কার্যক্রমের পরিধি আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, আমলাতন্ত্রকে সংকুচিত করতে এটা করা জরুরি।

নাৎসি প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে ১৯৪২ সালে ভয়েস অব আমেরিকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখনো এক সপ্তাহে ভয়েস অব আমেরিকার গ্রাহক বিশ্বের ৩৬ কোটি মানুষ।

একটি গ্রুপ হিসেবে ইউএসএজিএমের কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। কংগ্রেসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তাদের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৮৮ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।

ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক উপস্থাপক ক্যারি লেককে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি ট্রাম্পের অনুগত হিসেবে পরিচিত।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।

এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী ভুবন চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হলেও তাদের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।

ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ