বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন
Published: 16th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এই রায় দেন।
মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। আজ রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
ওই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে, তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিল করেন কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা। আসামিদের এই ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি হয়।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়। সেদিন থেকে মধ্যে এক দিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ বছর পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন
ঘুড়ি উৎসব, লাঠিখেলা, সাপখেলা, নাগরদোলা, পুতুলনাচ—এমন নানা আয়োজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজানো হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। গ্রামীণ ঐহিত্য আর খুলনার আঞ্চলিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজিত ওই উৎসব হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর। ২০১৯ সালে সর্বশেষ এমন পরিপূর্ণ আয়োজন করতে পেরেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে এবার নিরাপত্তার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে শোভাযাত্রা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ভিন্নধর্মী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসব উদ্যাপন করা হয়ে থাকে। ১৩ এপ্রিল (বাংলা ৩০ চৈত্র) উদ্যাপন করা হয় চৈত্রসংক্রান্তি আর পরের দিনে বাংলা বর্ষবরণ। রকমারি গ্রামীণ খেলাধুলা ও উৎসবের মধ্য দিয়ে দিন দুটি উদ্যাপন করা হয়। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া কোভিড এবং পরে পয়লা বৈশাখের সময় রোজা, ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছর বাংলা বর্ষবরণে বড় কোনো আয়োজন ছিল না। কোনো রকম একটা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হতো। তবে এবার আয়োজনে পরিপূর্ণতা রয়েছে। প্রায় সব ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব শুরু হবে আজ রোববার বিকেল ৪টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হবে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা, ঘুড়ি উৎসব ও আলপনা উৎসব। সন্ধা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুতুলনাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরদিন পয়লা বৈশাখে সকাল সোয়া ৭টায় বর্ষ আবাহন, সকাল ৯টায় খেলার মাঠে মেলার উদ্বোধন, ১০টায় আনন্দ শোভাযাত্রা ও বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া দিনব্যাপী থাকবে লাঠিখেলা, জাদু প্রদর্শনী, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী ওই উৎসবের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আর্থিক সহায়তা করে বিশ্ববিদ্যালয়। শোভাযাত্রার আয়োজন করার দায়িত্ব থাকে চারুকলা স্কুলের (অনুষদ) ওপর। পবিত্র রোজা ও ঈদের ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে ৬ এপ্রিল। ৭ এপ্রিল ইসরায়েলবিরোধী সমাবেশের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎসব আয়োজনের কাজ শুরু করা হয়েছে।
গত শনিবার দুপুরের দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা স্কুল (অনুষদ) চত্বরে হরিণ, মুখোশসহ বিভিন্ন কিছু বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। শেষ মুহূর্তে হাতের ছোঁয়া বুলিয়ে আরও সুন্দর করার চেষ্টা চলছে সবকিছুতে।
সেখানে কাগজের মণ্ডের মুখোশ বানানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন ভাস্কয ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার হোসেন ও তৃতীয় বর্ষের সংগীত পাল। আবরার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর রোজা ও ঈদের ছুটির কারণে বড় কোনো অনুষ্ঠান করা যায়নি। ২০১৯ সালের পর এবারই বর্ষবরণের যে উৎসব, সেটি পরিপূর্ণভাবে উদ্যাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবার অবশ্য ঢাকার সঙ্গে সংগতি রেখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন করে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। কোনো কিছু পরিবর্তন করে যদি ভালোকিছু হয়, তাহলে সেটাই সবাই গ্রহণ করবে। নাম দিয়ে আসলে তেমন কিছু হয় না, উদ্যাপনে উৎসবটা থাকলেই হলো।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে তৈরি করা হচ্ছে শোভাযাত্রার মাসকট সুন্দরবনের ঐতিহ্য হরিণ