বুকে তীব্র ব্যথা হাসপাতালে এ আর রাহমান
Published: 16th, March 2025 GMT
হঠাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী এ আর রাহমানকে। রোববার সকালে তাঁকে চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর। বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন এই সংগীতশিল্পী। কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ মুহূর্তে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাঁর শরীরে এনজিওগ্রাম করার প্রক্রিয়া চলছে। হাসপাতালের বুলেটিনের অপেক্ষায় সবাই। উদ্বিগ্ন রাহমানের অনুরাগীরা। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের
সম্প্রতি লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন এ আর রাহমান। সেখান থেকে ফেরার পরই অসুস্থ বোধ করেন তিনি। শিল্পীর মুখপাত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, লন্ডন থেকে ফেরার পর বুকে ব্যথা অনুভব করায় তিনি হাসপাতালে চেকআপ করাতে পৌঁছান। সেখানে ইসিজি করা হয় তাঁর। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন এ আর রাহমান। অবশ্য আরেকটি সূত্র দাবি করেছে, ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা নিয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছিলেন রাহমান। তারপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালে যান তিনি।
মুখপাত্র এ–ও জানিয়েছেন, রমজান মাস উপলক্ষে রোজা রাখছেন শিল্পী।
এ আর রাহমানের অসুস্থতার খবর পেতেই খোঁজ নেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘যখনই আমি খবর পেলাম যে আমাদের সংগীত কিংবদন্তি এ আর রাহমান অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তখনই আমি চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিই। তাঁরা বলেছেন যে তিনি বর্তমানে ভালো আছেন এবং শিগগিরই বাড়ি ফিরে আসবেন।’
সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এ আর রাহমানের সাবেক স্ত্রীকেও। একটি অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। গত বছর আচমকাই বিবাহবিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেছিলেন রাহমান ও তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু। টানা ২৯ বছরের দাম্পত্যে ইতি টানেন তাঁরা। এ ঘোষণায় বিমর্ষ হয়েছিলেন অনুরাগীরা। দম্পতির আইনজীবীও জানিয়েছিলেন, তাঁরা বুকে পাথর রেখেই বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিচ্ছেদের পর মন ভার করা পোস্ট করেছিলেন সুরকারও। দীর্ঘ দাম্পত্য ভেঙে যাওয়ার পরও দুজনেই তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি ও স্থিতি খুঁজে নিতে চেষ্টা করছেন। তবে এই বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা থামেনি, বরং তা আজও অনুরাগীদের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে রাখে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই
নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।
নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।
কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।
গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।
হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।
হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।
হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’
‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’
রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।
এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন