জাতীয় দলের প্রধান কোচিং স্টাফ দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বিসিবি। প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে থাকছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তাদের কোচিং পুলের অন্যতম সদস্য স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে বিসিবি। পাকিস্তানের সাবেক এ লেগস্পিনার চান বাংলাদেশের সিস্টেমে অবদান রাখতে। জাতীয় দলের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে সেশন করতে চান। মুশতাক আহমেদের কাজের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ফোনে শুনেছেন সেকান্দার আলী

সমকাল: বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করে কেমন লেগেছে?
মুশতাক:
এককথায় অসাধারণ। বাংলাদেশ কাজের জন্য দারুণ একটি জায়গা। একদল ভালো মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। খেলোয়াড়রা খুবই আন্তরিক। কোচকে একেবারে আপন করে নেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে আমি যখন চুক্তিবদ্ধ হই, তখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের দেখেছিলাম। তাদের খুবই প্রতিভাবান মনে হয়েছিল। বাংলাদেশ যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। আমি চিন্তা করেছি, বিসিবির সিস্টেমে অবদান রাখতে পারব। 

সমকাল: ভালোমানের স্পিনার তুলে আনতে বিসিবিকে কোনো পরিকল্পনা দিয়েছেন?
মুশতাক:
আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে। প্রান্তিক পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের তুলে এনে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলা। জাতীয় দলে ঢোকার পর শেখার সুযোগ থাকে না। একজন ক্রিকেটার শেখার পর্ব শেষ করে জাতীয় দলে ঢোকার আগে। জাতীয় দল ভালো ফল করার জায়গা। কীভাবে পারফর্ম করবে, কীভাবে ম্যাচ জিতবে এগুলো নিয়ে কাজ হয়। ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক হয় অনূর্ধ্ব-১৯ ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। রিশাদ, মিরাজ, নাসুম যখন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলে, আমি তাদের বলি– আমরা দেখতে চাই তোমরা বাংলাদেশ দলকে জেতাচ্ছ। অনূর্ধ্ব-১৯‍ দলের ক্যাম্পে আমি ছিলাম। তাদের সঙ্গে অ্যাকশন নিয়ে কাজ করেছি। বেসিক শক্তিশালী করার পরিকল্পনা দিয়েছি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কাঠামো শক্তিশালী করতে বলেছি। লাল বলের ক্রিকেটে স্পিনাররা যদি ভালো করে, বাকি দুই সংস্করণে অটো ভালো করবে। কারণ টি২০ ও ওয়ানডে খেলা অনেক সহজ। স্পিন কোচ ও বিসিবির একজন স্টেকহোল্ডার হিসেবে বলতে চাই– ক্রিকেটারদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেসিকের ওপর ফোকাস করতে হবে। বেসিক শক্তিশালী করার পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে উন্নতি হবেই। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কিছু আন্তর্জাতিক এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রাম করার উদ্যোগ নেওয়া হলে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা কেটে যাবে। কথা বলার সক্ষমতা বাড়বে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসবে।

সমকাল: বয়সভিত্তিক লেগস্পিনারদের নিয়ে শাহেদ মাহমুদ কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে আপনার কথা হয়?
মুশতাক:
শাহেদ খুবই ভালো একজন কোচ। কাজের ক্ষেত্রে একাগ্র ও নিবেদিত। আমি যখন ঢাকায় থাকি, প্রতি সকালে সে মেসেজ পাঠায় উদীয়মান ক্রিকেটারদের সম্পর্কে বার্তা দিয়ে। ২০ জনের মতো উদীয়মান লেগস্পিনার নিয়ে কাজ করছে সে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, শাহেদ মাহমুদ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে উদীয়মান স্পিনারদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে, প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেয়। আমি কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে জানাই।

সমকাল: জাতীয় দলে একজন মাত্র লেগি। পাইপলাইনেও তেমন কেউ নেই। ভবিষ্যতে শূন্যতা দেখা দেবে না তো?
মুশতাক:
আমি তিন-চারজন লেগস্পিনার দেখেছি। হ্যাঁ, তারা হয়তো এখনই আন্তর্জাতিক মানের না। এ কারণেই শাহেদ ও আমি তরুণদের উন্নতিতে ফোকাস করছি। আমাদের একটিই পরিকল্পনা, বেসিক শক্তিশালী করে দেওয়া। বেসিক শক্তিশালী হয়ে গেলে, তাদের বলতে হবে কীভাবে পাঁচ উইকেট পেতে হয়। ভালো ওভার কীভাবে করতে হয়। কীভাবে একটি ভালো ওভার পার্থক্য গড়ে দেয়। ব্যাটাকে কীভাবে রিড করতে হয়। পিচ পড়ার কৌশল। তারা শুরুতে এগুলো শিখতে পারলে জাতীয় দলে ঢোকার পর জেনে যাবে কীভাবে ম্যাচ জেতাতে হয়।

সমকাল: কিশোর, তরুণদের সঙ্গে ক্যাম্প করার কোনো পরিকল্পনা আছে?
মুশতাক:
শাহেদকে সঙ্গে নিয়ে উদীয়মান স্পিনারদের কয়েকটি সেশন করতে চাই। আশা করি, শাহেদ সেটা ফলো করবে।

সমকাল: আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ফেল করার কারণ কী? আপনার চোখে কী ধরা পড়েছে?
মুশতাক:
বিশ্বাসের ঘাটতি। যে কোনো কাজে সফল হওয়ার পূর্ব শর্তই হলো বিশ্বাস রাখা। আমরা যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছি, তার কারণ হলো সবার ভেতরে বিশ্বাস ছিল জিততে পারব। ভালো কোচিং স্টাফ সেই বিশ্বাস গড়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। প্রথমে নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে। সেটা দলের ভেতরে ছড়িয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশ দলে সেই বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিভার অভাব নেই। আমার মনে হয়, আইসিসির টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করার যে সক্ষমতা আছে, সেই বিশ্বাস খেলোয়াড়দের মধ্যে গড়ে ওঠেনি। আমরা সেই বিশ্বাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, তোমরা যে কোনো টুর্নামেন্টে যে কোনো দলকে হারাতে পার। একবার তারা সেই কাজ করে ফেলতে পারলে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বাসটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে।

সমকাল: আপনার কোচিং দর্শন কী?
মুশতাক:
‘ম্যানেজ’। স্কিলের সঙ্গে মোটিভেশনের মিশ্রণ ঘটানো। স্কিল ছাড়া খেলাই হবে না। অতএব স্কিলড ক্রিকেটার লাগবে। স্লোয়ার, পেস, টার্ন করা শিখতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেটা হয়, ম্যান ম্যানেজ স্কিলটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণ দেওয়া, খেলোয়াড়দের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ম্যাচ জেতার কৌশল বলে দিতে হয়। মোটিভেশন ও স্কিলের ভারসাম্য রাখতে হয়। 

সমকাল: খেলোয়াড়রা আপনার কথা শোনেন?
মুশতাক:
আমি গর্বের সঙ্গে বলছি, সবাই খুবই আন্তরিক। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে খুবই ভালো সাড়া পাই। তবে উন্নতির অনেক জায়গা আছে, বিশেষ করে ‘কমিউনিকেশন’। যোগাযোগ হলো চাবিকাঠি। আমার কোচিং দর্শন হলো ছেলেদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব থাকবে না। খেলোয়াড় ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে কথা বললেও সেটা শুনতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই, যোগাযোগের জায়গায় উন্নতি করতে হবে।

সমকাল: ভাষাগত দূরত্ব আছে?
মুশতাক:
এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কথা না বুঝলে যোগাযোগ মজবুত হয় না। আমি উর্দু, হিন্দিতে ৭০ ভাগ কথা বলি, বোঝানোর চেষ্টা করি। কারণ হিন্দিটা সবাই বোঝে। যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। 

সমকাল: আপনি কি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকছেন?
মুশতাক:
বাংলাদেশ আমার হৃদয়ে। মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং আরও অনেক ভালোমানের লোকাল কোচ আছেন। একসঙ্গে থাকলে আমরা অনেক ভালো কাজ করতে পারব। আমার ম্যানেজারের সঙ্গে বিসিবির কথা হচ্ছে। ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত হলে ভালোই হবে। লম্বা সময় নিয়ে শক্তিশালী একটি গ্রুপ তৈরি করা যাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় দল ল দ শ দল ক জ কর ম শত ক আপন র প রথম সমক ল ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভিউ বাণিজ্যে ক্ষতি হয় ক্রিকেটারদের’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত কনটেন্ট ও নেতিবাচক উপস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের ব্যাটার লিটন কুমার দাস। সম্প্রতি সমকালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মাঠে ব্যাটিংটা সুন্দর বলেই সবাই ধরে নেয় আমি নামলেই রান করব। কিন্তু আমি তো মানুষ, সব সময় তো রান করা সম্ভব না।’

২০১৯ সালে লিটনের ব্যাটিং দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলেন ইয়ান বিশপ। সেবার বিশ্বকাপে এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ধারাভাষ্য দেয়ার সময় লিটনের প্রতিটি শটকে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার মতে ইতালিয়ান চিত্রকর দ্য ভিঞ্চি তুলির আঁচড়ে মোনালিসার যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন লিটনের ব্যাট যেন ঠিক তার তুলির মতোই।

এমন ছবির মত ব্যাটিংয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই আপত্তি তুললেন লিটন। জানালেন, এমন প্রশংসা আমার জন্য নেতিবাচক। আমার ব্যাটিং সুন্দর দেখে প্রতিদিন রান করতে হবে, এই জিনিসটি সবার ভেতরে গেঁথে গেছে। সবাই ভাবে আমি মাঠে গেলেই রান করব। কেউ রান করুক বা নাই করুক, আমাকে রান করতে হবে। কিন্তু আমি তো মানুষ, ফেল হতেই পারি। একজন বোলারের একটি ভালো বলে আউট হতেই পারি। একটি ভালো ক্যাচ নিতে পারে বা আমি একটি বাজে শট খেলতে পারি; কারণ আমি মানুষ।

লিটন ক্ষোভ ঝেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিউ বাণিজ্য নিয়েও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার খারাপ মুহূর্তগুলো বারবার তুলে ধরা হয় উল্লেখ করে লিটন বলেন, যারা নিউজ পোর্টাল চালায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলস বানায়, তাদের উপস্থাপনায় থাকে আমি কেন রান করছি না। আমাকে নিয়ে দিনের পর দিন তারা কনটেন্ট বানিয়েই যাচ্ছে। এটি শুধু চাপই নয়, বরং মানসিকভাবে ‘হ্যাম্পার’ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা রিল বানায়, ইউটিউবে কনটেন্ট দেয়, তারা নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করে—কিন্তু সেটি নৈতিক জায়গা থেকে না। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্যও ভুল বার্তা যাচ্ছে। একজন খেলোয়াড়ের খারাপ দিন থাকতেই পারে। কিন্তু একাধিকবার সেই খারাপ মুহূর্ত প্রচার করায় দর্শক বিভ্রান্ত হয়। এই কনটেন্ট কিছু মানুষের জন্য ভালো—ভিউ বাড়ে, লাভ হয়। কিন্তু আমাদের জন্য তা হতাশাজনক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়াতে গিয়ে হামলার শিকার দম্পতি, স্বামী আহত
  • রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যা
  • ইংল্যান্ডে দায়িত্ব ছাড়লেন একজন, অপেক্ষায় ৫ জন
  • বাউফলে তরমুজের ট্রলারে ডাকাতির সময় পিটুনিতে একজন নিহত, আহত ৩
  • প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির বক্তব্য, সমালোচনা
  • তেঁতুলিয়া নদীতে ট্রলারে ডাকাতি, গণপিটুনিতে নিহত ১
  • মালিকের ‘কিছু ফুটবলার অতিরিক্ত বেতন পায়’ মন্তব্যের জবাব দিলেন ব্রুনো
  • ভিউ বাণিজ্যে ক্ষতি হয় ক্রিকেটারদের
  • ‘ভিউ বাণিজ্যে ক্ষতি হয় ক্রিকেটারদের’