Risingbd:
2025-03-16@11:27:03 GMT

জিকির ও দোয়ার মাস রমজান

Published: 16th, March 2025 GMT

জিকির ও দোয়ার মাস রমজান

ইবাদতের বসন্তকাল রমজান। রমজান মাসে মুমিন অধিক পরিমাণে ইবাদত করতে সচষ্টে হয়। জিকির বা আল্লাহর স্মরণ ও দোয়া ইবাদতের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১৪)

সুতরাং রমজান মাসের প্রতিটি ইবাদত যেন আল্লাহর স্মরণশূন্য না হয়। ইবাদতে আল্লাহর স্মরণ থাকার উদ্দেশ্য হলো ইবাদত কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। তাতে পার্থিব কোনো মোহ ও উদ্দেশ্য না থাকা। কোনো ইবাদত যখন আল্লাহর স্মরণ, ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির জন্য হয়, তখন সে ইবাদতকে বলা হয় ইখলাস বা নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত। বান্দার কাছে মহান আল্লাহর চাওয়া হলো তার নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামাজ কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)

ইবাদতে আল্লাহর স্মরণ ও নিষ্ঠা আকস্মিকভাবে বান্দার ভেতর জন্ম নেয় না, বরং দীর্ঘ সাধনা ও চষ্টোর পরই কেবল তা তৈরি হয়। আর এ জন্যই পবিত্র কোরআনে বারবার জিকিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সকাল-বিকাল নিয়মতান্ত্রিকভাবে জিকিরের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হে মুমিন! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২)

আরো পড়ুন:

রমজান মাসে মুমিনের ব্যবসা-বাণিজ্য

রমজানে মুমিন নারীর করণীয় 

অন্য আয়াতে আল্লাহ যেসব বান্দার প্রশংসা করেছেন যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে ও বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের অগ্নিশাসিত থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)

বান্দার জন্য জিকিরের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর স্মরণ লাভ করা। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হইও না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.

) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘বান্দা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহ তাঁর দয়া ও ক্ষমার মাধ্যমে বান্দাকে স্মরণ করে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আল্লাহর জিকিরের আরেকটি পুরস্কার হলো ইহসান লাভ হওয়া। ইহসান হলো আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তর। মহানবী (সা.) ইহসান সম্পর্কে বলেন, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) দেখছ, আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তবে (স্মরণ রাখবে) তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০)

রমজান মাসে জিকিরের মতো দোয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কোরআনের একাধিক আয়াতে দোয়ার প্রতি বান্দাদের উৎসাহিত করে হয়েছে। ‘তোমাদের প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৬০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর ঈমান আনুক। যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

রমজান মাসে দোয়া কবুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সময় সাহরির সময়। এ সময় আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশষ্টি থাকতে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব, কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)

রমজান মাসে মুমিন সকল মাসনুন দোয়াগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পাঠ করবে। বিশেষত ইফতার ও সাহরির সময় যে দোয়াগুলো পাঠ করার কথা এসেছে। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারের সময় দোয়া করতেন, আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু, অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই রোজা রেখেছিলাম এবং আপনার রিজিক দ্বারাই ইফতার করলাম।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮) 

হাদিসে এসেছে, রমজান মাস আগমন করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে এই দোয়া করতে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এই মাসে আমাকে (গুনাহ থেকে) রক্ষা  করেন, আমাকে রমজানের জন্য নিরাপদ করুন (অর্থাৎ ইবাদতের তাওফিক দিন), এই মাসে করা ইবাদতগুলো কবুল করে নিন।’ (তাবারানি, হাদিস : ৯১২)

আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি কদরের রাত পাই তাহলে কি দোয়া করব? তখন তিনি তাঁকে এই দোয়া শিখিয়ে দেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউয়ুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি’। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৭৭১২)

যারা মাহে রমজানেও আল্লাহর জিকির ও দোয়া থেকে বিমুখ তারা মৃত ব্যক্তির মতো। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪০৭)

পবিত্র কোরআনে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত। আর তাকে কিয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ করে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১২৪)

আল্লাহ সবাইকে দোয়া ও জিকিরের সঙ্গে রমজান অতিবাহিত করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা

শাহেদ//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন ম স র স মরণ বল ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতারণা এড়াতে অ্যাপ বা কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার পরামর্শ রেলওয়ের

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনে যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণা এড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত অ্যাপ ব্যবহার করে অথবা সরাসরি কাউন্টার থেকে যাত্রীদের টিকিট কেনার পরামর্শ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রবিবার (১৬ মার্চ) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবার ট্রেনের টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। ফলে টিকিট থাকা সাপেক্ষে কাউন্টারে গিয়েও টিকিট নেওয়া যাবে।

আরো পড়ুন:

গাইবান্ধায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত নারীর পরিচয় মিলেছে 

শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহার
সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ট্রেন চলাচল শুরু

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৪ মার্চ থেকে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টিকিট কালোবাজারি করতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষ বিভিন্ন আইডি থেকে কেনা টিকিট বেআইনিভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করতে পারে। এতে যাত্রী সাধারণের হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত অ্যাপ (রেল সেবা) ব্যবহার করে কিংবা সরাসরি কাউন্টার থেকে টিকিট ক্রয়ের পরামর্শ দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

আরো বলা হয়েছে, ঈদযাত্রায় (২৪-৩০ মার্চ) একটি আইডি থেকে সর্বোচ্চ একবার চারটি টিকিট কেনা যাবে। এক্ষেত্রে আইডিধারী ব্যক্তির সহযাত্রীদের নামও ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অনুরূপভাবে ফেরত যাত্রার ক্ষেত্রেও (৩-৯ এপ্রিল) একটি আইডি থেকে সর্বোচ্চ একবার চারটি টিকিট কেনা যাবে। ঈদযাত্রার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত অ্যাপ (রেল সেবা) এবং নির্ধারিত কাউন্টার ছাড়া অন্য কোথাও ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না। কোনো যাত্রী বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত অ্যাপ (রেল সেবা) এবং নির্ধারিত কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা স্থান থেকে টিকিট কিনলে তিনি নিশ্চিতভাবে প্রতারিত হবেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী যে ব্যক্তির আইডি ব্যবহার করে টিকিট কেনা হবে, ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন ও আইডিধারী ব্যক্তির ফটো সম্বলিত আইডি কার্ডসহ তাকে ভ্রমণ করতে হবে। আইডিধারী ব্যক্তি ও টিকিটে উল্লিখিত সহযাত্রী ছাড়া অন্য কেউ ভ্রমণ করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি নিজের আইডি ছাড়া অন্য কারো আইডি ব্যবহার করে কেনা টিকিটে ভ্রমণ করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোনো প্রতারকচক্র বা কালোবাজারি এমন অন্যের নামে বা অন্য কারো আইডি ব্যবহার করে কেনা টিকিট কারো নিকট বিক্রির চেষ্টা করলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার জন্য অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে যাত্রীদের বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও জিআরপির সহায়তা গ্রহণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের হটলাইন ১৩১ নম্বরে ডায়াল করে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সব ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ