যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে দেশের ২৩ জেলার ৭৪ উপজেলাকে ‘দুর্গম এলাকা’  ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব এলাকায় দায়িত্ব পালনকারীদের ভাতা নির্ধারিত হারের চেয়ে দেড়গুণ বেশি হবে বলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়োজিত লোকবলের ভাতা নির্ধারণের জন্য দুর্গম এলাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর ওই সিদ্ধান্ত এসেছে। এতে ২৩ জেলার ৭৪ উপজেলাকে ‘দুর্গম এলাকা’ বিবেচনা করে উপজেলাসমূহে তথ্য সংগ্রহকারী ও অন্যান্যদের জন্য ভাতা এবং অন্যান্য খাতে অর্থ বরাদ্দ নির্ধারিত হারের চেয়ে দেড়গুণ করা হয়েছে।

দুর্গম এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা; বরগুনার বেতাগী, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা; বাগেরহাটের রামপাল, মোড়লগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা; খুলনার বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলা; নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা; কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা; হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমেরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলা; সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, শাল্লা, জামালগঞ্জ, দিরাই, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা; কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা; বরিশালের হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা; সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা; নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও খালিয়াজুরী উপজেলা; পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও দশমিনা উপজেলা; সাতক্ষীরার আশাশুনী ও শ্যামনগর উপজেলা; পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা; কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা; কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা; মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা; মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা; খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, গুইমারা, লক্ষীছড়ি; খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালা উপজেলা; বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানছি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রুমা ও লামা উপজেলা; রাঙামাটি পার্বত্য জেলার নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি সদর, রাজস্থলী, লংগদু, কাউখালী, কাপ্তাই, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা।

ইসি কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, পার্বত্য অঞ্চল, হাওর অঞ্চল, দ্বীপ অঞ্চল ও সমতল ভূমিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও দুর্গমতার ব্যাপকতা বিবেচনায় ভবিষ্যতে দুর্গম এলাকার তালিকা শ্রেণিভিত্তিক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 

ঢাকা/হাসান//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সোমবার মধ্যরাত থেকে সাগরে শুরু হচ্ছে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা

বঙ্গোপসাগরে আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, বলবৎ থাকবে ১১ জুন পর্যন্ত। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় এ নিষেধাজ্ঞা আগে শুরু হতো ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় এবার সাত দিন কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তা ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়েছে।

দেশের মৎস্যগবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাসের দাবি করে আসছিলেন। সেই সঙ্গে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তার ওপর কারিগরি গবেষণার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করে ১৬ মার্চ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে মৎস্যগবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুনসমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ, খুশি জেলেরা১৮ মার্চ ২০২৫

ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জলসীমায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাস করার বিষয়টিকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের সাবেক গবেষক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘এটা দেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্য সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন দাবি করে আসছিলাম। কারণ, আগে সরকার যে উদ্দেশে এই নিষেধাজ্ঞা দিত, তা দুই দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতিবেশী দেশকে লাভবান করত। এটা আমাদের মৎস্যসম্পদের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রতিবছর বাংলাদেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায় তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন, ৬১ দিন।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, এত দিন বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা দেদার বাংলাদেশের জলসীমায় সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ উপকূলে প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যেতেন। এতে দেশের লাখ লাখ জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। এবার নিষেধাজ্ঞা একই সময়ে হওয়ায় এমনটা হবে না।

মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিষহ অবস্থার মুখোমুখি হন।

দক্ষিণের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হতো তাঁদের। কিন্তু এখন তা আট দিন কমে যাওয়ায় ১৩৯ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলে ট্রলারের মাঝি জাফর হোসেন বলেন, ‘সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। এখন আমরা এই নিষেধাজ্ঞার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।’

নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সাগর থেকে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে মাছ ধরা ট্রলারগুলো। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মালিক সমিতির আওতায় ৪০০ ট্রলার রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩০০-এর মতো ট্রলার ফিরেছে। বাকিগুলো ফিরবে। সেই সঙ্গে বরগুনা সদরের নলী, তালতলীর ফকিরহাট, নিদ্রা, পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুরেও অনেক ট্রলার ফিরে আসছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ