হেলিকপ্টারে ঈদের বুকিং শুরু, ভাড়া কত
Published: 16th, March 2025 GMT
কয়েক বছর ধরে ঈদে বাড়ি যেতে হেলিকপ্টারের চাহিদা বেড়েছে। ঈদের সময় যাতায়াতের ধকল এড়াতে ও সময় বাঁচাতে অনেক ধনী পরিবার এখন হেলিকপ্টারযোগে যাতায়াত করে থাকে। ধনাঢ্য প্রবাসীরাও দেশে ফিরে হেলিকপ্টারে চড়ে বাড়ি যান। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতা নিজ নিজ এলাকায় যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন।
হেলিকপ্টারে চড়ে ঈদে বাড়ি যাওয়াদের সংখ্যা হাতে গোনা হলেও এ নিয়ে সবার মধ্যে বেশ আগ্রহ আছে। তাই হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ঈদের সময় বাড়তি ব্যবসার দিকে নজর দেয়। এবারও ঈদ সামনে রেখে হেলিকপ্টারের বুকিং নিতে শুরু করেছে কয়েকটি কোম্পানি।
দেশের হেলিকপ্টার পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, অন্য সময়ের মতো এবারের ঈদে দেশের সব জেলাতেই বর্তমানে হেলিকপ্টার সেবা দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের অন্য যেকোনো প্রান্তে যাত্রী পৌঁছাতে পারে তারা। আসনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি ঘণ্টার জন্য সর্বনিম্ন ৮৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সোয়া দুই লাখ টাকায় হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া যায়।
গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় অনেকেই হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন। এ বছরও বাড়তি চাহিদা থাকবে বলে প্রত্যাশা তাদের। তবে গত বছরের তুলনায় এবার হেলিকপ্টারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে; বিপরীতে বেড়েছে ভাড়া।
ঈদের বুকিং
হেলিকপ্টার ব্যবসায় সম্পৃক্তদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১৫ রোজার পর থেকে হেলিকপ্টারের বুকিং শুরু হয়। তবে বুকিংয়ের চাপ বাড়ে শেষ ১০ দিনে। ঈদের সময় বাড়িতে যেতে যেমন চাহিদা থাকে; আবার বাড়ি থেকে ফেরার জন্যও বুকিংয়ের বেশ চাহিদা থাকে।
মেঘনা এভিয়েশনের ব্যবস্থাপক মীর মোহাম্মদ ইফতেখারুল সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঈদের যাতায়াতের জন্য বুকিং তুলনামূলক কম। ১৫-১৬ রোজার পর থেকে বুকিং বাড়বে বলে আশা করছি। এবার ঈদের দিন ছাড়া অন্য যেকোনো দিন আমাদের সেবা চালু থাকবে।’
দেশে ২০১৩ সাল থেকে হেলিকপ্টার পরিষেবা দিচ্ছে মেঘনা এভিয়েশন। এবারের ঈদে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ছয়টি হেলিকপ্টার দিয়ে সেবা দেবে। কোম্পানিটি প্রতি মাসে ৭০-৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
ইমপ্রেস এভিয়েশনের হেড অব গ্রাউন্ড অপারেশন মো.
ভাড়া কত
সাধারণত হেলিকপ্টারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় সিট বা আসনসংখ্যার পাশাপাশি প্রতি ঘণ্টার ভিত্তিতে। চার সিটের হেলিকপ্টারের ভাড়া এক ঘণ্টার জন্য ৮৫ হাজার টাকা। ছয় সিটের ভাড়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আবার সাত সিটের ডাবল ইঞ্জিনের ভাড়া সর্বোচ্চ সোয়া দুই লাখ টাকা। যাত্রীরা সব মিলিয়ে ৪০-৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল সঙ্গে নিতে পারেন। তবে ব্যাগ বা লাগেজের আকার ছোট হতে হয়।
কোম্পানিভেদে ভাড়ায় পার্থক্য রয়েছে। যেমন মেঘনা এভিয়েশনের চার সিটের সিঙ্গেল বা একক ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের প্রতি ঘণ্টার ভাড়া ৮৫ হাজার টাকা। আর ভূমিতে অপেক্ষমাণ ভাড়া ঘণ্টায় ৫ হাজার টাকা। মেঘনার ছয় সিটের বেল ৪০৭ হেলিকপ্টারের ভাড়া ঘণ্টায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ভূমিতে অপেক্ষমাণ ভাড়া ঘণ্টায় ৭ হাজার টাকা।
স্কয়ার এয়ারের সাতজন যাত্রী বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কোম্পানিটির চারজন যাত্রী বহনে সক্ষম ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া হেলিকপ্টারের প্রতি ঘণ্টায় ভূমিতে অপেক্ষমাণ মাশুল ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া কয়েকটি কোম্পানির রয়েছে জয়রাইড বা আকাশে আনন্দযাত্রা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আকাশে ঘুরিয়ে আনা হয় এ অফারে। ঈদসহ নানা উৎসব পার্বণে এই জয়রাইড অফারের গ্রাহক বেড়ে যায়। যেমন ঢাকা থেকে গাজীপুর ও সোনারগাঁর মেঘনায় এ ধরনের দুটি অফার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভাড়ার হিসাব অনেকটা একই। ন্যূনতম এক ঘণ্টা জয়রাইডের ভাড়া দিতে হবে।
অনেক সময় হেলিকপ্টার কোম্পানি ১৫-২০ মিনিটের জয়রাইড অফার দেয়। এ ধরনের অফারের প্রচারণা সাধারণত ঈদের ছুটির আগমুহূর্ত থেকে চালানো হয়। এবারও কয়েকটি হেলিকপ্টার কোম্পানি এমন পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।
গতবারের চেয়ে ভাড়া কিছু বেশি
গত বছরের চেয়ে এ বছর ভাড়া কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এ ভাড়া ১০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, হেলিকপ্টার ব্যবসা অতটা লাভজনক না। হ্যাঙ্গার (পার্কিং করার স্থান) ভাড়া অনেক বেশি। এ ছাড়া যাত্রীভাড়ার ৪৫ শতাংশই দিতে হয়ে শুল্ক-কর হিসেবে।
যারা সেবা দিচ্ছে
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) তথ্য অনুসারে, দেশে ১৩টির মতো বেসরকারি কোম্পানি হেলিকপ্টার বাণিজ্যিকভাবে সেবা দিচ্ছে। তাদের ৩০টির মতো হেলিকপ্টার আছে। এসব কোম্পানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইমপ্রেস এভিয়েশন, স্কয়ার এয়ার লিমিটেড, মেঘনা এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারলাইনস, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস, বিআরবি এয়ার, বেক্সিমকো এয়ার, বিসিএল এভিয়েশন, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস প্রভৃতি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কয়েকটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে।
দেশে এক ইঞ্জিন ও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট—এই দুই ধরনের হেলিকপ্টার রয়েছে। এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হেলিকপ্টারে সাধারণত চার বা ছয়টি আসন থাকে। আর দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারে সাতজন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা যায়। যাত্রীর আসনসংখ্যার ওপরে ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিছু কিছু কোম্পানি কিছু পরিষেবার আলাদাভাবে টাকা নেয়।
বুকিং দিতে যা লাগে
হেলিকপ্টারে ভ্রমণের অন্তত দুই দিন আগে যাত্রীদের বুকিং দিতে হয়। অবশ্য ঈদের সময় আরও আগে থেকেই বুকিং দেন যাত্রীরা। বুকিংয়ের সময় যাত্রীর প্রাথমিক তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের তথ্য প্রয়োজন হয়। যাত্রীর এসব তথ্য দিয়ে আবার বেবিচকের কাছ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি নিতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন যেমন, মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার নোটিশে হেলিকপ্টার সার্ভিস নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় হেলিকপ্টার ওঠানামা পরিচালিত হয় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। তবে ঢাকা শহরের বাইরের যেকোনো সুবিধাজনক জায়গা থেকে হেলিকপ্টারে উড্ডয়ন-অবতরণ করা যায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২৫ হ জ র ট ক ঈদ র সময় স ধ রণত গত বছর পর চ ল র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষুধার ওপর কর, চাপ বাড়ছে গরিবের জীবনে
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে চরম সংকটে পড়েছেন দেশের রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নাগরিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন এক বেলা খাবার বাদ দিচ্ছেন, বোতলজাত পানি কিনতে পারছেন না, রুটি-বিস্কুটেই পেট চালিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর রয়েছে ৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। এই করনীতি গরিবের জীবনে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে তরুণদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ‘ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক’।
দেশের ১,০২২ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কেবল অর্থাভাবে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, এবং এর নিচেও আয়ের সংখ্যা কম নয়।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা বাদ দেন। দুপুর বা বিকেলের খাবারও বাদ দিতে হয় অনেক সময়। কারণ খাবার কেনার সামর্থ্য অনেক সময় তাদের থাকে না।
ভাতের বিকল্প সস্তা ও পেট ভরানো খাবারের মধ্যে বিস্কুট, কলা, পরোটা, ডিম এগিয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিস্কুট। ৫২৩ জন উত্তরদাতা এটিকে তাদের প্রিয় ও সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিস্কুটের ওপরও রয়েছে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাট কার্যত গরিবের খাবার থেকে কর আদায় করার শামিল। খাদ্যপণ্য হিসেবে যেসব আইটেম গরিব মানুষের নিত্যদিনের রসদ, তাদের ওপর ভ্যাট বসিয়ে বাজেট ভারসাম্য আনা সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থি।
জরিপে ৯০৪ জন বলেছেন, তারা বোতলজাত পানি কিনতেই পারেন না। বোতলজাত পানিকে তারা বিলাসদ্রব্য বিবেচনা করেন।
জরিপ বলছে, ৮৯৭ জন মনে করেন আগের বাজেট তাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়নি। ৭০১ জন সরাসরি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিবেচনায় এখানে ভ্যাটের হার অনেক বেশি। এই শ্রেণির মানুষের জন্য একটি টাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতিতে সামান্যতম পরিবর্তনই দরিদ্র এই শ্রেণির জন্য একবেলার খাবার পাওয়া না পাওয়ার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
তবে হতাশার মাঝেও এবার নতুন সরকারের কাছে আশাবাদী হয়েছেন অনেকে। জরিপে ৭১২ জন অংশগ্রহণকারী বলেছেন—তারা আশা করছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার এবারের বাজেটে তাদের কথা শুনবে। তাদের দাবি, ‘সহানুভূতির দরকার নেই, দরকার ন্যায্যতার।’
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০৫ জন বলেছেন—নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কর কমানো উচিত। ১৯৫ জন বলছেন, ভর্তুকি ও সহায়তা বাড়ানো দরকার। ১৯৩ জন চান—ধনীদের ওপর কর বাড়ানো হোক।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, পণ্যের দাম কমানো, জনবান্ধব বাজেট, ভ্যাট হ্রাস এবং বাজারদর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই যেন বাজেটের মূল লক্ষ্য হয়। তবে অনেকেই কোনো প্রত্যাশা করেননি সংশয় বা নিরাশার কারণে।
চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওই তালিকায় বেকারিপণ্য, বিস্কুট ও কেকও ছিল। এসব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়। গত রমজানে নিত্যপণ্য বিবেচনায় নিয়ে এক মাসের জন্য কর ছাড় দেওয়া হলেও, এসব পণ্যে ৭.৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রমজানে যখন এই খাদ্যপণ্যগুলোকে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়, তখন বছরের বাকি সময়ে তা আবার কীভাবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ পণ্য হয়ে পড়ে?
গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট দরিদ্রদের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের সাশ্রয়ী খাবার পাওয়ার সুযোগ আরও সীমিত করে তুলছে। সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল করা অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে এবং মৌলিক পুষ্টি নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে বিলাসপণ্যের ওপর কর বাড়িয়ে একটি ন্যায্য অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব।