একটা পর্যায়ে শাহবাগ থেকে গণভবনের দিকে রওনা দিলাম। সবাই আমাদের রিকশা ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনের নিচে থাকা অবস্থায় ফোনে খবর পেলাম, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মুশফিকুল ফজল আনসারীর পরিচিত আশিক খবরটা দিলেন। বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করলাম। 

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ স্বপন ফোন করে যখন প্রশ্ন করলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনাদের মন্তব্য কী?’ তখন নিশ্চিত হলাম, শেখ হাসিনা সত্যিই পালিয়ে গেছেন। এরপর নানা জায়গা থেকে বন্যার মতো ফোন আসতে লাগল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করা হচ্ছিল। তারা বলল, সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বসতে চায়। আমাদেরও খোঁজা হচ্ছে। আমি বললাম, আমরা ক্যান্টনমেন্টে যাব না। দেশের ভাগ্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে নয়, নির্ধারিত হবে জনতার মঞ্চ থেকে। 

সংসদ ভবনে যাওয়ার পথে রিকশায় বসেই আমি আর নাহিদ ভাই ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম, ‘অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এর বাইরে কোনো সরকার মেনে নেওয়া হবে না। ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে করা হবে, পালানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। সন্ধ্যার মধ্যেই নিরপরাধ ব্যক্তি, রাজবন্দী ও গুমকৃত ব্যক্তিদের মুক্ত করা হবে। শুধু হাসিনা সরকারের পদত্যাগ নয়, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ করা হবে। চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। বার্তাপ্রেরক—আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’ 

আমাদের মিছিলের বড় অংশটা সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ঢুকল। আরেকটা অংশ গেল গণভবনের দিকে। খবর এল, মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েছে, গণভবন দখল হয়ে গেছে। সংসদ ভবন এলাকায় অনেক মানুষের মধ্যে পড়ে গেলাম। সংসদ ভবনের সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমি আর নাহিদ ভাই বক্তব্য দিলাম। পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ আমাদের বক্তব্য শুনল। 

সেখানে আমি, নাহিদ ভাই আর বাকের ছাড়া আরও ছিলেন আরিফুল ইসলাম আদীব ও তারিকুল ইসলাম। আমরা ভাবছিলাম, এরপর কী? জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নানা ধরনের কথা ছড়াচ্ছিল। মানুষ বিভ্রান্ত। সংসদ ভবনের সামনে থেকে আগুনের ধোঁয়া উঠছিল। বিধ্বস্ত অবস্থা। আকাশে কয়েকটা উড়ন্ত হেলিকপ্টার।

আরও পড়ুনযেভাবে কেটেছে আয়নাঘরে চার দিন২১ ঘণ্টা আগে

খবর পেলাম, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। সেখানে ক্ষমতা পালাবদলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে গিয়ে শুনলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক য ন টনম ন ট আম দ র ভবন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরার শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা, বোন ছিলেন রান্নাঘরে

মাগুরার সেই শিশুটিকে একাই ধর্ষণ করেছেন তার বোনের শ্বশুর। ৬ মার্চ সকালে তাঁর ছোট ছেলের (শিশুটির বোনের স্বামী) কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করেন তিনি। ধর্ষণের মামলায় দোষ স্বীকার করে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন মাগুরার সেই শিশুটির বোনের শ্বশুর। আদালত সূত্র ও পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

আরও পড়ুনবোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ০৮ মার্চ ২০২৫

গত শনিবার বিকেলে মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায় ওই আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণ মামলার প্রধান এই আসামি জবানবন্দিতে বলেন, ৬ মার্চ সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে তাঁর ছোট ছেলের কক্ষে শিশুটিকে একা শুয়ে থাকতে দেখে ঘরে ঢুকে পড়েন তিনি। শিশুটি চিৎকার করলে তার গলা চেপে ধরেন। শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তিনি ধর্ষণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ব্লেড দিয়ে শিশুটিকে ক্ষতবিক্ষত করেন। শিশুটিকে অচেতন ফেলে রেখে মাঠে কাজ করতে চলে যান। ঘটনার সময় বাড়ির অন্য সদস্যরা যে যাঁর কাজে বেরিয়েছিলেন। আর শিশুটির বোন বাড়ির এক কোণে রান্নাঘরে মুঠোফোনে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলেন।

ঘটনার কিছুক্ষণ পর শিশুটির বোন ঘরে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় প্রতিবেশী এক নারী ওই বাড়িতে আসেন। তাঁরা শিশুটিকে অচেতন দেখে তার মাথায় পানি ঢালেন। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে শিশুটির বোনের শাশুড়ি বাড়িতে এসে প্রথমে শিশুটিকে স্থানীয় এক কবিরাজের বাড়িতে নেন। সেখান থেকে নেওয়া হয় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে।

আরও পড়ুনবোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে শিশু ‘ধর্ষণের’ শিকার, ২৪ ঘণ্টা পরও জ্ঞান ফেরেনি ০৭ মার্চ ২০২৫

আজ রোববার দুপুরে মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা সদর থানায় সাংবাদিকদের বলেন, মামলার অন্যতম আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো গেল না১৩ মার্চ ২০২৫

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে মামলার বাদী শিশুটির মায়ের এজাহারের অমিল রয়েছে। বাদী বলেছিলেন, ঘটনা ঘটেছে রাতে। অবশ্য এজাহারে তিনি এ–ও উল্লেখ করেছিলেন, বিয়ের পর থেকে তাঁর বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন মেয়ের শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে।

১ মার্চ মাগুরার শিশুটি নিজ বাড়ি থেকে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি। সেদিন সন্ধ্যায় শিশুটির মরদেহ হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় নেওয়া হয়। প্রথম জানাজা শেষে উত্তেজিত জনতা শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগে মামলা করেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে প্রধান আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিন আসামির রিমান্ড চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরার সেই শিশুকে একাই ধর্ষণ করেছেন বোনের শ্বশুর
  • বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারের দায়িত্ব নিলেন জামায়াতের আমির
  • কী দেখে ৬০ বছর বয়সি আমিরের প্রেমে পড়েছেন, জানালেন গৌরী
  • দেশে আসলেন হামজা চৌধুরী
  • লিভারপুলকে হারিয়ে নিউক্যাসলের ৭০ বছরের আক্ষেপ ফুরাল 
  • সেদিন রানার জন্যই খেলেছিল বাংলাদেশ
  • ধর্ষণের দায় একাই নিচ্ছেন মাগুরার সেই শিশুর বোনের শ্বশুর
  • বরগুনার সেই পরিবারটির সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান, পাশে থাকার আশ্বাস
  • মাগুরার শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা, বোন ছিলেন রান্নাঘরে