যেভাবে গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
Published: 16th, March 2025 GMT
একটা পর্যায়ে শাহবাগ থেকে গণভবনের দিকে রওনা দিলাম। সবাই আমাদের রিকশা ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনের নিচে থাকা অবস্থায় ফোনে খবর পেলাম, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মুশফিকুল ফজল আনসারীর পরিচিত আশিক খবরটা দিলেন। বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করলাম।
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ স্বপন ফোন করে যখন প্রশ্ন করলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনাদের মন্তব্য কী?’ তখন নিশ্চিত হলাম, শেখ হাসিনা সত্যিই পালিয়ে গেছেন। এরপর নানা জায়গা থেকে বন্যার মতো ফোন আসতে লাগল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করা হচ্ছিল। তারা বলল, সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বসতে চায়। আমাদেরও খোঁজা হচ্ছে। আমি বললাম, আমরা ক্যান্টনমেন্টে যাব না। দেশের ভাগ্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে নয়, নির্ধারিত হবে জনতার মঞ্চ থেকে।
সংসদ ভবনে যাওয়ার পথে রিকশায় বসেই আমি আর নাহিদ ভাই ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম, ‘অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এর বাইরে কোনো সরকার মেনে নেওয়া হবে না। ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে করা হবে, পালানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। সন্ধ্যার মধ্যেই নিরপরাধ ব্যক্তি, রাজবন্দী ও গুমকৃত ব্যক্তিদের মুক্ত করা হবে। শুধু হাসিনা সরকারের পদত্যাগ নয়, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ করা হবে। চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। বার্তাপ্রেরক—আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’
আমাদের মিছিলের বড় অংশটা সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ঢুকল। আরেকটা অংশ গেল গণভবনের দিকে। খবর এল, মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েছে, গণভবন দখল হয়ে গেছে। সংসদ ভবন এলাকায় অনেক মানুষের মধ্যে পড়ে গেলাম। সংসদ ভবনের সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমি আর নাহিদ ভাই বক্তব্য দিলাম। পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ আমাদের বক্তব্য শুনল।
সেখানে আমি, নাহিদ ভাই আর বাকের ছাড়া আরও ছিলেন আরিফুল ইসলাম আদীব ও তারিকুল ইসলাম। আমরা ভাবছিলাম, এরপর কী? জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নানা ধরনের কথা ছড়াচ্ছিল। মানুষ বিভ্রান্ত। সংসদ ভবনের সামনে থেকে আগুনের ধোঁয়া উঠছিল। বিধ্বস্ত অবস্থা। আকাশে কয়েকটা উড়ন্ত হেলিকপ্টার।
আরও পড়ুনযেভাবে কেটেছে আয়নাঘরে চার দিন২১ ঘণ্টা আগেখবর পেলাম, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। সেখানে ক্ষমতা পালাবদলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে গিয়ে শুনলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ন টনম ন ট আম দ র ভবন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা, পরিবারের দাবি পূর্বশত্রুতা
বরিশাল নগরীতে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সুজন নামে স্থানীয় যুবক গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে মারা গেছেন।
শনিবার সন্ধ্যার পর নগরীর ধান গবেষণা রোড এলাকায় স্থানীয়রা তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী করা হলে রাত ৮টায় সে মারা যায়।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান গণধোলাইয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে যুবকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, পূর্বশত্রুতার জেরে সুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে শিশুটি একটি রান্নার পাত্র ফেরত দিতে প্রতিবেশী সুজনের ঘরে যান। ঘরে একা পেয়ে সুজন ওই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে সুজন পালিয়ে যান।
এরপর ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা থানায় সুজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। এদিকে স্থানীয়রা সুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে তাকে আটকে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সুজনকে গণধোলাই দিলে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুজনের মৃত্যু ঘটে।
সুজনের স্বজনেরা দাবি করেছেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে মিথ্যা অভিযোগে সুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মানিক সাহা বলেন, ‘‘নিহতের লাশ শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’’
ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘ভুক্তভোগী শিশুর বাবার করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায়ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কেউ আটক হননি বলেও জানান মিজানুর রহমান।
পলাশ//