বর্তমানে ওপিসি করতে আগের অর্থবছরে ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের বাধ্যবাধকতা আছে। নতুন আইনে আগের কিছুই জানতে চাইবে না সরকার।

উন্নত দেশগুলোতে এক ব্যক্তির কোম্পানির (ওপিসি) গঠন সাধারণ বিষয়। তবে বাংলাদেশে এ ধারণা নতুন।

পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন হলেই দেশে এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওয়ান পারসন কোম্পানি (ওপিসি) গঠন করা যাবে। বিদ্যমান কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ সংশোধন করে এমন ধারা যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। ওপিসি করতে গেলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের আগের অর্থবছরের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বাধ্যবাধকতাও বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর মানে ওপিসি করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের আগের কোনো কিছু আর সরকার জানতে চাইবে না।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) যৌথভাবে এমন সিদ্ধান্তে এসেছে। উন্নত দেশগুলোতে ওপিসির ধারণা থাকলেও বাংলাদেশে তা নতুন। কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে ২০২০ সালে ওপিসি গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য হিসেবে তখন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অধিকতর সহজীকরণের কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু চার পার হয়ে পাঁচ বছরে পড়লেও আশানুরূপ সাড়া পায়নি সরকার। সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ম শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করবে। এরপর খসড়া চূড়ান্ত করে তা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, আইনে ওপিসির বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৬০টি ওপিসি গঠিত হয়েছে।

বাণিজ্যসচিব মো.

মাহবুবুর রহমান এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবহিত নন। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে জানান, আইন সংশোধনের বিষয়টি কী পর্যায়ে আছে, তা খোঁজ নিয়ে তিনি বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নেবেন রোজার ঈদের পর।

আওয়ামী লীগ সরকার ওপিসির জন্য যখন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়, তখন পরিশোধিত মূলধন করার কথা বলা হয়েছিল ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা। এ–ও বলা হয়েছিল, ওপিসি গঠনের আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনদেন হতে হবে ২ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা, যা আইন পাসের সময় কমানো হয়। লেনদেন এর চেয়ে বেশি হলে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে যেকোনো ওপিসি প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।

এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের কাজ সহজ করতে আইন সংশোধনের সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন পাঁচ লাখ কেন, এক লাখ টাকা করা হলে, তা আরও ব্যবসাবান্ধব হবেতাসকিন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

তবে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ওপিসি গঠনে সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন ৫০ লাখের বদলে ২৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করে। আর সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন দুই কোটির পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা সুপারিশ করে। কোম্পানি গঠনে আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনেদন ২ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার বদলে করা হয় ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি ওপিসি হলে দেশে উদ্যোক্তা বাড়বে, ব্যাংকের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কও জোরদার হবে। কোম্পানি করতে গিয়ে অনেকে তাঁদের স্ত্রীদের পরিচালক বানান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্ত্রীদের কোনো ভূমিকাই নেই কোম্পানিতে। অথচ কোম্পানি যখন বিপদে পড়ে স্ত্রীদেরও দায় নিতে হয়। দরকার না থাকলেও যে কখনো কখনো ব্যবসায়ে অংশীদার নিতে হয়, ওপিসি গঠনে সেই পথে আর যেতে হবে না ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের কাজ সহজ করতে আইন সংশোধনের সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন পাঁচ লাখ কেন, এক লাখ টাকা করা হলে, তা আরও ব্যবসাবান্ধব হবে।’

আইন অনুযায়ী একজন প্রাকৃতিক সত্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি কেবল একটি ওপিসি গঠন করতে পারবেন। ওপিসির স্মারকে একজন মনোনীত ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকতে হবে, যিনি একমাত্র শেয়ারহোল্ডার মারা গেলে বা কোম্পানি পরিচালনায় অসমর্থ হলে ওই ওপিসির শেয়ারহোল্ডার হবেন। বলা হয়, কোম্পানি ব্যবস্থাপনার জন্য এতে ব্যবস্থাপক, কোম্পানিসচিব ও অন্য কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে। আরজেএসসির নিবন্ধককে জানিয়ে মনোনীত ব্যক্তি পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে আইনে।

কোম্পানির নামের শেষে OPC বা ওপিসি, PLC বা পিএলসি এবং Limited বা লিমিটেড লেখার নিয়ম রয়েছে। পিএলসি হচ্ছে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ, যা লিখতে হবে যেকোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে। আর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে লিখতে হবে লিমিটেড, ইংরেজিতে লেখার ক্ষেত্রে যার সংক্ষিপ্ত রূপ হবে LTD।

সরকারি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং বেসরকারি—সব কোম্পানির নামের শেষেই এত দিন ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ‘লিমিটেড’। এখন আর ঢালাওভাবে এ শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত সমিতি এবং ২৯ ধারা অনুযায়ী গ্যারান্টি দ্বারা সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ল ল নদ ন সরক র গঠন র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস–সংকটে সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ

গ্যাস–সংকটে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে যান্ত্রিক ত্রুটির (রিঅ্যাক্টরের সমস্যা) কারণে গত ৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ ছিল কারখানাটিতে। দেড় মাস পর আবারও কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ল।

উৎপাদন আবার বন্ধ হয়ে পড়ার বিষয়টি সিইউএফএলের উৎপাদন বিভাগের প্রধান উত্তম চৌধুরী প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আজ সকালে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’

পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস–সংকট ও যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।

সিইউএফএল সূত্র জানায়, গত দুই বছর কখনো যান্ত্রিক ত্রুটিতে, কখনো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল সিইউএফএল। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে শুধু পাঁচ দিন চালু ছিল এ কারখানা। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ার পর ১৩ অক্টোবর সিইউএফএল চালু হয়। এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দীর্ঘ সময় লাগে কারখানাটি চালু করতে। সর্বশেষ যাবতীয় স্টার্টআপ (কারখানা চালু প্রক্রিয়া) শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার সময় কারখানা চালু হয়।

১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কারখানা চালু হওয়ার সময় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি বার্ষিক ৩ লাখ ১০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার বাজেটের আকার কমছে
  • গত বছর ইলিশ আহরণ কমেছে ৪২ হাজার টন
  • সাফকো স্পিনিংয়ের কারখানা বন্ধের মেয়াদ বাড়ছে
  • ছোট হচ্ছে আগামী বাজেটের আকার
  • প্রকল্প বন্ধ, কাজও নেই দুর্ভোগে দরিদ্র শ্রমিকরা
  • আমদানি-রপ্তানি কমলেও রাজস্ব বেড়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা
  • বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন
  • গ্যাস–সংকটে সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ