পাঁচ লাখ টাকার মূলধনেই খোলা যাবে এক ব্যক্তির কোম্পানি
Published: 16th, March 2025 GMT
বর্তমানে ওপিসি করতে আগের অর্থবছরে ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের বাধ্যবাধকতা আছে। নতুন আইনে আগের কিছুই জানতে চাইবে না সরকার।
উন্নত দেশগুলোতে এক ব্যক্তির কোম্পানির (ওপিসি) গঠন সাধারণ বিষয়। তবে বাংলাদেশে এ ধারণা নতুন।
পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন হলেই দেশে এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওয়ান পারসন কোম্পানি (ওপিসি) গঠন করা যাবে। বিদ্যমান কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ সংশোধন করে এমন ধারা যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। ওপিসি করতে গেলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের আগের অর্থবছরের বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বাধ্যবাধকতাও বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর মানে ওপিসি করতে গেলে প্রতিষ্ঠানের আগের কোনো কিছু আর সরকার জানতে চাইবে না।
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) যৌথভাবে এমন সিদ্ধান্তে এসেছে। উন্নত দেশগুলোতে ওপিসির ধারণা থাকলেও বাংলাদেশে তা নতুন। কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে ২০২০ সালে ওপিসি গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য হিসেবে তখন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অধিকতর সহজীকরণের কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু চার পার হয়ে পাঁচ বছরে পড়লেও আশানুরূপ সাড়া পায়নি সরকার। সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ম শিথিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করবে। এরপর খসড়া চূড়ান্ত করে তা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, আইনে ওপিসির বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৬০টি ওপিসি গঠিত হয়েছে।
বাণিজ্যসচিব মো.
আওয়ামী লীগ সরকার ওপিসির জন্য যখন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়, তখন পরিশোধিত মূলধন করার কথা বলা হয়েছিল ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা। এ–ও বলা হয়েছিল, ওপিসি গঠনের আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনদেন হতে হবে ২ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা, যা আইন পাসের সময় কমানো হয়। লেনদেন এর চেয়ে বেশি হলে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে যেকোনো ওপিসি প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।
এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের কাজ সহজ করতে আইন সংশোধনের সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন পাঁচ লাখ কেন, এক লাখ টাকা করা হলে, তা আরও ব্যবসাবান্ধব হবেতাসকিন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বারতবে তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ওপিসি গঠনে সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন ৫০ লাখের বদলে ২৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করে। আর সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন দুই কোটির পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা সুপারিশ করে। কোম্পানি গঠনে আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনেদন ২ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার বদলে করা হয় ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি ওপিসি হলে দেশে উদ্যোক্তা বাড়বে, ব্যাংকের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কও জোরদার হবে। কোম্পানি করতে গিয়ে অনেকে তাঁদের স্ত্রীদের পরিচালক বানান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্ত্রীদের কোনো ভূমিকাই নেই কোম্পানিতে। অথচ কোম্পানি যখন বিপদে পড়ে স্ত্রীদেরও দায় নিতে হয়। দরকার না থাকলেও যে কখনো কখনো ব্যবসায়ে অংশীদার নিতে হয়, ওপিসি গঠনে সেই পথে আর যেতে হবে না ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনের কাজ সহজ করতে আইন সংশোধনের সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধন পাঁচ লাখ কেন, এক লাখ টাকা করা হলে, তা আরও ব্যবসাবান্ধব হবে।’
আইন অনুযায়ী একজন প্রাকৃতিক সত্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি কেবল একটি ওপিসি গঠন করতে পারবেন। ওপিসির স্মারকে একজন মনোনীত ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকতে হবে, যিনি একমাত্র শেয়ারহোল্ডার মারা গেলে বা কোম্পানি পরিচালনায় অসমর্থ হলে ওই ওপিসির শেয়ারহোল্ডার হবেন। বলা হয়, কোম্পানি ব্যবস্থাপনার জন্য এতে ব্যবস্থাপক, কোম্পানিসচিব ও অন্য কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে। আরজেএসসির নিবন্ধককে জানিয়ে মনোনীত ব্যক্তি পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে আইনে।
কোম্পানির নামের শেষে OPC বা ওপিসি, PLC বা পিএলসি এবং Limited বা লিমিটেড লেখার নিয়ম রয়েছে। পিএলসি হচ্ছে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ, যা লিখতে হবে যেকোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে। আর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে লিখতে হবে লিমিটেড, ইংরেজিতে লেখার ক্ষেত্রে যার সংক্ষিপ্ত রূপ হবে LTD।
সরকারি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং বেসরকারি—সব কোম্পানির নামের শেষেই এত দিন ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ‘লিমিটেড’। এখন আর ঢালাওভাবে এ শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত সমিতি এবং ২৯ ধারা অনুযায়ী গ্যারান্টি দ্বারা সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হয় ছ ল ল নদ ন সরক র গঠন র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা: সিগারেটের প্রতি শলাকার দাম সর্বনিম্ন ৯ টাকা করার দাবি
শিশু-কিশোর ও তরুণদের নাগালের বাইরে নিতে সিগারেটের প্রতি শলাকার দাম সর্বনিম্ন ৯ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তরুণ চিকিৎসকেরা। দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত তরুণ চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় অর্জিত হবে।
‘বাংলাদেশে তামাকপণ্যের ব্যবহার হ্রাসকরণে তরুণ চিকিৎসকদের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তাঁরা। আজ শনিবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিত্যপণ্যের তুলনায় বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা। ফলে শিশু-কিশোর ও তরুণরা সহজেই এই ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই তাদের নাগালের বাইরে নিতে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর কর ও মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে।
কর্মশালায় আরও বলা হয়, বর্তমানে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। তাই আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হলে শিশু-কিশোর ও তরুণরা ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। একই সঙ্গে প্রতি শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন দাম ১ টাকা করার দাবি জানানো হয়। এটি বাস্তবায়ন করা হলে, ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
কর্মশালায় সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মোতালিব বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে আমাদের তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তামাকপণ্যের ক্ষতি সম্পর্কে জোরালো প্রচারণা চালাতে হবে। শিশু-কিশোর ও তরুণদের হাতের নাগালের বাইরে নিতে তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান তিনি।
আজকের কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যয়নরত তরুণ চিকিৎসকেরা অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার কমাতে চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে রোগীদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকপণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর ও মূল্যবৃদ্ধি করার আহ্বান করেন।
এ সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরামর্শক নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর উপস্থিত ছিলেন।