বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায় ভুলে গেলে চলবে না
Published: 16th, March 2025 GMT
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বাংলাদেশের মাথাব্যথার বড় কারণ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যে সাহায্য–সহযোগিতা পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যায়নি। শুরুতে এর প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর যে আগ্রহ ছিল, ভূরাজনীতির কারণে তাতেও ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো দূরের কথা, কিছুদিন পরপর নতুন করে তাদের আগমন পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সমভিব্যাহারে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগদান তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মুখে ২০১৭ সালে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই তিন লাখের মতো শরণার্থী এখানে অবস্থান করছিল। ২০১৭ সালের পরও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্য ও আশ্রয় জোগাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে যে সহায়তা পাওয়া গেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সাম্প্রতিক কালে সেই সহায়তা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের এ অবস্থান যে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সংস্থাটির সহযোগিতা অব্যাহত থাকার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিও সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা রোহিঙ্গারা সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। প্রমিত বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় বললে অনেকেই বুঝতে পারতেন না। তিনি রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃত করে বলেছেন, তারা সবাই নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়, সেখানে তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ আছে।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়ই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। রোহিঙ্গারাও নিজ দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। প্রশ্ন হলো, মিয়ানমারে তাদের ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ আছে কি না কিংবা অদূর ভবিষ্যতে সেটা তৈরি হবে কি না। মিয়ানমারে এমন এক সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আছে, যারা বরাবর রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকারই করছে না। মিয়ানমার বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বানকে উপেক্ষা করে আসছে এবং মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করছে না। রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি রাখাইনের সিংহভাগ এলাকা আরাকান আর্মি দখল করে নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
আমরা আশা করব, জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের টনক নড়বে এবং তারা বৃহত্তর শরণার্থী সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। পশ্চিমা বিশ্ব শুরু থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মোটামুটি ইতিবাচক ভূমিকা নিলেও মিয়ানমারের দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের অবস্থান অনুকূল নয়। তারা মানবিক সমস্যার চেয়ে ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে আলোচনা করে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে আলোচনা হতে হবে বহুপক্ষীয়। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ মহাসচিবও উদ্যোগ নিতে পারেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েছে, তার প্রতিও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন কাম্য। তাদের উপলব্ধি করতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় বাংলাদেশ কেবল আর্থসামাজিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে না, ভূরাজনৈতিক সংকটও ঘনীভূত হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শরণ র থ অবস থ ন সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদুল ফিতরে ভূয়া তালিকা করে ভিজিএফ’র চাল আত্মসাত
দিনাজপুরের হাকিমপুরে উপজেলার খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপনের বিরুদ্ধে দুস্থদের ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর কয়েকজন ইউপি সদস্য জড়িত আছেন বলেও অভিযোগ। প্রায় ১৮০০ জনের নামে-বেনামে ভূয়া তালিকা করে ১৮ মেট্রিকটন চাল আত্মসাত করেন তারা। এমন কি মৃত ব্যক্তিরও নাম রয়েছে ওই তালিকায়।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, এই পবিত্র ঈদুল ফিতরে খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের ৪ হাজার ১৬৯ জনের ভিজিএফ চালের তালিকা করেন ওই প্যানেল চেয়ারম্যান। এ তালিকায় একজনের নাম একাধিকবার তোলেন। এক ওয়ার্ডের তালিকাভুক্তদের অন্য ওয়ার্ডের তালিকায়ও নাম ওঠান। এমনকি ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তিরও নাম রয়েছে। এভাবে চাল আত্মসাত প্রক্রিয়ায় প্যানেল চেয়ারম্যান স্বপনের সঙ্গে ৩ ইউপি সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহানুর রহমান, ৭নং ইউপি সদস্য আবুল কাশেম ও ৮নং ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
এ ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন বঞ্চিত সুবিধাভোগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইউনিয়নের মংলা বাজারের বাসিন্দা তাহাজ্জত আলী বলেন, “আমার প্রতিবেশী মৃত রবিউল ইসলামের নাম ভিজিএফ তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তিনি গত ৩ বছর আগে মারা গেছেন। এক বছর পূর্বে তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়েও হয়েছে। চেয়ারম্যান চাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ভিজিএফের তালিকায় এই মৃত ব্যক্তির নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।”
অভিযোগকারী মাধবপাড়া গ্রামের কাশেম আলীর স্ত্রী বেগম জানান, ভিজিএফএর তালিকায় তার নামের সিরিয়াল ২৩৭৬। অথচ কয়েকবার চেয়ারম্যানের নিকট ভিজিএফ চালের জন্য গেলে তার নাম তালিকায় নেই বলে ফিরিয়ে দেন।
তিনি জানান, শুধু তাকে নয় এরকম আরও অনেক মেয়ে মানুষকে চাল না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগকারী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, তার মাস্টার রোলের সিরিয়াল নম্বর ২১০। তালিকায় তার নাম নেই বলে তাকেও ওই দিন চাল না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা গরীব মানুষ ঈদের আগে ভিজিএফের চালের অপেক্ষায় থাকি। সেই চাল যদি চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলেন তাহলে তো গরীবের তো আর বাঁচার পথ নাই। সরকারের উচিত গরীবের চাল মেরে খাওয়া চেয়ারম্যানকে শাস্তি দেওয়া।”
লিখিত অভিযোগকারী সাইমুমুর রহমান ডলার জানান, ১নং ওয়ার্ডের ৮৬ জন , ২নং ওয়ার্ডের ৭৫ জন, ৩নং ওয়ার্ডের ৬৩ জন, ৪নং ওয়ার্ডের ৫৬ জন, ৫নং ওয়ার্ডের ১১১ জন, ৬নং ওয়ার্ডের ১৩১ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৯২ জন, ৮নং ওয়ার্ডের ১০৯ জন ও ৯নং ওয়ার্ডের ৮৩ জনের মোট ৮০৬ জনের নাম অন্য ওয়ার্ডের মাস্টার সিরিয়ালে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা এসব নামের বিপরীতে বরদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করেছেন।
এ ব্যাপারে প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, “ভিজিএফ এর চাল বিতরণে সময় ট্যাগ অফিসারসহ সব ওয়ার্ডের মেম্বাররা উপস্থিত ছিলেন। আমি সব চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেছি।”
এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত রায় বলেন, “খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। পিআইওকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/মোসলেম/টিপু