বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন ধোয়ার জন্য ৩৮ কোটি টাকায় দুটি স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ ব্যবস্থা বা ওয়াশিং প্ল্যান্ট কিনেছিল। একটি স্থাপন করা হয় ঢাকার কমলাপুরে, অন্যটি রাজশাহীতে। ২০ মাসের মাথায় প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ হয়ে যায়।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দুটি প্ল্যান্ট দিয়ে ২ হাজার ৯২৯ বার ট্রেন ধোয়া সম্ভব হয়েছিল। হিসাব করে দেখা যায়, প্ল্যান্ট দুটি স্থাপনে যে ব্যয় হয়েছে, তাতে প্রতিটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রচলিত ব্যবস্থায় হাতে ট্রেন ধুতে খরচ হয় ১ হাজার টাকার মতো।

ওয়াশিং প্ল্যান্ট নামে যে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, তাতে মূলত কিছু স্বয়ংক্রিয় ব্রাশ, সাবানপানি ও সাধারণ পানি ছিটানোর ব্যবস্থা এবং কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাখা ছিল। সাধারণ এই ব্যবস্থা তৈরিতে এত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তখনই। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক দিন ধরে প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ। সেগুলো পুনরায় চালু করতে আরও বিনিয়োগ দরকার, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

প্ল্যান্ট দুটি চালানো হতো বিদ্যুতের সাহায্যে। ট্রেন ধোয়ার কাজে পানি ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হতো। এর পরিচালনায় থাকা লোকবলসহ সব খরচ ধরলে প্রতিটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। রেলওয়ে সব সময় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে ট্রেন ধোয়ার কাজ করে থাকে। শ্রমিক, পানির ব্যবহারসহ সামগ্রিকভাবে একটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে এক হাজার টাকাও খরচ হয় না। অন্যদিকে ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি কেনা হয়েছিল কোচ কেনার একটি প্রকল্পের আওতায়। রেলের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার মত, শুধু প্রকল্প বড় করার জন্যই এই যন্ত্র কেনা হয়েছিল। রেলের কিছু কর্মকর্তা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আগ্রহে যন্ত্র দুটি কেনা হয়।

চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী দুই মেয়াদে রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওয়াশিং প্ল্যান্ট সরবরাহে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধির পক্ষে ফজলে করিম কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফজলে করিম চৌধুরী এখন কারাগারে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই বিদেশি ঋণ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রেলের বার্ষিক লোকসান ছিল ৬৯১ কোটি টাকা। এরপরই নতুন রেললাইন নির্মাণসহ নানা প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে সরকার। বাড়ানো হয় ভাড়া। এরপরও বাড়তে থাকে লোকসান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। লোকসান ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক টাকা আয় করতে রেল দুই টাকার মতো ব্যয় করছে।

রেলের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার মত, শুধু প্রকল্প বড় করার জন্যই এই যন্ত্র কেনা হয়েছিল। রেলের কিছু কর্মকর্তা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আগ্রহে যন্ত্র দুটি কেনা হয়।ওয়াশিং প্ল্যান্ট দেখতে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ

ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটির যন্ত্রপাতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছিল। এই যন্ত্রের কার্যকারিতা দেখতে ২০১৯ সালে তিনজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এর মধ্যে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি রোলিং স্টক) সৈয়দ ফারুক আহমেদ যন্ত্র কেনার কিছুদিন পরই অবসরে যান। প্রকল্প পরিচালক ফকির মো.

মহিউদ্দিন এখনো রেলে কর্মরত। তিনি এখন ২০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ও ১৫০টি মিটারগেজ কোচ কেনার প্রকল্পের পরিচালক। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফকির মো. মহিউদ্দিন রেলওয়েতে বৈষম্যবিরোধী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করে এর মুখ্য সমন্বয়ক হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা আরেকজন হচ্ছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মাহাবুবুল হক।

রেলওয়েতে রক্ষিত দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট পরিচালনা–সংক্রান্ত তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের নভেম্বরে ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো ঘটা করে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ঢাকার প্ল্যান্টটি ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত মোটামুটি চালু ছিল। এরপরই সমস্যা শুরু হয়। গত বছর মে মাসে মাত্র দুটি ট্রেন ধোয়া হয়। এরপর এর কোনো ব্যবহার হচ্ছে না।

ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটির যন্ত্রপাতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছিল। এই যন্ত্রের কার্যকারিতা দেখতে ২০১৯ সালে তিনজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এর মধ্যে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি রোলিং স্টক) সৈয়দ ফারুক আহমেদ যন্ত্র কেনার কিছুদিন পরই অবসরে যান। প্রকল্প পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দিন এখনো রেলে কর্মরত। তিনি এখন ২০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ও ১৫০টি মিটারগেজ কোচ কেনার প্রকল্পের পরিচালক। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।

রাজশাহীর প্ল্যান্টটি গত বছর এপ্রিল পর্যন্ত চালু ছিল। এ সময় মাসে গড়ে ৮টি ট্রেন ধোয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকার প্ল্যান্টটিতে ২ হাজার ৬৮৯টি এবং রাজশাহীর প্ল্যান্টে ২৪০টি ট্রেন ধোয়া হয়। দুই প্ল্যান্টে ধোয়া কোচের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৯৬২টি। অর্থাৎ প্রতিটি কোচ বা কামরা ধোয়ার পেছনে গড়ে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ১২৪ টাকা।

কমলাপুরে গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, ওয়াশিং প্ল্যান্টটিতে ধুলা পড়ে গেছে। ওয়াশিং প্ল্যান্টে প্রবেশের মুখে অন্য ট্রেন রেখে দেওয়া হয়েছে। এখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড হয় না। পাশের সারি সারি লাইনে পুরোনো পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে দেখা গেছে।

ট্রেন ধোয়ার কাজে যুক্ত একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যত দিন ওয়াশিং প্ল্যান্ট চালু ছিল, সেখানে ট্রেন ধোয়ার পর পুনরায় শ্রমিকদের পরিষ্কার করতে হতো। কারণ, ওয়াশিং প্ল্যান্টে ট্রেনের ভেতরে পরিষ্কার করা হতো না। শুধু বাইরের অংশ ধোয়া হতো। যন্ত্র দিয়ে ট্রেন ধোয়ার পরে পানের পিক, চুইংগামসহ কোচের গায়ে লেগে থাকা অন্যান্য দাগ ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হতো। ট্রেনের ভেতর ও শৌচাগারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে হয় পুরোনো পদ্ধতিতেই।

কমলাপুরে গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, ওয়াশিং প্ল্যান্টটিতে ধুলা পড়ে গেছে। ওয়াশিং প্ল্যান্টে প্রবেশের মুখে অন্য ট্রেন রেখে দেওয়া হয়েছে। এখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড হয় না। পাশের সারি সারি লাইনে পুরোনো পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে দেখা গেছে।অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা

রেলওয়ের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ এবং দুটি স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ–ব্যবস্থা কিনতে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে কোচ কেনা হয়। ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের এনএস করপোরেশন থেকে।

বাংলাদেশে সহযোগী ঠিকাদার নেক্সট জেনারেশন গ্রাফিকস লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই নেক্সট জেনারেশনের পেছনে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফজলে করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে।

সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে কেনা ডেমু ট্রেন কাজে লাগল না। এরপরও এ ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে রেলের কর্মকর্তাদের কেন হুঁশ হলো না? যাঁরা বিদেশে ভ্রমণ করে যন্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তাঁদের এখন জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার জন্য শুরুতে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল প্রায় ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। পরে ব্যয় বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা হারুনুর রশিদ জানিয়ে দেন এই কেনাকাটায় বাড়তি খরচ (ভ্যারিয়েশন) সম্ভব নয়। পরে ফকির মো. মহিউদ্দিন প্রকল্প পরিচালক হয়ে ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বাড়তি ব্যয় যোগ করেন। সব মিলিয়ে দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা ও স্থাপনে ব্যয় হয় ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

ফকির মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তখন রেলের প্রয়োজনেই ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয়েছিল। এখন নতুন কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করলে আবারও চালু করা যাবে। এর জন্য আরও কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, তাদের সব বড় প্রকল্পে কিছু যন্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়, যা তেমন প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালীদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই এসব কেনাকাটা করা হয়। যেমন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চারটি ‘ট্যাম্পিং মেশিন’ (লাইন মেরামতে ব্যবহৃত) কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রের প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এখন মোটামুটি সব কটিই বিকল।

গালগল্প শুনিয়ে কেনা হয়

স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার সময় বলা হয়েছিল, সনাতন পদ্ধতিতে ট্রেন ধোয়ার কাজে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়, এর চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কম পানি লাগবে। তা ছাড়া একবার ব্যবহৃত পানি শোধন করে আবার কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কখনোই ছিল না।

রেলে আন্তনগর ট্রেনের কোচ হাজারখানেক। এগুলো দিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শতাধিক ট্রেন নানা গন্তব্যে চলাচল করে। এর বাইরে আছে মেইল, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন। এর মধ্যে আন্তনগর ট্রেনই প্রতিনিয়ত ধোয়া হয়। কাজটি করা হয় যাত্রা শুরুর স্টেশনে।

রেলের কোচ ধোয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের তথ্যমতে, গড়ে ১০ জনের একটা দল দিনে চারটি ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে পারেন। তাঁদের একেকজনের মাসিক বেতন ৮ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। সব মিলিয়ে কমলাপুরে ৭০ জনের মতো কর্মী কাজ করেন। তাঁদের পেছনে বছরে ব্যয় ১ কোটি টাকার কম। একেকটি স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্টের পেছনে ১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে যন্ত্র কেনার সমপরিমাণ টাকা দিয়ে সনাতন ব্যবস্থায় প্রায় ১৮ বছর শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব।

স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার সময় বলা হয়েছিল, সনাতন পদ্ধতিতে ট্রেন ধোয়ার কাজে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়, এর চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কম পানি লাগবে। তা ছাড়া একবার ব্যবহৃত পানি শোধন করে আবার কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কখনোই ছিল না।

পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে কেনা ডেমু ট্রেন কাজে লাগল না। এরপরও এ ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে রেলের কর্মকর্তাদের কেন হুঁশ হলো না? যাঁরা বিদেশে ভ্রমণ করে যন্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তাঁদের এখন জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের ছেড়ে দিলে পরিবর্তন আসবে না।

সামছুল হক বলেন, রাজনীতিকেরা বিগত সরকারের আমলে নানা ভাগ-বাঁটোয়ারার প্রকল্প নিয়েছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা কেন সহযোগী হলেন? এর জবাব চাইতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট র ন ধ য় র ক জ কর ল গ সরক র র কর মকর ত র কর ম চ ধ র প রকল প র র ক জ করত র প রকল প পর ষ ক র ম ট রগ জ ব যবস থ র আওত য় কমল প র র পর চ র জন য হয় ছ ল ব যবহ র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ, স্বজন ও এলাকাবাসীর হাসপাতাল ভাঙচুর

কুমিল্লা নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই তরুণের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের নিচতলায় ভাঙচুর করেছেন।

গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় ‘কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার’ নামের বেসরকারি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা ইমরান হোসেন (২১) নামের এক তরুণকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, রোগীর চিকিৎসায় তাদের কোনো অবহেলা বা ভুল ছিল না।

মৃত ইমরান হোসেন কুমিল্লা নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার দুবাইপ্রবাসী হুমায়ুন মিয়ার ছেলে। হুমায়ুন মিয়ার তিন ছেলের মধ্যে ইমরান সবার বড়। দরজির কাজ শিখে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইমরান।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও রোগীর স্বজনেরা। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির দুটি ভবনের বেশির ভাগ অংশের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে সরে পড়েন বেশির ভাগ চিকিৎসক ও কর্মীরা। ১৪ তলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের নিচতলায় ভাঙচুর করা চেয়ারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পড়ে রয়েছে। প্রথমে পুলিশ এবং পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আতঙ্কে হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকে নিয়ে যান স্বজনেরা।

ঘটনাস্থলে থাকা ইমরান হোসেনের চাচা জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি ইমরান হোসেনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দেয়। গত বুধবার তাঁকে ট্রমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ইমরানের অস্ত্রোপচার করা হয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে চিকিৎসক বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার বলেন, রোগীর অবস্থার অবনতি হয়েছে, তাঁকে আইসিইউতে নিতে হবে। এই বলে ইমরানকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আমরা বারবার চেষ্টা করলেও আমাদের খুব বেশি রোগীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হতো না। সর্বশেষ রোববার বিকেলে অনেক কষ্টে আমি আইসিইউতে গিয়ে দেখি—রোগীর কোনো সাড়াশব্দ নেই। তখনই আমার মনে হয়েছে, ইমরান আর বেঁচে নেই। এরপর আমরা চিৎকার করলে সেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা বলেন, রোগীকে লাইফ সাপোর্টে নিতে হবে। এরপর তাঁরা লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যান। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি।’

জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘ভাতিজার চিকিৎসার পেছনে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছিল, অপারেশন খরচ ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। যখন ভর্তি করি, তখন বলেছিল, ঢাকা থেকে বড় সার্জন এসে অপারেশন করবে, কিন্তু তারা কুমিল্লা ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করিয়েছে। তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’

গতকাল রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ সফিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগীর বড় ধরনের সমস্যা ছিল। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে বাঁচানোর জন্য। এখানে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা নেই। ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ