রোবটের জন্য নতুন এআই মডেল আনল গুগল
Published: 16th, March 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে আরও উন্নত ও বাস্তবসম্মত করতে নতুন দুটি এআই মডেল উন্মোচন করেছে গুগল। জেমিনি রোবোটিকস ও জেমিনি রোবোটিকস ইআর নামের এই মডেল দুটি রোবটকে মানুষের মতো চিন্তাভাবনা, পরিবেশ বোঝার সক্ষমতা এবং শারীরিক কাজ সম্পাদনের দক্ষতা দেবে। গুগল ২০২৩ সালে জেমিনি নামের প্রথম এআই মডেল উন্মোচন করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত এই প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণসহ নানা ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনের পর এবার জেমিনি মডেলকে রোবোটিকসের সঙ্গে যুক্ত করল গুগল।
প্রতিষ্ঠানটির এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কার্যকর ও সহায়ক করতে হলে এটিকে ‘অবডাইড’ বা শারীরিক বাস্তবতায় যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। অর্থাৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাস্তব পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝতে হবে, নিরাপদ উপায়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং মানুষের মতো শারীরিকভাবে সাড়া দিতে হবে।
গুগলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জেমিনি রোবোটিকস হলো একটি অ্যাডভান্সড ভিশন ল্যাংগুয়েজ অ্যাকশন (ভিএলএ) মডেল। এটি জেমিনি ২.
জেমিনি রোবোটিকস মানুষের ভাষা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর নির্দেশনার ভিত্তিতে নিজস্ব কর্মপদ্ধতির সামঞ্জস্য করতে পারে। এটি আশপাশের পরিবর্তন বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী নিজের কার্যক্রম নির্ধারণ করতে পারে। ‘নিয়ন্ত্রণযোগ্যতা’ বা স্টিয়ারেবিলিটির উচ্চ মাত্রা রোবটকে মানুষের সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে, যা গৃহস্থালি থেকে অফিসসহ বিভিন্ন পরিবেশে রোবোটিক সহকারীদের সক্ষমতা বাড়াবে।
জেমিনি রোবোটিকসের পাশাপাশি গুগল উন্মোচন করেছে জেমিনি রোবোটিকস ইআর। এটি রোবট–গবেষকদের বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার সঙ্গে সহজে একীভূত করার সুযোগ দেবে। জেমিনি রোবোটিকস ইআর জেমিনি ২.০-এর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এটি স্থানিক বিশ্লেষণ ও প্রোগ্রামিং দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে রোবটের জন্য নতুন কর্মপদ্ধতি তৈরি করতে পারে।
যেমন যদি রোবটকে একটি কফির মগ দেখানো হয়, তবে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝতে পারবে, কীভাবে দুটি আঙুল দিয়ে মগের হাতল ধরতে হবে এবং সেটি ধরার জন্য নিরাপদ পথ নির্ধারণ করতে হবে।
জেমিনি রোবোটিকস ইআর রোবট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি ধাপ—পারসেপশন, স্টেট এস্টিমেশন, স্পাশিয়ল অ্যান্ডারস্ট্যান্ডিং, প্ল্যানিং ও কোড জেনারেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেট্রোরেল কর্মীদের কর্মবিরতি, ভাড়া আদায় ব্যবস্থা অকার্যকর
এমআরটি পুলিশ সদস্য দ্বারা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মী মৌখিকভাবে ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছে মেট্রোরেল কর্মীরা। ফলে আজ সোমবার সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচলে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাত্রীদের ভাড়া আদায় করার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে আছে।
মেট্রোরেলে ফার্মগেট স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারওয়ান বাজারে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী তাপসী রায়। তিনি বলেন, ফার্মগেটে ঢোকার সময় কার্ড পাঞ্চ করার পর তিনি যেতে পেরেছেন। তবে কারওয়ান বাজারে নেমে পাঞ্চ মেশিন তিনি অচল দেখেন। পাঞ্চ না করেই চলে আসতে পেরেছেন। এ সময় সেখানে থাকা কয়েকজন তাঁকে চলে যেতে বলেন। পরে জরিমানা করা হবে কি না জানতে চাইলে তাঁরা বলেন আজকে কিছু করা হবে না। টিকিটের কাউন্টারগুলোও বন্ধ দেখেছেন তিনি। ফলে যাদের এমআরটি ও র্যাপিড পাস আছে শুধু তারাই যাতায়াত করতে পারছেন। কেউ টিকিট কাটতে পারছেন না।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে মেট্রোরেল চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। চলাচল স্বাভাবিক আছে । তবে কোথাও কোথাও কোথাও রাজস্ব আয়ে সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ স্টেশনে স্টেশনে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সুরাহা হয়ে যাবে।
রাতে 'ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ‘সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ' ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনা তুলে ধরে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
মেট্রোরেল কর্মীদের দাবিগুলো হচ্ছে, আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ওই পুলিশ সদস্যকে (এসআই মাসুদ) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে ও ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মেট্রোরেল, মেট্রো স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে, এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, স্টেশনে দায়িত্বরত সিআরএ টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ অন্য সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অফিশিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আহত কর্মীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মেট্রোরেলের সব কর্মী কর্মবিরতি পালন করব এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং মেট্রো স্টেশনে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়, ‘আনুমানিক বিকেল সোয়া ৫টায় দুজন নারী কোনো পরিচয়পত্র না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে এসে ইএফও অফিসের পাশে থাকা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। যেহেতু তারা নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিহিত ছিলেন না ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআরএ নিয়ম অনুযায়ী তাদের সেখান থেকে পিজি গেট ব্যতীত সুইং গেট দিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। তবে, সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা এতে উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।'
'পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে দুজন এপিবিএন সদস্য সুইং গেট ব্যবহার করে সুইং গেট না লাগিয়ে চলে যান, উক্ত বিষয়ের কারণ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা পূর্বের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে দায়িত্বে থাকা সিআরএ এর সঙ্গে ইএফও'তে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ইএফও থেকে বের হওয়ার সময় কর্মরত সিআরএ এর কাঁধে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে এবং কর্মরত আরেকজন টিএমও এর শার্টের কলার ধরে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং গুলি করার জন্য বন্দুক তাক করে। উপস্থিত স্টেশন স্টাফ ও যাত্রীগণ বিষয়টি অনুধাবন করে উক্ত এমআরটি পুলিশ এর হাত থেকে কর্মরত টিএমওকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।’